মূল লড়াই হবে নৌকা-ছাতার

77

একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার আংশিক) আসনে বিএনপি’র প্রার্থী না থাকলেও ২০ দলীয় জোটের শরীক দলের প্রার্থী ছাতা প্রতীকের কর্নেল (অব.) অলি আহমদের সাথে মহাজোট প্রার্থী নৌকা প্রতীকের নজরুল ইসলাম চৌধুরীর মূলত ভোটযুদ্ধ হবে।
এছাড়া এই আসনে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব স.উ.ম আবদুস সামাদ (মোমবাতি), ইসলামীক আন্দোলন বাংলাদেশের মো. দেলোয়ার হোসেন সাকী (হাত পাখা), ইসলামীক ফ্রন্ট বাংলাদেশ দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক জানে আলম নিজামী (চেয়ার), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল নবী (কাস্তে), তরিকত ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলী ফারুকী (ফুলের মালা), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলী নেওয়াজ খান (কুঁড়েঘর), জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবু জাফর মো. অলি উল্লাহ (লাঙ্গল) প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন।
১৯৭৬ সালে চন্দনাইশ থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এ আসনে ১৯৭৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি’র প্রয়াত ব্যারিস্টার মাহবুবুল কবির চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হলে ১৯৮১ সালে উপ-নির্বাচনে এলডিপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমেদ। নির্বাচনের ৩ বছরের মাথায় ১৯৮৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে পুনরায় ইঞ্জিনিয়ার আফসার উদ্দিন আহমেদ জয়লাভ করেন।
একই আসনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, ১২ জুন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কর্নেল (অব.) জয়লাভ করেন। ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চন্দনাইশ আসন ছাড়াও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকেও নির্বাচিত হন। ২টি আসনে জয়লাভ করার কারণে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আসন ছেড়ে দিলে, তার সহধর্মিনী মমতাজ অলি উপ-নির্বাচনে চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আসনে আ.লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে পরাজিত করে জয়লাভ করেন।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় কর্নেল (অব.) অলি নির্বাচিত হন। একই বছরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের মেয়াদের শেষ দিকে অলি বিএনপি থেকে বেরিয়ে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এলডিপি থেকে ‘ছাতা’ প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন তিনি।
অলি বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন করার পর চন্দনাইশ বিএনপি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। বিএনপি’র কাঁধে ভর করে নিজের দল এলডিপি’কে শক্তিশালী করে তিনি ৯ম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি মহাজোটের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়ে বেশ কিছুদিন দায়িত্ব পালনও করেন। স্থানীয় আ.লীগের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে সে পদ থেকে বাদ পড়ে যান অলি। শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব মুহুর্তে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে তার মনোনয়ন নিশ্চিত হয়। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে চাকুরী ছেড়ে ১৯৭৮ সালে রাজনীতিতে যোগদান করেছিলেন অলি।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ছাতা প্রতীক বিপুল ভোটে জয় পাবে।
মহাজোট প্রার্থী নজরুল ইসলাম চৌধুরী ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে দীর্ঘ ৫ বছর এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ১৭ বছর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি, দক্ষিণ জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক, জাতীয় পরিষদ সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশের স্বাধীকার আন্দোলনের জন্য কাজ করে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম এ আসনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
বিগত ৫ বছরে নজরুল ইসলাম চৌধুরী ২শ ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে শঙ্খের ভাঙ্গন প্রতিরোধে শঙ্খ নদীর দু’পাড়ে বøক স্থাপন, শঙ্খ নদীর উপর ৫ম সেতু খোদারহাট ব্রিজ নির্মাণ, এলাকার প্রতিটি সড়ক সংস্কার, ৫টির অধিক কলেজে ৪ তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ, বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ সম্প্রতি ৩শ ৭৭ কোটি টাকা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৩৫ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়েও বিগত ৫ বছরে বেশী উন্নয়ন হয়েছে। মহাজোট সরকারের এ উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে তাকে পুনরায় নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহবান জানান।
এ আসনে ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৪৩ জন ভোটারের মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৪০২ জন পুরুষ, ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬৪১ জন মহিলা ভোটার রয়েছে। ২টি পৌরসভা, ১৪টি ইউনিয়নে ১০৪টি কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।