যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

41

ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নতুন নেতা হিসেবে বেছে নিয়েছে লন্ডনের সাবেক মেয়র বরিস জনসনকে। তিনিই হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী। টেরিজা মের উত্তরসূরি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদের জটিল অংক বরিস জনসনকেই মেলাতে হবে। সে জন্য তার হাতে সময় আছে তিন মাস।
দলে বিদ্রোহের মুখে টেরিজা মে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় নতুন নেতৃত্ব বেছে নিতে ভোটের আয়োজন করে কনজারভেটিভ পার্টি। সেই দৌড়ে শেষ পর্যন্ত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসনের সঙ্গে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ছিলেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট।
তাদের মধ্যে একজনকে বেছে নিতে সোমবার বিকাল পর্যন্ত ভোট দেন কনজারভেটিভ পার্টির ১ লাখ ৬০ হাজার নিবন্ধিত সমর্থক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সেই ভোটের ফলাফলে বিজয়ী হিসেবে বরিস জনসনের নাম ঘোষণা করা হলে তার ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়।
ভোটে সুস্পষ্ট ব্যবধানেই প্রতিদ্ব›দ্বী হান্টকে হারিয়েছেন জনসন। বিবিসি জানায়, জনসন ৯২ হাজার ১৫৩ ভোট এবং হান্ট ৪৬ হাজার ৬৫৬ ভোট পেয়েছেন।
জয়ী ঘোষণার পর জনসন ‘দল তার উপর যে আস্থা দেখিয়েছে তিনি তার যোগ্য হয়ে উঠতে পারবেন’ বলে আশা প্রকাশ করেন এবং বলেন, তিনি তার দল নিয়ে দ্রুত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। প্রচার শেষ, এবার কাজ শুরু করার সময় হয়েছে, বলে বক্তব্য শেষ করে জনসন। খবর বিডিনিউজের
বিশ্বনেতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সবার প্রথম জনসনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। জনসনের বিজয়ী হওয়ার খবর প্রকাশের পরপরই এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য বরিস জনসনকে শুভেচ্ছা। তিনি অসাধারণ হবেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনও নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গতকাল মঙ্গলবারই মের শেষ কার্যদিবস ছিল। আজ তিনি পদত্যাগ করবেন।
আজবিকালে রানির সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিক পদত্যাগপত্র দেবেন টেরিজা মে। এর পরপরই তার উত্তরসূরি বাকিংহাম প্যালেস ঘুরে এসে অসীন হবেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে।
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে মের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হতে না পারায় এক বছর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নানা কারণে আলোচিত জনসন।
২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পর্কোচ্ছেদের রায় হয়। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে টেরিজা মে সেই দায়িত্ব নিয়ে বিচ্ছিন্নতার পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই জোট থেকে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সেই পথ বের করার জন্য ২১ মাস সময় পেয়েছিলেন মে। কিন্তু সেজন্য যে পরিকল্পনা তিনি সাজিয়েছিলেন তা পার্লামেন্টে পাস করাতে না পারায় ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন তারিখ ঠিক হয় ৩১ অক্টোবর। কিন্তু নিজের দলে বিদ্রোহের মুখে গত ৭ জুন নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন টেরিজা মে, যদিও তার সরকারের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। ওই মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর বরিস জনসনকে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে বিচ্ছেদের হিসাব চূড়ান্ত করতে হবে। তাতে তিনি ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন চক্করে পড়তে হবে যুক্তরাজ্যকে।