মুজিববর্ষে গৃহহীনদের ঘর সবচেয়ে বড় উৎসব

37

মুজিববর্ষে গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর উপহার বাংলাদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬৬ হাজার ১৮৯টি গৃহহীন পরিবারের হাতে শনিবার ঘরের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, আজকে এটাই সবচেয়ে বড় উৎসব, এর চেয়ে বড় উৎসব বাংলাদেশের মানুষের হতে পারে না। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব পরিবারকে ঘরের চবি বুঝিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন ৪৯২টি উপজেলার মানুষ।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন এই মানুষগুলো এই ঘরে থাকবে তখন আমার বাবা-মার আত্মা শান্তি পাবে। লাখো শহীদের আত্মা শান্তি পাবে। কারণ এসব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তো ছিল আমার বাবার লক্ষ্য।
তিনি বলেন, খুব আকাক্সক্ষা ছিল নিজে আপনাদের হাতে জমির দলিল তুলে দিই। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জন্য হল না।
তারপরেও আমি মনে করি, দেশ ডিজিটাল হয়েছে বলেই এভাবে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমরা প্রত্যেক শ্রেণির জন্য কাজ করছি। সব মানুষকেই জন্য ঠিকানা করে দেবো, এটাই আমার লক্ষ্য।
মুজিববর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার ধারাবাহিকতায় পৌনে ৯ লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে প্রথমে ৬৬ হাজার ১৮৯টিকে ঘরের মালিকানা দেওয়া হল। খবর বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দিনে এত মানুষকে ঘর দিতে পারলাম, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যাদের গৃহ নেই তাদের ঘর করে দিতে পারা অসাধ্য সাধন করতে পারলাম, এর চেয়ে বড় পাওয়া আর হতে পারে না।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যুক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সকলের সম্মিলিত প্রয়াসেই এত বড় অসাধ্য সাধন হয়েছে।
প্রশাসনে যারা আছেন, তারা সরাসরি কাজগুলো করেছেন বলে এত দ্রæত হয়েছে। এত অল্প সময়ে এত ঘর করে দেয়া সম্ভব হয়েছে। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেছেনবিশ্বে একসাথে এত মানুষকে ঘর দেয়া নজিরবিহীন।
শেখ হাসিনার পছন্দ করা নকশায় নির্মাণ করা হয়েছে এই প্রকল্পের বাড়ি। প্রতিটি ঘরে থাকছে দুটি শয়ন কক্ষ, একটি লম্বা বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট। এসব ঘরের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পরিবারগুলোর কর্মসংস্থানেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তারা শুধু ঘর নয়, সঙ্গে পাচ্ছেন ভূমির মালিকানাও। প্রত্যেককে তার জমি ও ঘরের দলিল নিবন্ধন ও নামজারিও করে দেয়া হচ্ছে। দেশের ৫০ বছরের ইতিহাসে এর আগে এত মানুষকে এক দিনে সরকারি ঘর হস্তান্তর করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিশ্বে এর আগে এক দিনে এত বেশি ঘর বিনামূল্যে হস্তান্তর করা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আশ্রয়ণের সাথে বেদে দলিত হিজড়াদের ঘর করে করে দিয়েছি।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ কি পেয়েছিল তখন? অনেকে গালভরা কথা বলে- গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকারটা কী?
একটা মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতা দখল করে একদিন ঘোষণা দিল যে ‘আজ আমি রাষ্ট্রপতি হলাম’। তারপরই সেটা গণতন্ত্র হয়ে গেল। হ্যাঁ, অনেকগুলি রাজনৈতিক দল করার সুযোগ করে দিল, কিন্তু দুর্নীতি করা, মানি লন্ডারিং করা, ব্যাংকে ঋণ খেলাপ করা। টাকা ব্যাংক ছাপিয়ে নিয়ে এসে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ সে কথা শোনানো, এবং ‘আই ইউল মেইক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর পলিটিশিয়ান’ একথাও জিয়াউর রহমান বলে গেছে। জিয়াউর রহমানের কাজই ছিল এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা।
বিএনপির গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এদেশের মানুষকে দরিদ্র থেকে দরিদ্র রাখা আর মুষ্টিমেয় লোকদের টাকা-পয়সা দিয়ে তাদেরকে তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, মেধাবী ছেলেদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের বিপথে ঠেলে দেওয়া। নির্বাচনের নামে প্রহসন সৃষ্টি করা।
যারা গণতন্ত্রের জন্য এত কথা বলেন, তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন, এটা কী করে গণতন্ত্র? একটা দল হল, হাঁটতে-চলতেও শিখল না। ক্ষমতায় বসে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দলের সৃষ্টি, সে ক্ষমতায় আসে আর মানুষ পায় না এটা হয় কখনও? দেশের মানুষকে কিভাবে শোষণ করা যায়, অধিকার কেড়ে নেওয়া যায়, তাই চলেছে ২১ বছর। জিয়ার পরে এরশাদ এসেছে, খালেদা জিয়া এসেছে, প্রত্যেকেরই একই চরিত্র।
আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশের জনগণকে, শত প্রতিকুলতার মধ্যেও এদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিলেন।
উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন জেলায় উপকারভোগীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।
এ সময় জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলা হচ্ছে।