মেয়েগুলোর পোশাক দেখে ভয় পেয়েছি : ববিতা

130

নতুন বছরের শুরুর দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা; একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বাংলা চলচ্চিত্রের ফেলে আসা বছর নিয়ে তার পর্যবেক্ষণ ও নতুন বছরে প্রত্যাশার কথা।
প্রশ্ন : অসুস্থতাকে সঙ্গী করেই শুরু হলো আপনার নতুন বছর। সবশেষ শারীরিক অবস্থা কেমন?
ববিতা : অসুস্থতা তেমন গুরুতর কিছু না। মাঝে-মধ্যেই একটু-আধটু অসুস্থ হয়ে পড়ি, আবার ঠিকও হয়ে যায়। এখন শরীরে অল্প ব্যথা আছে। তাছাড়া সবমিলিয়ে ভালো আছি।
প্রশ্ন : নতুন বছরে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
ববিতা : আমি সবসময় ইতিবাচক। আমি এই জগতটাকে সবসময় ভালোবাসি। আমি চাই, নতুন বছরে ভালো ভালো কিছু ছবি হবে। কেউ কেউ যে ভালো ছবি বানাচ্ছে না- তা আমি বলব না। আমার কথা, এমন ছবি বানান যেগুলো বক্তব্যপূর্ণ ও সুন্দর হবে, আবার সমাজের জন্য বার্তাও থাকে; আবার ব্যবসায়িকভাবেও সাফল্য পাবে। আমি গত বছর বেশিরভাগ সময় দেশে ছিলাম না, শুনেছি ‘দেবী’ ছবিটি নাকি খুব ভালো চলেছে। সিনেমার পরিচালক কী বাংলাদেশের?
প্রশ্ন : হ্যাঁ বাংলাদেশের, তরুণ পরিচালক অনম বিশ্বাস।
ববিতা : তাহলে তো ভালো বানিয়েছে, শুনেছি। অবশ্য ওটা হুমায়ূন (হুমায়ূন আহমেদ) সাহেবের গল্প, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। ভালো গল্প, ভালো স্ক্রিপ্ট, ভালো ডায়লগ-সবকিছু মিলিয়ে যেটা হবে সেটাই ভালো সিনেমা। মানে এরকম না যে, শুধু ধুমধাড়াক্কাই হবে। সবমিলিয়েই ভালো ছবি বানাতে হবে।
আমজাদ হোসেন, জহির রায়হানদের ছবিগুলো যে ধরনের হত-সেগুলোকে আমি বলব, ফুল প্যাকেজের মুভি। কিন্তু এখন অনেক সময় ছবি বানানো হলো, শুধু সিনেমা হলে অল্প কিছু দর্শক গেল। সব ধরনের লোকজনকে দেখতে হবে সিনেমা।
প্রশ্ন : দুয়েকটি চলচ্চিত্র বাদ দিলে ২০১৮ সালকে বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই হতাশার বছর বলে বিবেচনা করছেন। আপনার পর্যবেক্ষণ কী বলে?
ববিতা : অনেকে অনেক কারণে হতাশার কথা বলেন। অনেক ব্যবসায়ী আমাদের ফিল্মে ঢুকে গেছে। তারা ব্যবসাটাকেই বেশি প্রাধান্য দেন। সেইদিক থেকে বিষয়টি হয়তো তারা বলছে, দেখা যাক কী হয়। কিন্তু একটা জিনিস কিন্তু ফেলার মতো না; আপনি জানেন নিশ্চয়ই, আগে পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে যাওয়া যেত তখন হলের পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিল। হলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল। সবার তো আর গাড়ি ছিল না; রিকশায়, হেঁটে যে যেভাবে পারতেন সিনেমা হলে যেতেন। কিন্তু এখন অনেকে হলে যায় না।
প্রশ্ন : কারণ কী শুধুই নিরাপত্তা?
ববিতা : নাহ। আরও আছে। অনেকে এখন ভাবছেন ঘরে বসেই তো আমরা টিভি চ্যানেলে বাংলাদেশের, বলিউডের ও হলিউডের হিট ছবিগুলো দেখতে পাচ্ছি। তাহলে হলে যাব কেন?
প্রশ্ন : আপনি তাহলে বলছেন, ড্রয়িংরুমে বসে চলচ্চিত্র দেখার অভ্যাসই দর্শকদের হল বিমুখ করেছে?
ববিতা : তা তো অবশ্যই। আমরা যদিও বলি, হলে বসে সিনেমা দেখার আবেদন সবসময় আলাদা। কিন্তু আপনি যখন বিনোদনমূলক সিনেমা দেখতে যাবেন তখন সবকিছু ভেবেই মা-খালা-বোনকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবেন। এখন তো পরিবারগুলো, বিশেষ করে নারীরা সিনেমা হলে যায় না। রাত ১২টায় সিনেমাহল থেকে বের হয়ে আপনি কি নিরাপদ? আজকাল তো প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। সবকিছু মিলিয়ে কেমন যেন একটা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রশ্ন : নিরাপত্তা জোরদারের ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
ববিতা : নিরাপত্তার ব্যাপারটা কী করে ঠিক হবে- আমি বুঝতে পারছি না। এখনকার তরুণরা ‘নেটফিক্সে’ মুভি দেখছে, বয়স্করাও বাসায় বসে নিজেদের পছন্দের সিনেমা দেখছে। আজকাল ছোট ছোট টিভি নাটক বানানো হচ্ছে। মানুষ সেগুলোই আরামসে দেখবেন, অসুবিধা তো নাই!
প্রশ্ন : অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, হলিউড-বলিউডে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো জনপ্রিয়তা পেলেও সিনেমা হলে তো দর্শক ভিড় করছে।
ববিতা : কারণ ওরা নিরাপত্তা নিয়ে ভাবে না। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা আছে। সর্বোপরি দর্শকের দেখার মতো সুন্দর একটা ছবি তো থাকতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে সেটা কি ইদানীং হয়? শুধু হয় ধুমধাড়াক্কা আর মারপিট সিনেমা। তাও আবার বলিউডের কপি করে। ইদানীং আবার সাউথ ইন্ডিয়ান ছবি থেকে কপি শুরু করেছে; যাতে লোকজন ধরতে না পারে! এতো হতাশার মাঝেও দু’চারটা ছবি ভালো হচ্ছে না- তা না। যেমন ‘মনপুরা’ ছবিটা আমি দুইবার দেখেছি। তারপর আরও একটা ছবি দেখলাম, ওটাও ভালো লেগেছে। তারপরও বলব, এগুলো যদি ব্যবসায়িক সাফল্য পেত তাহলে আরও ভালো লাগত। পুরস্কার পাওয়ার পাশাপাশি ছবির ব্যবসায়িক সাফল্যও চাই। একটা ছবির পেছনে লগ্নিকৃত অর্থ ফেরত আনতে হবে। অনেকে বলে, উনি খুব ভালো ছবি বানিয়েছেন কিন্তু লোকসান করেছেন; তাহলে পরের ছবি বানাতে পারবেন?
তার চেয়ে বড় কথা হলো, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের হাতে সিনেমার ব্যবসাটা চলে গেছে।আমাদের শিল্পীরা ভালো অভিনয় করছেন; সব ঠিক আছে কিন্তু আপনি কী বানাচ্ছেন? ভালো গল্প তো নেই। আজকাল যেন মনে হয় ‘সেক্স’ ও ‘ভায়োলেন্সের’ দিকে ঝুঁকছে অনেকে। আমি তো অবাক হয়ে যাই, আমাদের মেয়েগুলো ভারতে গিয়ে ছবি করল, ওদের পোশাক দেখে ভয় লেগে গেছে। (হা হা) একি হচ্ছে! আমাদের সময়ে শাবানা আপা, কবরী আপা, সুচন্দা আপাদের কি সিনেমা চলেনি? আমরাও তো আধুনিক পোশাকও পরেছি কিন্তু শালীনতা বজায় ছিল। খোলামেলা পোশাক দেখে মা-খালারা বলে, সিনেমা হলে বাচ্চাদের নিয়ে যাবো না; এমন কথাও শুনেছি।
প্রশ্ন : কিন্তু সংশ্লিষ্টদের দাবি, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতেই এভাবে উপস্থাপন করা হয়।
ববিতা : হলিউড-বলিউডের পোশাকের সঙ্গে যদি আমি নিজেকে মেলাই তাহলে তো হবে না। তাই না? আমার আগে দেখতে হবে, আমি কোন দেশের মানুষ, আমাদের ধর্ম কেমন। যেমন ভারতের ছবির পোশাকের ব্যাপারেই বলি, আমরূপালী পোশাক ওদের জন্য ঠিকই আছে। ওই সমস্ত পোশাক কিন্তু আমাদের জন্য না।