মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে নিতে হবে পদক্ষেপ

58

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে দেশে সংঘটিত প্রতিদিনের সামাজিক নানা অসংগতি, বিচ্ছিন্নতা ও খুন-খারাবির চিত্র খুব একটা খবরের কাগজ বা ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় পাত্তা পাচ্ছে না বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু ঘটনাগুলো ঠিকই ঘটছে। অনেকগুলো ঘটনা নির্বাচনী সংঘাতের চেয়েও ভয়াবহ যা নির্বাচনী জোয়ারেই হারিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি ঘটনা কয়েকদিন আগে ঘটেছিল রাজধানীর কেন্দ্রস্থল বাংলা মোটর এলাকায়। মাদকাসক্ত পিতা দুই পুত্রের একজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পর আরো একজনকে হত্যা করার উপক্রম হলে বাধার সম্মুখীন হয়। পরে পুলিশ নরপিশাচ বাবার হাত থেকে সন্তান ও তাদের মাকে উদ্ধার করেছে। অবুঝ সন্তানের খুনি হিসাবে পিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনা রাজধানীতে সংঘটিত হওয়ার কারণে কিছুটা প্রচার পেলেও দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এ ধরনের বহু ঘটনা ঘটছে, যা প্রচার পাচ্ছে না। এমন একটি ঘটনা চট্টগ্রাম শহরের পাঠানটুলীতে ঘটেছে গত মঙ্গলবার। তবে এটি খুনের ঘটনা নয়; পিতার হাতে তিন সন্তানের বর্বর নির্যাতনের ঘটনা। এ ঘটনায় সর্বশেষ উপায় না পেয়ে তিন সন্তানের জননী পুলিশের সহায়তা নিয়ে সন্তানদের উদ্ধার করেছে। পিতা পলাতক রয়েছে। বুধবার দৈনিক পূর্বদেশে এ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায, ‘গত কয়েকদিন ধরে আগ্রাবাদ পাঠানটুলীর নজির ভান্ডার লেন এলাকার বাসিন্দা শাহেদ মিয়া তার ৯ বছরের শিশু বোরহান আরজুকে শিকলে বেঁধে বাসার একটি কক্ষে আটকে রাখেন। আরজুর সাথে তার ছোট ভাই ইনান উদ্দিন আরমান (৭) ও বোন জান্নাতুল সাদিয়া বৃষ্টিকেও (৫) একই কক্ষে আটকে রাখেন শাহেদ মিয়া। তাদের উপর চালানো হয় নির্যাতন। এভাবে কাটে কয়েকদিন। শিশুদের মা কুলসুমা আক্তার বেবী অনেক চেষ্টা করেও তাদের উদ্ধার করতে না পেরে অবশেষে সোমবার রাতে ডবলমুরিং থানা গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ শিশুদের উদ্ধার করে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়।’
পুলিশ সূত্র জানায়, তারা যখন উদ্ধার করতে যায় তখন সন্তানগুলো কাঁধ থেকে ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত শেকলে বাঁধা ও তালা মারা ছিল। তবে এ সময় শাহেদ মিয়াকে পাওয়া যায়নি। কুলসুমা আক্তারের অভিযোগ তার স্বামী মাদকাসক্ত। পুলিশ তাকে ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষ পিতা-মাতার হাতে সন্তানের নির্যাতন, নৃশংস খুন বা সন্তানের হাতে পিতা-মাতা খুন হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। যে মা-বাবার কোলে সন্তান সবচেয়ে বেশি নিরাপদ হওয়ার কথা সেখানেই যদি পৈশাচিক এসব ঘটনা ঘটে তবে অবুঝ সন্তানরা কার কাছে নিরাপত্তা পাবে? ঢাকা ও চট্টগ্রামে সংঘটিত এ শিশু নির্যাতনের মূলে রয়েছে পিতার অতিমাত্রায় মাদকাসক্তি। মাদক গ্রহণের পর মাতাল হয়ে অথবা মাদক গ্রহণের জন্য অসহায় স্ত্রীর কাছে অর্থ চেয়ে না পেয়ে এধরনের বর্বর ঘটনা ঘটাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, এ ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের সার্বিক অবক্ষয়েরই উদাহরণ। এসব কেন ঘটছে, তা সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয়। তার আগে সমাজ থেকে ভয়াবহ মাদকের উৎপাদন ও বেচাকেনা বন্ধসহ সেবনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতীব জরুরি। বর্তমান সরকার কয়েকমাস আগে সেই লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল। আমরা আশা করি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান ও মন্ত্রী পরিষদে পাশকৃত আইন বাস্তবায়নে মনোযোগী হবে। আমরা আশা করি, অপরাধী সেই পিতা হোক বা সন্তান, অপরাধের কারণে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাঠানটুলীর ঘটনায় পিতা যেহেতু নিষ্ঠুর অপরাধ করেছে, তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। না হয় সমাজে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ আর ফিরে আসবে না।