মেঝেতে ময়লা ফেলায় চিকিৎসা পায়নি শিশু!

36

শিশুর বয়স এক বছরও পূর্ণতা পায়নি। হামাগুড়ি দেয় এখনো। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার রাত ১১টার দিকে বাঁশখালী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ঠিকমতোই চলছিল চিকিৎসা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডালিম (আনার) খাওয়াতে গিয়েই বিপত্তি বাঁধে। শিশুটির হাত ফসকে হাসপাতালের মেঝেতে পড়া দুটি ডালিমের দানা দেখেই কর্তব্যরত চিকিৎসক ক্ষেপে যান। অপরিষ্কারের অভিযোগে শিশুটির মায়ের সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে চিকিৎসা না দিয়েই ওয়ার্ড ছেড়েছেন চিকিৎসক। নিষ্পাপ শিশুটির মায়ের আকুতিও ওই চিকিৎসকের মন গলাতে পারে নি। পরে হাসপাতালের ছাড়পত্র না নিয়েই জরুরি চিকিৎসার্থে চট্টগ্রামে নিয়ে যান। গতকাল বুধবার সকালে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে।
নয় মাস বয়সী শিশুটির নাম অমরজিৎ দাশ। পুলিশ সদস্য পিতা সনেট দাশ কর্মস্থলে থাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় শিশুটিকে সোমবার রাতে বাঁশখালী হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ২৪নং বেডে ভর্তি করা হয়। সেখানেই বাঁশখালী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তৌহিদুল আনোয়ার এমন ন্যাক্কারজনক কান্ড ঘটিয়েছেন। চিকিৎসা না পাওয়া শিশুটির পিতা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদকে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কমরুল আযাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি এমন ঘটনার খবর পেয়ে রোগীকে খুঁজতে যাই। পরে ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই রোগী ছাড়পত্র ছাড়াই চলে গেছেন। পরে রোগীর পিতা আমাকে ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানিয়েছেন। আমি বিষয়টি দেখবো বলে আশ্বস্ত করেছি।’
শিশুর পিতা সনেট দাশ পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি কর্মস্থলে থাকায় ছেলেকে মুমূর্ষু অবস্থায় সোমবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছেলের ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আনার খাওয়াতে গেলে দুটি দানা হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে। এতেই ডা. তৌহিদুল আনোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসা না দিয়ে চলে যান। আমার স্ত্রী ডাক্তারের পিছু ছুটে আকুতি জানালেও উনার মনে দাগ কাটেনি। শেষতক ছেলের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাৎক্ষণিক তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এ ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পর্যন্ত অভিযোগ দিব। এ চিকিৎসকের খুঁটির জোর কোথায় দেখবো।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চিকিৎসক তৌহিদুল আনোয়ারের মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। এদিকে ডা. তৌহিদুল আনোয়ারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুৃর্নীতির অভিযোগ তুলে সিভিল সার্জন বরাবরে গত ১৪ মে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগ পেয়ে সিভিল সার্জন দুর্নীতি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। আজ অনিয়ম তদন্তে এ কমিটির বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার কথা রয়েছে।