মোকাব্বির বলছেন দলীয় সিদ্ধান্ত গণফোরামের ‘না’

27

সুলতান মনসুরের পর এবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন গণফোরামের আরেক নেতা মোকাব্বির খান। তার চিঠির প্রেক্ষিতে আজ (মঙ্গলবার) বেলা ১২ টায় সংসদে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন গণফোরামের দুই নেতা সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খান।
ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করে জয়ী হওয়া সুলতান মনসুর গত ৭ মার্চ শপথ নিয়ে এরইমধ্যে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। ওই সময় মোকাব্বিরও শপথ নেবেন বলে জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পিছু হটেন।
এদিকে ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ গ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে ২ বা ৩ মার্চ (আজ ও কাল) আমার শপথের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।’ তবে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, আমাদের শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন ।
সোমবার বেলা ৩ টায় মতিঝিল ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে মোকাব্বির খান এক সাক্ষাৎকারে দেন বলেন, আমি ড. কামাল হোসেনের কাছে সিদ্ধান্ত নিয়ে শপথহণের জন্য স্পিকারকে চিঠি দিয়েছি।
ড. কামাল হোসেনের নাকি গণফোরামের সিদ্ধান্তে শপথ নিতে যাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির বলেন, ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত মানেই হলো গণফোরামের সিদ্ধান্ত। আমি দলীয় সিদ্ধান্তে শপথ নিতে যাচ্ছি।
তবে তিনি জানান, তার শপথের বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল বিএনপির সঙ্গে সরাসরি কোনও কথা হয়নি। অফিসিয়ালি তাদেরকে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
নির্বাচন প্রত্যাখান করে কেন শপথ নিতে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, আমরা পুরো নির্বাচনকে প্রত্যাখান করেছি। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থা থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন, সেটা কিন্তু প্রত্যাখ্যান করি নাই। অর্থাৎ যেখানে জনগণ ভোট দিয়েছে, সেখানে তো আমাদের প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ নেই। যেখানে ভোট হয়েছে, সেটা তো গণরায়। ২৯২টি সংসদীয় আসনে ভোট হয় নাই, সেটাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ, ৮টি আসন দিয়ে তো পুরো বাংলাদেশকে বিচার করা যায় না। এজন্য আমরা বলছি যে নির্বাচনটাকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা যে নির্বাচনটাকে প্রত্যাখ্যান করেছি সেটা বলার জন্য সংসদে যাওয়া। এটা তো অলিতে-গলিতে বললে হবে না। সংসদে গিয়ে বলতে হবে যে এই নির্বাচন হয় নাই। সেটা তো তখন রেকর্ড হবে। আর এসব কথা বলার জন্য উপযুক্ত জায়গা হলো সংসদ।
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথ নিলে, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে কেন দল থেকে বহিষ্কার করা হলো, জানতে চাইলে মোকাব্বির খান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করেন নাই বলেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি দলীয় মতামত উপেক্ষা করে শপথ নিয়েছেন। এই জন্য তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
আপনার শপথ নেওয়ার পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে কোনও প্রভাব পড়বে কী, এ প্রশ্নের জবাবে মোকাব্বির খান বলেন, আগামী দিনে কোনও প্রভাব পড়বে কিনা সেটা তো আমি বলতে পারি না। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হয় নাই, ৩০ তারিখ (৩০ ডিসেম্বর) যে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই সেই কথাটা সবাইকে সংসদে গিয়ে বলা উচিত বলে আমি মনে করি।
মোকাব্বির খান দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে শপথ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে গতকাল রাত ৯ টার দিকে সুব্রত চৌধুরী বলেন, শপথ না নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত শপথ না নেওয়া। সেটা এখনও বহাল আছে। সেটার কোনও পরিবর্তন হয় নাই। আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথ গ্রহণ করে থাকে সেটা তার নিজ দায়িত্বে। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।
আর গণফোরামের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, ড. কামাল হোসেন কিন্তু গণফোরামের মালিক নন। তিনি দলের সভাপতি এবং আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া তিনি একা কোনও সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।