যুবলীগকর্মীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

62

আকবর শাহ থানাধীন বিশ্ব কলোনি এলাকায় এক যুবলীগকর্মীর উপর দলবেঁধে নির্যাতন চালানো হয়েছে। এ যুবলীগ কর্মীর নাম মো. মহসীন (২৬)। এ নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে এ ধরনের নির্যাতনে নগড়জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত রবিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ হামলায় জড়িত একজনসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করলেও ঘটনার মূলহোতারা এখনো অধরা রয়ে গেছে। মহসিনের বাসা বিশ্ব কলোনির এন-বøকে। বাসার কাছেই সে হামলার শিকার হন। গুরুতর আহত মহসিনকে রবিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়,রাস্তার গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা মহসিনকে অতর্কিত এসে মারধর শুরু করে ১২-১৫ জনের একটি দল। মহসিন তাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে চারপাশ থেকে ঘিরে রড ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে তারা। পরে মারা গেছে ভেবে মহসিনকে ফেলে রেখে যায়।
দেখা গেছে, লাঠি-সোটা নিয়ে এগিয়ে আসা হামলাকারীদের দেখে প্রথমে পিছিয়ে গিয়ে পালানোর চেষ্টা করে যুবকটি। অনেকটা গ্রামের ঝোপঝাঁড়ে মানুষের লাঠির আঘাত থেকে লুকিয়ে যেভাবে বাঁচার চেষ্টা করে, সেভাবেই চেষ্টা করেন তিনি। যুবকটি দৌড়ে যাওয়ার সময় একটি দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যান। তখন হামলাকারীরা এসে একজন তার এক পা ধরে রাখে। মাটিতে শোয়া যুবকটিকে তখন আরও ৫ জন লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। যেন লোকালয়ে ঢুকে পড়া কোন সাপকে পেটাচ্ছে! মাত্র দেড় মিনিটের মধ্যে যুবকটিকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা বীরদর্পে চলে যায়।
আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়েছি। সেখানে সব কিছু পরিস্কার আছে। কারা জড়িত তাও দেখা গেছে। হামলাকারী মোট ৮ জনকে আমরা শনাক্ত করা হয়েছে। এদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ছিল। একজন আক্রান্ত যুবকটির পা ধরে রেখেছিল। বাকি পাঁচজন ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্পের মতো লাঠি দিয়ে তাকে পেটাচ্ছিল। ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত হওয়া একজন হামলাকারীকে আমরা রাতে গ্রেপ্তার করেছি।
পুলিশ জানায়, মহসিন গত একমাস জেল খেটে গত বৃহস্পতিবার জেল থেকে বের হন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ-পদবি না থাকলেও মহসিন নিজেকে যুবলীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। নগরীর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহŸায়ক সরওয়ার মোর্শেদ কচি’র বলয়ে থাকা মহসিনের বিরুদ্ধে মারামারি-হামলার একাধিক অভিযোগ আছে। হামলার পর কচি’র অনুসারীরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসীমের অনুসারীরা এই হামলা করেছে।
এদিকে হামলার ভিডিও ফুটেজ দেখে আটক করা হয়েছে মো. সাজু (২৪) নামে এক যুবককে। তাকে লাঠি হাতে হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন ওসি। সাজু’র বাড়ি দিনাজপুর জেলায়, থাকে নগরীর আকবর শাহ থানার নন্দন গেট এলাকায়। এছাড়া সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের আটক করা হয়েছে তারা হলো- মাসুদ (১৮), মিরাজ (১৭), বেলাল (২০) ও তারেক (১৮)।
ওসি মো. জসিম উদ্দিন জানান, হামলাকারীদের মধ্যে জুয়েল, তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, ফারহান ও খোকন নামে ছয়জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জুয়েল আক্রান্ত মহসিনের পা ধরে রাখে। তুহিন, রাব্বী, পারভেজ, সাজু ও ফারহান তাকে লাঠি দিয়ে পেটায়। আর খোকন তাদের সঙ্গে ছিল।
তিনি বলেন, কেন তার উপর হামলা করা হয়েছে তা আমরা এখনো জানতে পারিনি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। গ্রেপ্তার হওয়া সাজুকে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানতে পারব। হামলাকারী অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, আধিপত্য বিস্তার ঘিরে এ হামলা হয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার মোর্শেদ কচির সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। তারাই এতে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।