মেট্রোরেল আদৌ হবে?

94

ওয়াসিম আহমেদ
নগরীতে মেট্রোরেল করার উদ্যোগ নিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ জন্য ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) প্রাকযোগ্যতা সমীক্ষা (প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি) রিপোর্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, সিডিএ’র নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে রেখে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করা অনেকটা অবাস্তব। সেক্ষেত্রে চসিকের পক্ষ থেকে ফ্লাইওভারটিকে মেট্রোরেলে ব্যবহারের সবকটি প্রস্তাব নাকচ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। তাই এখন প্রশ্ন উঠছে নগরীতে মেট্রোরেল কি আদৌ বাস্তবায়ন হবে ? তবে মেট্রোরেল বা ফ্লাইওভার নয়, নগরীতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জংশন, ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট এবং বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রয়োগ করা। অন্যথায় ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল দুটোই ভেস্তে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন নগর বিশ্লেষকরা।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে নগরীতে দ্রুত গণপরিবহন ব্যবস্থা ‘মেট্রোরেল’ চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল চসিক। এজন্য ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি) প্রাকযোগ্যতা সমীক্ষা (প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি) রিপোর্ট সম্পন্ন হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে ‘বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেড’। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নগরীতে তিনটি সম্ভাব্য রুট নির্ধারণ করেছে। যার মোট দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫৪ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪ হাজার ২০২ কোটি ৫ লাখ টাকা। রুট তিনটি হল কালুরঘাট-বহদ্দারহাট-চকবাজার-লালখান বাজার-দেওয়ানহাট-পতেঙ্গা-বিমানবন্দর; সিটি গেট-একে খান বাস স্টপ-নিমতলী বাস স্টপ-সদরঘাট-ফিরিঙ্গিবাজার-শহীদ বশিরউজ্জামান স্কয়ার এবং অক্সিজেন-মুরাদপুর-পাঁচলাইশ-আন্দরকিল্লা-কোতোয়ালী-ফিরিঙ্গিবাজার এবং পাঁচলাইশ-একে খান বাস স্টপ লিঙ্ক। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মতামত হলো কালুরঘাট-বহদ্দারহাট-চকবাজার-লালখান বাজার দেওয়ানহাট-পতেঙ্গা-বিমানবন্দর রুটেই মেট্রোরেল চালু করার পক্ষে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, তিনটি অপশনে মেট্রোরেল নির্মাণ করা যাবে। প্রথমটি হল, সিডিএ’র নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ বন্ধ রেখে মেট্রোরেলে যেতে হবে। দ্বিতীয়ত, ফ্লাইওভার প্রকল্পটি সংশোধনী করে ফ্লাইওভারটিকে এমআরটিতে ‘কনভার্ট’ করা বা দ্বিতল ফ্লাইওভার নির্মাণ করা। যেখানে নিচে গাড়ি ও উপরে মেট্রোরেল চলাচল করবে। তৃতীয়ত, ফ্লাইওভারের পাশে ভূমি অধিগ্রহণ করে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে অতিমাত্রায় খরচ বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করা হয় সেই সমীক্ষা রিপোর্টে। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে প্রথম দুইটি প্রস্তাব বাস্তবায়নে সিডিএকে পত্র দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়েছে সংস্থাটি। তাই আপাতত মেট্রোরেল প্রকল্প নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না সিটি করপোরেশন। এ বিষয়ে চসিকের এমআরটি প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, নগরীর জন্য মেট্রোরেল অপরিহার্য। সেজন্যই মেয়র মহোদয় মেট্রোরেল নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাই আমরা প্র্যাক প্রাথমকি সমীক্ষা করে দেখেছি। কিন্তু সেখানে প্রস্তাবিত প্রস্তাবের সাথে সিডিএ রাজি নয়। তাই আপতত আমরা প্রকল্পটি নিয়ে এগুচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় আলাদা কর্তৃপক্ষ করে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মেয়রের উদ্যোগের মাধ্যমে এমআরটি’র আবেদনটা উঠে আসল। পরে ঢাকার মত চট্টগ্রামেও আলাদা কর্র্তৃপক্ষ করে মেট্রোরেল বাস্তবায়ন হতে পারে।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া পূর্বদেশকে বলেন, সিডিএ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে। সেই ফ্লাইওভার নির্মাণের ফিজিবিরিটি স্টাডি রিপোর্টের ৩১ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, নগরীর সড়কগুলো প্রশস্ত করার সুযোগ নেই। তাই পরিবহনের চাপ কমাতে ফ্লাইওভার করা যেতে পারে। আবার এই প্রতিবেদনের ৩৪ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, সড়কের জংশনগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনা, রুট বেইজড বিআরটি করা গেলে আরও ২০ বছর যা রয়েছে তা দিয়ে ভালোভাবে চলে যাবে। সেখানে আরও বলা হয়, সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা না গেলে ফ্লাইওভার দুইচার বছর ভালো ফল দিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ফ্লাইওভারের চেয়ে বিআরটি ছিল ভালো সুযোগ। কেননা বিআরটি করতে গেলে এত টাকার প্রয়োজন হত না। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও গাড়ির আলাদা লেন করে দিলেই হত। অন্যদিকে মেট্রোরেল প্রকল্প তো ২০৩০ সালের পরে চিন্তার করা উচিত। কেননা মেট্রোরেল প্রতি ঘণ্টায় দুইটি রুটে ৬০ হাজার করে ১ লাখ ১০ হাজার যাত্রী পরিবহন করবে। সে পরিমাণ যাত্রী কি আমাদের শহরে রয়েছে? বাস্তবে প্রতি ঘণ্টায় এত যাত্রী নেই। তাহলে কেন মেট্রোরেল ?
তিনি আরও বলেন, নগরীর বারেক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত সড়কটিতে মূল জটিলতা। বন্দর কর্তৃপক্ষ বে-টার্মিনাল করলে নগরী ভিতর দিয়ে চলাচল করা ট্রাকগুলো আর এইদিকে আসবে না। টুল রোড় হয়ে বে-টার্মিনালের ট্রাক টার্মিনালে চলে যাবে। তাহলে ওই রোড়ে ট্রাক ও কনটেইনার গাড়ির চাপ কমে যাবে। মূলত আমাদের কর্তারা নিজেদের ‘ক্রেডিট’ দেখাতেই বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে মশগুল হয়ে আছেন। মূল ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল নয়। চট্টগ্রাম নগরীর জন্য প্রয়োজন সঠিক ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা। অন্যথায় ফ্লাইওভার বা মেট্রোরেল দুটোই ভেস্তে যাবে। কেননা ফ্লাইওভার করলেন, ওখান থেকে নেমে কোথাও যাওয়ার জোঁ নেই। মেট্রোরেল করলে কিন্তু মেট্রোরেল থেকে কোথাও যাওয়ার জোঁ নেই। তাহলে এসব প্রকল্পে লাভ কি হবে ?