মৎস্যসম্পদ রক্ষায় ১৫ দিনের কড়াকড়ি

47

উপকূলীয় এলাকা ও নদ-নদীতে অবৈধভাবে জাল ফেলা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রশাসন। মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে সম্মিলিত অভিযান শুরু হবে আজ। চলবে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে এ অভিযান চালাবে। ইতোমধ্যে অভিযান সফল করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চারজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ দিনব্যাপী এ অভিযান সফল করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্ত দের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ বিশেষ কার্যক্রমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, সম্মিলিত অভিযান বাস্তবায়নে উপজেলাগুলোর মধ্যে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড, বাঁশখালী, আনোয়ারা, মিরসরাই উপজেলাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কর্ণফুলী, হালদা, শঙ্খ ও ইছামতি নদীতেও অবৈধ জাল ফেলে মাছধরা বন্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মা মাছের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর পূর্বদেশকে বলেন, ‘সম্মিলিত অভিযানে জেলা-উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি চারজন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবেন। তারা অবৈধ জাল নিধন ও জাটকা ধরা থেকে জেলেদের বিরত রাখতে কাজ করবেন। এরমধ্যে উপকূলীয় বাঁশখালী, সীতাকুন্ডসহ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী উপজেলাকেই আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিব। জেলার যে ট্রাস্কফোর্স রয়েছে সেটির মাধ্যমেই অভি্নদ্ব সফল করা হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মুমীনুল হক পূর্বদেশকে বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত অভিযান চালানোর জন্য আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। নদ-নদী ও সাগরে বেহুন্দি জালসহ সকল ধরনের অবৈধ জাল নির্মূলে কাজ করবো। অভিযানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নগরীতে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করবেন।
সূত্র জানায়, গত ১৬ জানুয়ারি মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে দেশের ১১টি জেলায় নির্দেশনার চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শোয়াইব আহমদ খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আজ থেকে ৪ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী চট্টগ্রামসহ ১১টি জেলায় মৎস্য সম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলকরণ সংক্রান্ত সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। জেলা পর্যায়ে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে থাকা জেলা ট্রাস্কফোর্স এর মাধ্যমে এ অভিযান সফল করার কথাও নির্দেশনায় বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্দেশনা পেয়েই জেলা মৎস্য দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মাছ ধরতে ফেলা অবৈধ জালসমূহ নিজ দায়িত্বে উপকূলীয় এলাকাসহ সকল নদ-নদী ও মোহনা হতে সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যথায় সম্মিলিত বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সূত্র জানায়, মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০, সংশোধনী ১৯৮৫, ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী সমুদ্র, নদ-নদী, মোহনা এবং উপকূলীয় এলাকায় বেহুন্দী জাল, পেকুয়া জাল, টং জাল, খুঁটি জাল, গাড়া জাল, বাঁধা জাল, চিংড়ি পোনা ধরার জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
জেলেরা জানান, উপকূলে চিংড়ি পোনা আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঘের মালিকদের প্ররোচণায় অবৈধ পন্থাটিকেই উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে অভাব-অনটনে পিছিয়ে পড়া উপকূলবাসী। সাগর-নদীতে ভাটা আসার সাথে সাথে বিহুন্দী জাল নিয়েই নেমে পড়েন তারা। চিংড়ি পোনা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সাগরে নামলেও জালে বিভিন্ন ধরনের মাছ উঠে। ঘের মালিকরা চিংড়ি ছাড়া বাকি মাছ ক্রয় করেন না। যে কারণে মাছগুলো মৃত অবস্থায় উপকূলেই ফেলা হয়। সাগর ও নদী থেকে সংগ্রহ করা এসব রেনুগুলো সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে পাঠানো হয়। এ পেশার সাথে বয়স্কদের পাশাপাশি শিক্ষাবঞ্চিত শিশুরাও বেশি জড়িত হয়েছে।
বাঁশখালীর গন্ডামারা সমিতি ঘোনা চিংড়ি ঘেরের পরিচালক মোহাম্মদ মানিক বলেন, ‘৯০০ কানির চিংড়ি ঘেরের জন্য প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করা হয়। আহরণকারীরা নানা ধরনের মাছ সংগ্রহ করলেও আমরা শুধু চিংড়ি পোনা নিই। বাকিগুলো ফেলে দিতে হয়। এটা অবৈধ হলেও উপার্জনের জন্য সেটিই করতে হচ্ছে। অনেক লোক এ পেশার সাথে জড়িত।’