মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি প্রশাসনের

20

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানলে দুর্গত এলাকা থেকে যাতে মানুষকে দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া যায় সেজন্য সীতাকুন্ড উপজেলা প্রশাসনের আশ্রয় কেন্দ্রসহ সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বিকাল থেকে উপজেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুনের সভাপতিত্বে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায়ের পরিচালনায় এক দিকনির্দেশনামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপকূলীয় এলাকাকে কিভাবে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত থেকে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন উপস্থিত কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রকল্প পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন, পৌর মেয়র বদিউল আলম, খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা প্রিয় কমল চাকমা, জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. নুর উদ্দিন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুচ্ছেফা, প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাহ আলম, সীতাকুন্ড মডেল থানার ওসি ফিরোজ হোসেন মোল্লা, ওসি (তদন্ত) মো. শামীম শেখ, সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. তাশরাফ হোসেন, সীতাকুন্ড প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক লিটন কুমার চৌধুরী, উপজেলা সিপিপি টিম লিডার মো. শাহজাহান প্রমুখ।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুল নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আর আতংকের মধ্যে উপকুলবাসী। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দিনভর উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করেন স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ। পাশাপাশি কাজ করছে উপকূলীয় এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সিপিপি ৬৩টি ইউনিট। প্রতি ইউনিটে ১৫ জন করে সদস্য রয়েছেন। একইভাবে সীতাকুন্ড ও কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্ব স্ব উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ করে সাগরে অবস্থানরত জেলেদের অনেকটা জোর করে স্পিড বোর্ডের মাধ্যমে উপকূলে নিয়ে আসছে। গতকাল শনিবার সকালে সীতাকুন্ড ফায়ার সার্ভিস উপজেলার মুরাদপুর গুলিয়াখালী এলাকায় সাগরে গিয়ে জেলে ও গুলিয়াখালী বিচে যাওয়া পর্যটকদের নিয়ে আসতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সিপিপি টিম লিডার মো. শাহজাহান বলেন, ‘গত শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার সারাদিন উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে আমার টিমের ৯৪৫ জন সদস্য উপজেলার সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত উপকূলবাসীকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার বিষয় দেখভাল করছেন। আমাদের এই কার্যক্রম ঘূর্ণিঝড় এলাকা অতিক্রম করা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলমান থাকবে।’
শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে সলিমপুর, কুমিরা, ভাটিয়ারী উপকূলীয় এলাকায় মাইকিং শুনে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে শুরু করেছেন লোকজন। ঘরের পোষা গরু-ছাগল-মুরগী, বিছানাপত্র মাথায় নিয়ে চোখে মুখে দুর্যোগ মোকাবেলার প্রত্যয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় সিপিপির ৫শ স্বেচ্ছাসেবক, মেডিকেল টিম, পর্যাপ্ত ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্ততি সম্পন্ন হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় ৫৯টি সাইক্লোন সেন্টার, ৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪টি শিশু শিক্ষা কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। তাদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সন্দ্বীপ চ্যানেলে সকল প্রকার নৌ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তাৎক্ষণিক দুর্যোগ এলাকার লোকজনকে চিকিৎসা সেবা দিতে সার্বক্ষণিক মেডিকেল টিম তৈরি রাখা হয়েছে।