মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকান্ডের বিচার দ্রুত করতে হবে

52

সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশ করার কারণে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন তিনি। থাকতেন শেরে বাংলা হলে। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্র অনুযায়ী একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে শিবিরের কর্মী সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। খুনির দলে যারা সম্পৃক্ত এবং যাদের পুলিশ গ্রেফতার করেছেন সবাই ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার নেতাকর্মী। অমানবিক, পাশবিক- এমন ঘটনায় আমরা ক্ষুব্ধ-মর্মাহত। ওই ঘটনায় পুলিশ বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনামূলক একটি স্ট্যাটাস এবং শিবিরের নেতা সন্দেহে আবরারকে তারা নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে বলে বলা হচ্ছে। তবে আবরারের পারিবারিক সূত্র, নিকটাত্মীয় ও সহপাঠিদের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, মেধাবী এ শিক্ষার্থী শিবিরের কর্মী বা নেতা ছিলেন না, লেখাপড়ার বাইরে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তেমন আগ্রহও তার ছিল না। বরং তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে গণমাধ্যমে খবর পরিবেশিত হয়েছে। তবে আবরার নিয়মিত নামজ পড়তেন, মাঝেমধ্যে তাবলিগেও যেতেন। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, আবরারকে পেটানোর পর তাকে সিঁড়ির কাছে ফেলে দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে কয়েকজন যুবক। এ ফুটেজ হত্যাকারীদের শনাক্তকরণে সহায়ক হয়েছে। আমরা চাই হত্যাকারীরা দ্রুত গ্রেফতার হোক এবং তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হোক। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় সবচেয়ে যেটা উদ্বেগের বিষয় তা হল, হত্যার কারণ ভিন্নমত। আবরার ফাহাদ ফেসবুকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সা¤প্রতিক কয়েকটি চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন। কেউ কোনো বিষয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করতেই পারেন। তার মতের সঙ্গে সবাই একমত হবেন এমন কোনো কথা নেই। তাই বলে তাকে মেরে ফেলা হবে! এ যুগে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভিন্নমত প্রকাশের কারণে কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে, এটি অকল্পনীয়। এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ঘটনায় আমাদের সমাজে অসহিষ্ণুতা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা ভেবে শঙ্কিত হতে হয়। আমাদের রাষ্ট্র, আমাদের সংবিধান যে কোনো নাগরিককে ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। বাকস্বাধীনতা মানবাধিকারও বটে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলেছেন, ভিন্নমতের জন্য একজন মানুষকে মেরে ফেলার কোনো অধিকার নেই। তবে বাস্তবতা হল, ভিন্নমতের কারণে হত্যার ঘটনা দেশে আগেও ঘটেছে। জঙ্গিদের হাতে নিহত হয়েছেন একাধিক লেখক ও বøগার। সামাজিক মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশের কারণে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এমন অসহিষ্ণুতা সমাজের জন্য একটি অশনিসংকেত। এ অসহিষ্ণুতার কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।
আমরা লক্ষ করছি, ঘটনার পর থেকে বুয়েটে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও। ছাত্রলীগ নামধারীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অস্থির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, সরকারি সম্পদ ধ্বংসসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আদর্শিক এই ছাত্র সংগঠনটি। অতিস¤প্রতি চাঁদাবাজি আর নির্মাণকাজ থেকে কমিশন দাবিসহ নানা অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় স্পষ্ট যে, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের রাশ টানতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও অভিভাবক রাজনৈতিক দল। এমতাবস্থায় সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীর দুষ্কর্ম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সা¤প্রতিক সময়ে একাধিক অনুষ্ঠানে তাদের সতর্ক করেছেন। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনেও প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নয় শুধু অপরাধী যেই হোক তাদের ব্যাপরে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। আমরা মনে করি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডে যারা জড়িত, প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে। কোনোভাবেই তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। আমরা আবরার ফাহাদের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ তার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।