যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কার

25

ক্যাসিনো বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়া যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিসকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের এক জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দীপু জানিয়েছেন।
তিন ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কাজী আনিসের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রেসিডিয়াম সদস্যরা একমত হয়েছেন কাজী আনিসকে বহিষ্কার করার জন্য। সেই আলোকে কাজী আনিসকে আমরা বহিষ্কার করেছি। ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না- সে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান দীপু।
কি কারণে আনিসকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানতে চাইলে যুবলীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘কাজী আনিস বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক। দুর্নীতির কথা আমরা পত্র পত্রিকায় দেখেছি এবং অর্থনৈতিক তসরুফের কারণে তাকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে’।
যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন আদায় এবং সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। গত পনের দিন ধরে কাজী আনিস আত্মগোপনে আছেন। তিনি দলীয় কার্যালয়ে যাচ্ছেন না, বাড়িতেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর বিডিনিউজের
যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরদার মোহাম্মদ আলী মিন্টু বলেন, ‘আনিস যুবলীগের কমিটি বিক্রি করে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন নিয়ে অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমাণে সম্পদ বানিয়েছে। এর ভয়ে এখন সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে’। মিন্টু জানান, যুবলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ২০০৫ কাজ শুরু করেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছেলে আনিস। ৭ বছর পর কর্মচারী থেকে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক পদে বসেন। এখন তিনি একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। কম্পিউটারে নিয়মিত সারা দেশের যুবলীগ কমিটির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সব তথ্য তার মুখস্ত। এ কারণে চেয়ারম্যানের (যুবলীগ প্রধান) ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় সে। ২০১২ সালে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের সময় আনিসকে উপ-দপ্তর সম্পাদক করা হয়। দপ্তর সম্পাদক পদটি খালি থাকায় ছয় মাসের মধ্যে সে ওই পদ পেয়ে যায়’।
দুর্নীতির অভিযোগ ও সংগঠন থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আনিসুর রহমানের বক্তব্য জানা যায়নি।
যুবলীগের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়াম সদস্যদের গতকাল শুক্রবারের এই সভায় উপস্থিত হননি সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। তবে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তেই এ বৈঠক হয়েছে বলে দাবি করেন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মধ্যে শহিদ সেরনিয়াবাত, শেখ শামসুল আবেদীন, আলতাব হোসেন বাচ্চু, মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরন, আবদুস সাত্তার মাসুদ, মো. আতাউর রহমান, অ্যাড. বেলাল হোসাইন, আবুল বাশার, মোহাম্মদ আলী খোকন, অধ্যাপক এবি এম আমজাদ হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিখিল গুহ, শাহজাহান ভূঁইয়া মাখন, ডা. মোখলেছুজ্জামান হিরু, শেখ আতিয়ার রহমান দীপু বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ।
বৈঠক শেষ দীপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভা ডাকার অনুমতি চেয়ারম্যান দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের নির্দেশই এই সভা হয়েছে। তবে তিনি কেন আসেননি সে বিষয়টি জানা নেই। হয়তো অসুস্থতার কারণে’।
যুবলীগের আসন্ন সম্মেলনে সভাপতিত্ব কে করবেন জানতে চাইলে অধ্যাপক এ বি এম আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এর দায় দায়িত্ব সম্পূর্ণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। উনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আজ সাধারণ সম্পাদক সভাপতিত্ব করেছেন। চেয়ারম্যান একটি বড় পোস্ট, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তাই করব’।