দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও হ্রাসের কারণে ক্ষতি এড়াতে অটোমেশন পদ্ধতিতে যেতে চায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম উঠা-নামার কারণে বিপিসিকে লাভের সাথে লোকসানও গুনতে হয়। বিপিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সাধারণ কোন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান নয়। বিপিসি’র সাথে সরাসরি সরকার জড়িত। সরকারের কাজ জনগণের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আন্তরিকতার সাথে দেখা। বিপিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও এর সাথে অনেক বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং যানবাহন সেক্টর জড়িত। যানবাহন সেক্টরে কোন নিয়ম প্রতিষ্ঠিত নেই। ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে যানবাহনগুলো জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে থাকে। অটোমেশন পদ্ধতি অবলম্বন করলে বিপিসিকে অধিক পরিমাণ লোকসান গুনতে হবে না সত্য। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বেপরোয়া ভাড়া আদায়ে যাত্রী সাধারণ এক অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও গাড়ি ভাড়া কম নেয়া হয় না। পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য এমনিতেই অসহনীয় মাত্রায় বেড়েছে। এমনিতেই যাত্রী সাধারণ গণপরিবহন মালিক-শ্রমিকদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। অর্থনীতির সূত্র হলো উৎপাদন বাড়লে দাম কমে। উৎপাদন কমলে পণ্যের দাম বাড়ে। একই সূত্র পরিবহন সেক্টরেও প্রযোজ্য। যাত্রী সংখ্যা বাড়লে ভাড়া কম নেয়ারই কথা। কিন্তু যাত্রীর সংখ্যা বাড়লে বাড়তি ভাড়া আদায় গণপরিবহন শ্রমিকদের নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একই দূরত্বে রাস্তায়, একই সংখ্যক যাত্রী নিয়ে একই জ্বালানি তেল ব্যবহার করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায়কে কোন নিয়মতান্ত্রিক সূত্র দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায় না। ছুটির দিন, বন্ধের দিন যাত্রী সাধারণকে যে কোন গন্তব্যে গমনাগমন করতে অতিরিক্ত ভাড়া না গুণে উপায় থাকে না। আসলে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্যে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। তার উপর অটোমেশন পদ্ধতিতে জ্বালানি তেলের দাম যখন বাড়বে তখন পরিবহন শ্রমিকরা লিটার প্রতি ৫০ পয়সা কিংবা এক টাকা বাড়তি দামের জন্য প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে এক টাকা দু’টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করবে এতে কোন সন্দেহ নেই। এমনিতেই বাস, মিনিবাস, টেম্পো, সিএনজি, অটোরিক্শা ইত্যাদি দূরপাল্লার হোক কিংবা মাজারি পাল্লার হোক অথবা উঠা-নামা দূরত্বে হলেও সরকারি নির্ধারিত কোন ভাড়ার নিয়ম মেনে চলে না। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়ও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় প্রায় নিয়মিত। কিন্তু তাতে কোন সংশোধন দেখা যায় না গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। যাত্রী সাধারণ সংঘবদ্ধ নয় বলে সবসময় ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকবে এটাতো আইন বলে না। পরিবহন শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ তাই তারা যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে একেবারে যাতায়াত ব্যবস্থাকে অচল করে দেয়। এক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কোন প্রতিকার যাত্রী সাধারণ পায় না। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকার বিভিন্ন সেক্টরে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে। বিপিসিতে সরকারের ভুর্তকি দিতে হবে সতেরো কোটি জনগণের স্বার্থে। লাভের কথা ভেবে বিপিসি যদি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করতে গিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষকে দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনার দিকে ঠেলে দেন তাতে বিপিসির লাভের চেয়ে সরকারের ক্ষতিই হবে বেশি। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য ঠিক রাখার চেয়ে গণপরিবহনের যাত্রীদের কথা আন্তরিকতার সাথে বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করে সর্বস্তরের যাত্রী সাধারণ।