মুজিববর্ষের অগ্রযাত্রা শুভ হোক

142

আগামী ১৭ মার্চ বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ২০২০-২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করেছে সরকার। ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বছরব্যাপী এ উদ্যাপন। এর আগে আজ ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সামনে রেখে ‘মুজিববর্ষের’ ক্ষণ গণনা ( কাউন্ট ডাউন) শুরু হচ্ছে। এদিন দেশের ১৮টি বিশেষ স্পটসহ প্রতিটি জেলা-উপজেলায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ কাউন্ট-ডাউন-এর সূচনা করা হবে। আজ বিকাল ৩টায় এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ ঘিরে এরই মধ্যে ২৯৬টি কর্মসূচিসংবলিত একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। জাঁকজমকপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান উদযাপনে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে ইতোমধ্যে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ১০২ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি’। এ কমিটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে সভাপতি ও কবি কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে প্রধান সমন্বয়কারী করে গঠন করা হয়েছে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘ আগামী ১৭ মার্চ মুজিববর্ষ শুরু হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, দেশের বাইরে সারা পৃথিবীতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হবে। এ উদযাপনে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ থেকে শুরু করে সারা পৃথিবীকে সম্পৃক্ত করা হবে। সে অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে যান বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে ভারতে স্বল্প সময়ের যাত্রাবিরতি দিয়ে ১০ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তৎকালীন তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেই ঐতিহাসিক ঘটনাকে আরো স্মরণীয় করতে ১০ জানুয়ারিই শুরু হবে মুজিব বর্ষের ক্ষণ গণনা’।
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন শুরু হবে ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের ক্ষণ থেকেই। ওইদিন সকালে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। ঢাকা ও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় একই সঙ্গে অনুষ্ঠান শুরু হবে। ওইদিন সকালে টুঙ্গিপাড়ায় থাকবে জাতীয় শিশু দিবস নিয়ে নানা আয়োজন। এরপর বিকালে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে মূল আয়োজন, যাতে প্রকাশ করা হবে জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন স্যুভেনির, স্মারক বক্তৃতা, দেশি-বিদেশি শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজন করা হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, সড়কদ্বীপকে সাজানো হবে রঙিন সাজে। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানের মূল পর্বে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবেন। ১৮ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে, যাতে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিরা। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার দিবস ও ৭ জুন ছয়দফা দিবস উদ্যাপন নিয়ে থাকবে নানা আয়োজন। জানা গেছে, ইউনেস্কোয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে পুরস্কার প্রবর্তনসহ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে আরো পাঁচটি বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন ঘটনা ও স্থান নিয়ে ৬৪ জেলায় চিত্রায়ণপূর্বক ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে ৬৪টি অনুষ্ঠান নির্মাণ ও প্রচার করা হবে বছরব্যাপী এ উৎসবে।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মুজিববর্ষের এ বিশাল কর্মসূচি জাতিকে শুধু অনুপ্রাণিত করবে, তাই না; বরং আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
আমাদের মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় এই কথাটি মনে রাখা দরকার যে, মুজিব শুধু তাঁর সন্তানদের পিতা নন। তিনি জাতিরও পিতা। তিনি বিশেষ কোন দলের নেতা নন। তিনি সকল বাঙালি জাতির নেতা। তিনি বাংলা ও বাঙালির একান্ত আপনজন। তিনি সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা ও সোনার মানুষ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সাত কোটি বাঙালির মানুষ হতে না পারার কবিগুরুর আক্ষেপ মিথ্যা প্রমাণ করে তিনি বাঙালিকে মানুষ করতে পেরেছিলেন এবং দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ, অন্যের দ্বারা শাসিত-শোষিত বাঙালিকে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা, স্বশাসন ও শোষণমুক্তি তথা নিজের ভাগ্য নিজে গড়ার অধিকার আদায় করে দিয়ে গেছেন।
মুজিব বর্ষে আমাদের প্রত্যাশা সরকার বিগত এগারো বছর ধরে দেশের সামগ্রিক যে উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে বঙ্গন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার , সেই অগ্রগতি অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোনসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। সমাজ দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত হবে। মুজিববর্ষের এ যাত্রা শুভ হোক। সফল হোক।