যুক্তরাজ্যে লরিতে পাওয়া ৩৯ লাশ চীনা নাগরিকদের

11

যুক্তরাজ্যের এসেক্সে একটি লরির শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেইলারের ভেতর পাওয়া ৩৯টি মৃতদেহ চীনা নাগরিকদের বলে ধারণা প্রকাশ করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে লাশগুলোর ৮ টি নারীর আর ৩১ টি পুরুষের। সবগুলো লাশই চীনা নাগরিকদের বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
এর আগে ব্রিটিশ আইটিভি নিউজ লাশগুলো চীনা নাগরিকদের বলে জানিয়েছিল। পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর আয়ারল্যান্ডে তল্লাশি এখনো চলছে এবং লরির চালককেও এখনো জেরা করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের
খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে লরিটির ২৫ বছর বয়সী চালক মো. রবিনসনকে গ্রেপ্তার করে এসেক্স পুলিশ। রবিনসন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের আর্মাগ কাউন্টির পোর্টাডাউনের বাসিন্দা।
ট্রেইলারটি বেলজিয়ামের জিব্রুগা বন্দর থেকে বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১২টার দিকে টেমস নদীর পারফ্লিট নদীবন্দরে আসে। রাত ১টা পাঁচ মিনিটের একটু পরে লরি ও ট্রেইলারটি পারফ্লিটের বন্দর ত্যাগ করে।
এরপর রাত ১টা ৩০ মিনিটের দিকে অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা নিকটবর্তী গ্রেইস শহরের ওয়াটারপ্লেইড শিল্প পার্ক এলাকায় ট্রেইলারটির ভিতরে মৃতদেহগুলো পান বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এসেক্স পুলিশের উপপ্রধান কনস্টেবল পিপা মিলস জানিয়েছেন, লরিটিকে পরে টিলবুরি ডকসের একটি সুরক্ষিত স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মৃতদেহগুলো মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষণ ও উদ্ধার করার জন্য এমনটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওদিকে গ্রেপ্তার রবিনসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্মাগ কাউন্টির মার্কেটহিল ও কাছাকাছি লরেলভেলে তল্লাশি চালিয়েছে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের পুলিশ।
পুলিশ বলছে, লরিটির সামনের ট্রাক্টর ইউনিটটি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড থেকে এসে পারফ্লিট থেকে ট্রেইলারটিকে তুলে নেয়। এর আধা ঘণ্টা পরেই অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা লরিটি আবিষ্কার করেন এবং পুলিশ সদস্যদের খবর দেন।
আটক লরিটি বুলগেরিয়ায় এক আইরিশ নাগরিকের নামে নিবন্ধিত বলে বুলগেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। কনটেইনারে থাকা মৃতদেহগুলো বুলগেরিয়ার নাগরিকদের নয়বলেও ধারণা প্রকাশ করেছিলেন তারা।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কনটেইনারের ভেতর ৩৯টি লাশ পাওয়ার ঘটনাকে অকল্পনীয় বিয়োগান্তক এবং সত্যিকারের হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
“আমি নিয়মিত আপডেট পাচ্ছি। কী ঘটেছে তা বের করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসেক্স পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে,” পার্লামেন্টে বলেছেন তিনি।
লরিটি কোনো পথে এসেছে সে ব্যাপারে কোনো প্রত্যক্ষদর্শী বা কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা পুলিশকে অবহিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মর্মান্তিক এ ঘটনা লরিতে করে ভিনদেশে মানুষ পাচারকারী চক্রের ভয়াবহ চিত্রকেই সামনে নিয়ে এসেছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
২০১৪ সাল থেকে জাতিসংঘ এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দিতে গিয়ে পথিমধ্যে মারা যাওয়া লোকদের সংখ্যা রেকর্ড করা শুরু করে। ওই সময় থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে লরি এবং কনটেইনারে পাঁচটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ২০১৪ সালে শরণার্থী সংকট শুরুর আগের তথ্য এভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। তবে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। ২০০০ সালেও ডোভারে একটি লরিতে ৫৮ চীনা শরণার্থীর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল।
২০১৫ সালেও অস্ট্রিয়ার একটি সড়কে পরিত্যক্ত একটি লরির ভেতর ৭১ টি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। লরিটি বুলগেরীয়-হাঙ্গেরিয়ান মানব পাচার চক্রের কাজে ব্যবহৃত হতো বলে সেসময় পুলিশ সন্দেহ করেছিল।