যুক্তরাষ্ট্র আত্মসমর্পণের দলিল বানাচ্ছে : ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী

35

যুক্তরাষ্ট্র শান্তি পরিকল্পনা নয় বরং আত্মসমর্পণের দলিল বানাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি। জাতিসংঘের এক বৈঠকে তিনি বলেন, কত টাকা দেওয়া হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিরা কখনোই মেনে নেবে না। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার বিষয়ে ফিলিস্তিনিদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রিয়াদ আল মালিকি এই মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। মঙ্গলবার ইসরায়েলের একটি সরকারপন্থী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্বাক্ষরিত শান্তি পরিকল্পনা। ইসরায়েল ঘেঁষা শান্তি পরিকল্পনা রমজানের পর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে। দুই দেশের পক্ষ থেকে এর নাম দেওয়া হয়েছে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি বা শতাব্দীর সেরা চুক্তি।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে এই চুক্তির বিষয়ে ফিলিস্তিনের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন রিয়াদ আল মালিকি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক শান্তি আলোচক জ্যাসন গ্রিনব্যালাটের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, এটা শান্তি পরিকল্পনা নয় বরং আত্মসমর্পনের শর্ত। আর কোনও পরিমাণ অর্থ দিয়েই এটাকে গ্রহণযোগ্য করা যাবে না। তিনি বলেন, কেউ কেউ আমাদের প্রশ্ন করেন কোন বিষয়টি আপনাদের বিস্মিত করেছে আমরা তাদের বলি, আমরা আরও বেশি আশাবাদী ছিলাম যে তারা আমাদের আবেদন শুনবে, ইসরায়েলি লঙ্ঘনের বিষয়ে নিশ্চুপ আর অন্ধ হয়ে না থেকে খুব বেশি হলে তারা শান্তির মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। গত বছর ট্রাম্প প্রশাসন জেরুজালেমকে ইসরায়েলের অবিচ্ছিন্ন রাজধানী স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একক শান্তি আলোচনায় অংশ না নেওয়ার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার মালিকি বলেন, শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণার আগে যখন যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে তথাকথিক ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিল আর আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ প্রস্তাব লঙ্ঘন করে সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার দাবি করলো আর বলে দিলো এটা শান্তি পরিকল্পনায় কোনও ব্যাঘাত ঘটাবে না তখন তাদের এই ধরণের উদ্যোগে ভরসা রাখা সম্ভব না।

প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ইসরায়েল-ঘেঁষা। তবে ওবামা প্রশাসন পর্যন্ত তারা দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান প্রক্রিয়ার পক্ষে ছিল। বিগত মার্কিন প্রশাসনগুলো চাইতো, দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই অবস্থান ছিল তাদের। তবে ট্রাম্প সমগ্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী স্বীকৃতি দিয়ে সেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেন। নির্বাচনি প্রচারণার সময় থেকেই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির সমালোচনা করে আসা ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরপরই নতুন শান্তি প্রস্তাব তৈরির কথা জানান।