মুরগির মাংস থেকেও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি

72

যে কোনো প্রাণিজ খাবার থেকেই কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকতে পারে। মুরগির মাংস নিত্যদিনের খাদ্যাভ্যাসের একটি বহুল ব্যবহৃত উপকরণ। ঘরে, বাইরে যেখানেই খান না কেনো, বেশিরভাগ পদেই এর উপস্থিতি রয়েছে। কোলেস্টেরলের ভয়ে অনেকেই গরুর মাংস থেকে দূরে থাকেন ঠিক। তবে মুরগির মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে এই দুশ্চিন্তা করেন না অধিকাংশ মানুষ। তা কতোটা যৌক্তিক? খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বি যা আমাদের যকৃত উৎপন্ন করে। তবে প্রাণিজ উৎস থেকে আসা সবধরনের খাবার থেকে এই কোলেস্টেরল মেলে। ভোজ্য ও শারীরিক দুই উৎস থেকে কোলেস্টেরল পাওয়ার কারণে এর মাত্রা হয়ে যেতে পারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত।
হরমোন তৈরি আর চর্বি হজম করতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় কোলেস্টেরল প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত হলে তা রক্তনালী সরু কিংবা পুরোপুরি আটকে দিতে পারে।
উপকারী ও অপকারী কোলেস্টেরল :
‘লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এলডিএল)’ এবং ‘হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন (এইচডিএল)’ হলো কোলেস্টেরলের দু’টি ধরন। আর কোলেস্টেরল নিয়ে যত আতঙ্ক তার জন্য পুরোপুরি দায়ী ‘এলডিএল’। ‘এলডিএল’য়ের ‘লিপোপ্রোটিন’ যকৃত থেকে রক্তে কোলেস্টেরল বহন করে এবং এই প্রক্রিয়া চলাকালে রক্তনালীর গায়ে তা লেগে যায়। আর তাই ‘এলডিএল’য়ের মাত্রা বেশি হলে রক্তনালীর গায়ে ক্রমাগত তা জমতে থাকে এবং রক্তনালী সরু হতে থাকে।
অপরদিকে ‘এইচডিএল’য়ের ‘লিপোপ্রোটিন’ রক্ত থেকে কোলেস্টেরল বহন করে নিয়ে আসে যকৃতে এবং সেখানে তাকে আরও ভেঙে ফেলা হয়। ফলে কোনো সমস্যাই তৈরি হয় না।
যেভাবে বাড়ে এই কোলেস্টেরল :
ধূমপান, শরীরচর্চার অভাব, বয়স, অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি অসংখ্য কারণ আছে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার। খাবারের কথা বলতে গেলে এর মূল উৎস হলো প্রাণিজ উৎস থেকে আসা খাবার। যেমন- মাছ, মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদিতে থাকা ‘স্যাচারেইটেড ফ্যাট’।
বেইক করা বিভিন্ন খাবারে থাকা ‘ট্রান্স ফ্যাট’ও কোলেস্টেরল বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ডিম আর পনিরে সরাসরি কোলেস্টেরল মেলে। তবে এর উপকারিতা-অপকারিতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। খবর বিডিনিউজের
মুরগির মাংসে কোলেস্টেরল :
কোলেস্টেরলের মূল উৎস হলো লাল মাংস অর্থাৎ গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মাংস। যেহেতু সকল প্রাণিজ খাবার কোলেস্টেরল বাড়ায়, তাই মুরগির মাংসেও এই ঝুঁকি বিদ্যমান। তবে এতে কোলেস্টেরল ও চর্বি দু’টির মাত্রা প্রাকৃতিকভাবেই অনেক কম।
মুরগির বুকের মাংসে কোলেস্টেরল সবচাইতে কম। উরু, পাখা, পা ইত্যাদিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা ক্রমেই বাড়ে। আবার এই মাংস তেলে ভেজে খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা আরও বাড়ে। তবে গ্রিল কিংবা বেইক করা মাংসে ঝুঁকি অনেক কম। মুরগির চামড়ায় প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। তাই চামড়া ছাড়া মাংস খেলে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা কমবে।
আসল কথা হলো, মুরগির মাংস রান্নার পদ্ধতিও কোলেস্টেরলের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে সেটা লাল মাংসের সঙ্গে তুলনা করলে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তাই মুরগির মাংস নির্ভয়ে খেতে পারেন।