মোবাইল সিম রিমে শুল্ক খরচ কেমন বাড়লো?

51

কুষ্টিয়ায় থাকেন শিরিন সুলতানা। দুরে থাকা স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার জন্য তার ভরসা মোবাইল ফোন এবং এটি তার নিত্যব্যবহার্য একটি জিনিস ।
তিনি চান না মোবাইল সিমের ওপর কর বসানো হোক। সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য সিম করমুক্ত করা উচিত- এটাই তার কথা।
শিরিন সুলতানার মতে সরকারের উচিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নিম্নবিত্তের মানুষ কিংবা শহরের বাইরে যারা থাকে তাদের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সিমকে কর মুক্ত করা। তবে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যেসব সিম ব্যবহার হয় বা পদস্থ কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত ফোনে’ ট্যাক্স বাড়ানো যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তবে এবারের বাজেটে তার প্রত্যাশা পূরণ তো হয়নি- বরং অর্থমন্ত্রী শুল্ক বাড়ানোর কারণে এখন থেকে ফোনে কথা বলা বা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য তাকে অতিরিক্ত খরচ দিতে হবে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল তার প্রস্তাবে বলেছেন, মোবাইল ফোনের সিম/রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ১০ শতাংশ নির্ধারণ।
অর্থমন্ত্রী সংসদে বাজেট বক্তৃতা শুরুর সাথে সাথে তার বাজেট বক্তৃতা প্রথা অনুযায়ী ওয়েবসাইটে তুলে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। মূহুর্তের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মোবাইল ফোনে খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি, শুরু হয় সমালোচনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাল্টা প্রচারণা শুরু করে সরকার সমর্থকদের একটি অংশও।
বাজেটে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবনার পর সরকার সমর্থকদের একটি অংশ এমন ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এসব পোস্টে তারা দাবি করে যে বাড়তি শুল্ক টেলিকম কোম্পানিকে দিতে হবে, গ্রাহককে নয়।
তাদের দাবি, মোবাইল সেবার উপর মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জসহ ২২ শতাংশ কর আগে থেকেই ছিলো। যা সরকারকে দেয় টেলকো কোম্পানিগুলো। প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যমান করের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ যোগ করা হয়েছে। কিন্তু মিডিয়াগুলো প্রভাবিত হয়ে এমনভাবে প্রচার করছে যে জনগণকে সরাসরি শতকরা ২৭ টাকা দিতে হবে যা বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। কারণ কোনো গ্রাহককে শতকরা ২২ টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়না।
যদি টেলিকম কোম্পানিগুলো স্পষ্ট করেই বলছে, আগেও যে শুল্ক ছিলো সেটি যেমন গ্রাহককে দিতে হয়েছে এবং এখনো অতিরিক্ত শুল্ক গ্রাহকের কাছ থেকেই আদায় হবে।
টেলিকম কোম্পানি গ্রামীণ ফোন ও রবি জানিয়েছে বাজেট উপস্থাপনের পরপরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ সম্পর্কিত এসআরও জারি করেছে এবং তার আওতায় ইতোমধ্যেই সেটি গ্রাহকের জন্য কল চার্জ বা এসএমএস খরচে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গ্রাহক ও রাজস্ব বিবেচনা দেশের সবচেয়ে বড় টেলিকম প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল বলছেন, অতিরিক্ত শুল্ক কল বা এসএমএস সহ সিম ব্যবহার করে নেয়া যে কোনো সেবার জন্য গ্রাহককে দিতে হবে এবং সেটি তারা গ্রাহকদের অবহিত করেছেন।
সরকারের নিয়মানুযায়ী অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর শুরু হয়েছে বাজেট ঘোষণার পরপরই। এটি কোম্পানির কোনো লাভের বিষয় নয়। সরকার যেভাবে শুল্ক আরোপ করবে- সেটিই কেবল গ্রাহকদের ওপর প্রযোজ্য হবে।
রবির মিডিয়া রিলেশান্স ম্যানেজার আশরাফুল ইসলামও বলছেন, বাজেট ঘোষণার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এসআরও জারি করেছে। এবং এরপরই শুল্ক গ্রাহকদের ওপর কার্যকর হয়ে গেছে। অর্থাৎ অতিরিক্ত যে শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর মধ্যেই মোবাইল গ্রাহকদের কাছ থেকে পেতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশে এখন মোবাইল ফোনের সচল সিম রয়েছে প্রায় ১৬ কোটি। অর্থাৎ ১৬ কোটি মোবাইলের সিম ব্যবহারকারীর জন্য শুল্কবৃদ্ধিজনিত এ ব্যয় বাড়বে। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৯ কোটি সিমে। নতুন বাজেট ঘোষণার আগে মোবাইল ফোনে কথার বলার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ১ শতাংশ সারচার্জসহ মোট ২২ শতাংশ কর ছিলো।
অর্থাৎ কেউ মোবাইল ফোনে সিম বা রিম ব্যবহার করে ১০০ টাকার কথা বললে তাকে ২২ টাকা কর দিতে হতো সরকারকে। নতুন করে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় এখন ১০০ টাকায় কর দিতে হবে মোট ২৭ টাকা। এর অর্থ হলো একশ টাকার কথা বলা বা বার্তা দেয়ার ব্যয় হলো ১২৭ টাকা যা আগে ছিলো ১২২ টাকা এবং কোম্পানিগুলো এ অর্থ নিজেরা দেবে না- বরং তারা এ অর্থ সরকারকে দেবে গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়েই।
রবি’র কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলছেন, আগে ৫০ পয়সার একটি এসএমএসের জন্য সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জসহ গ্রাহককে দিতে হতো প্রায় ৬১ পয়সা। এখন শুল্ক বাড়ানোর কারণে সেটি হবে প্রায় ৬৪ পয়সা।
একই ভাবে অতিরিক্ত শুল্ক যোগ হবে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপরও ফলে স্বাভাবিকভাবে মানুষের জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেবার নেয়ার খরচ বেড়ে গেছে ইতোমধ্যেই।

জাদু দেখাতে গিয়ে
নদীতে নিখোঁজ জাদুকর
বিবিসি বাংলা
হাতে-পায়ে শিকল বাধা অবস্থায় নদীতে লাফিয়ে জাদু দেখাতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছেন ভারতীয় একজন জাদুকর। তিনি মারা গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিখ্যাত জাদু শিল্পী হ্যারি হুডিনির অনুকরণ করে ভারতের চঞ্চল লাহিড়ী হুগলী নদীতে জাদু দেখাতে গিয়েছিলেন।
হাতে-পায়ে শিকল বাধা থাকলেও তিনি তা থেকে মুক্ত হয়ে নিরাপদে সাঁতার কেটে বেরিয়ে আসার কথা। কিন্তু নদীতে নামার পরে তাকে আর উঠতে দেখা যায়নি।
রবিবার নদীর তীরে যারা এই জাদু দেখার জন্য এসেছিলেন, পরে তারা পুলিশকে খবর দেন। এরপর তার সন্ধানে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। তার শরীরে আটকানো শিকলে অন্তত ছয়টি তালা দেয়া ছিল। এ সময় অন্তত দুইটি নৌকা থেকে তার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। নদীর পাড়ে ও হাওড়া ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন অসংখ্য মানুষ।


খবর পাওয়ার পর পুলিশ এবং ডুবুরিদের একটি দল ওই এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। কিন্তু রবিবার বিকাল পর্যন্ত তার কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। একজন কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন, জাদুকর লাহিড়ীর মৃতদেহ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে মৃত ঘোষণা করা যাবে না।
লাহিড়ীর ওই জাদু দেখানোর একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন আলোকচিত্রী জয়ন্ত শাউ। তিনি বলছেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, কেন জাদু দেখানোর জন্য তিনি জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন। লাহিড়ী হেসে বলেছিলেন, আমি যদি ঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে এটা জাদু। আর যদি ভুল করি, তাহলে এটা একটা দুঃখজনক ঘটনায় পরিণত হবে। জাদুকর বলেছিলেন, জাদুর স্বার্থে তিনি এই কৌশলটি করে দেখাতে চান। তবে এটাই প্রথম নয় যে লাহিড়ী পানির নীচের কোন ঝুঁকিপূর্ণ জাদু দেখাতে গিয়েছেন।
বিশ বছর আগে একটি কাঁচের বাক্সের ভেতর নিজেকে ঢুকিয়ে এই নদীর তলদেশে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে তখন তিনি নিরাপদে নিজেকে মুক্ত করে আনতে পেরেছিলেন।