মোতালেবের প্রার্থিতায় ‘নাখোশ’ এমপি নদভী

205

সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব। গত শনিবার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
গতকাল নিজের ফেসবুক পেজে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি দলীয় প্রার্থী নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। জেলা ও থানা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে তার সাথে কোনোরূপ আলোচনা করেনি বলেও জানান এমপি নদভী। তবে দলীয় প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এমপিপত্নী রিজিয়া রেজা চৌধুরী।
সাংসদ নদভী ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘আমি সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের পরপর দুই বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে, উপজেলা নির্বাচন ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আমার সাথে মতবিনিময় করার প্রয়োজনও মনে করেননি। তাদের আচার-আচরণে মনে হয়, আমি বিরোধী দলীয় এমপি। অথচ বাস্তবতা হলো, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মাটি এবং মানুষের গতি-প্রকৃতি আমার চেয়ে ভালো কেউ বুঝবেন না। দীর্ঘ প্রায় তিন যুগ ধরে সাতকানিয়া- লোহাগাড়ার মাটি ও মানুষের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক। এ জনপদের প্রতি ইঞ্চি মাটিতে আমার পদচিহ্ন আঁকা রয়েছে। আমি ভালো জানি এ অঞ্চলের কোথায় কী উন্নয়ন করতে হবে এবং এজন্য যোগ্য মানুষটি কে। আমার সম্পূর্ণ অগোচরে সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এমএ মোতালেব সাহেবকে। অথচ গত ২২ আগস্ট সাতকানিয়া রিসোর্টে মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোতালেব সাহেব আমাকে স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন তিনি অসুস্থ ও পারিবারিকভাবে চাপের মুখে রয়েছেন। তাই তিনি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। দলীয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিবেন ও অবসরে যাবেন। তিনি সেদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্যেও একই কথা বলেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে মতামত দেয়ার এবং মতামত চাওয়ার অধিকার আমার আছে বলে মনে করি। কারণ, শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে সাংসদের সাথে বৈঠকে সবসময় তৃণমূলের সাথে সমন্বয় করে এলাকার উন্নয়ন ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার কথা বলেন।’
এমন স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে কয়েকবার ফোন দিলেও সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ফোন ধরেননি। পরিচয় দিয়ে এসএমএস দেয়া হলেও সাড়া দেননি। তবে সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী এরফান চৌধুরী বলেন, ‘ফেসবুক পেজটি উনার। এডমিন বেলাল নামে একজন। যা লিখেছেন তা উনার ব্যক্তিগত মতামত। উনি মনে করেছেন প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে উনার পরামর্শ নেয়া উচিত ছিল তাই লিখেছেন। পছন্দের প্রার্থী ছিলো কিনা উনিই জানবেন। ’
এদিকে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করে নদভীর দেয়া এমন অভিমতে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে এমন স্ট্যাটাস দিয়ে এমপি নদভী ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন জেলা ও উপজেলার নেতারা।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার পক্ষে সবাই কাজ করবো। এখানে একজন এমপি কি বললেন এটা মুখ্য বিষয় নয়। এমপি নদভী যখন জাতীয় নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তখন কেউ বিরোধিতা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে উনার পক্ষে কাজ করেছেন। এখন উপজেলা নির্বাচনে অন্যজন যখন নৌকার মনোনয়ন পেলেন তখন বলা হচ্ছে উনার মতামত নেয়া হয়নি। মনোনয়ন দেয়ার এখতিয়ার একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর। উনি কারো মতামত নিয়ে মনোনয়ন দিতে বাধ্য নন। এটা নিয়ে মন্তব্য করাও একধরনের ধৃষ্টতা। এমএ মোতালেব একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।’
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উনি নৌকার মনোনয়ন পেলে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছি। পরবর্তী সময়ে সব অনুষ্ঠানে উনার সাথে সমন্বয় করে কাজ করেছি। এমনকি গত জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানেও উনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আয়োজনে অংশ নিয়েছেন। এরপরেও কেন উনি এমন মন্তব্য করেছেন জানি না। মনোনয়ন বোর্ড তথা প্রধানমন্ত্রী যাকেই মনোনয়ন দিয়েছেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো।’
জানা যায়, একসময়ে জামায়াত ঘরানার নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। নদভীর শ^শুর মাওলানা মুবিনুল হক চৌধুরী ছিলেন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। ২০১৪ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন নদভী। একাদশ জাতীয় সংসদে একই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।
প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলেও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় না করে জামায়াত প্রীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। একইভাবে লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এমপির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী নৌকার মনোনয়ন পেলেও দল পরিবর্তন করা জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল জয়ী হন। এমপি নদভীর ভূমিকার কারণেই নৌকার প্রার্থী খোরশেদ আলম পরাজিত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন লোহাগাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা। এবার সাতকানিয়াতেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় লোহাগাড়ার পুনরাবৃত্তি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।