মুজাফফর আহমদ চৌধুরী (১৯২২-১৯৭৮)

36

শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। নোয়াখালি জেলার বীরাহিমপুর গ্রামে ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা মৌলবী ওবায়দুল্লাহ ছিলেন বাসিকপুর মাদ্রাসার হেড মওলানা। মুজাফফর আহমদ নোয়াখালীর ফরাশগঞ্জ হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক, ফেনী কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে আই.এ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ অনার্স এবং ১৯৪৪ সালে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৬০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। মুজাফফর আহমদ ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯৫০-৫২ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬১ সালে রিডার এবং ১৯৬৯ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।
মুজাফফর আহমদ ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যা ও পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রæয়ারি আয়োজিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সভায় তিনি ২১ ফেব্রæয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণ ও ছাত্র হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সরকারের গণবিরোধী ও দমননীতির তীব্র সমালোচনা করেন। ফলে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা আইনে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক বছরেরও বেশি সময় কারাভোগের পর ১৯৫৩ সালের ৫ মে তিনি মুক্তিলাভ করেন। ১৯৫৫ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৫৬ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান গণপরিষদের শাসনতান্ত্রিক উপদেষ্টা এবং ১৯৫৬ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৫৭ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রতিনিধিরূপে দায়িত্ব পালন করেন।
মুজাফফর আহমদ ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। তিনি ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক রাওয়ালপিন্ডিতে আহূত গোলটেবিল বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের পরিকল্পনা সেলের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। মুজাফফর আহমদ চৌধুরী ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান হন। তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭৫ সালে কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগে (বাকশাল) যোগ দেন এবং কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় মুজাফফর আহমদ শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। জিয়াউর রহমান কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত হন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চাকুরিতে ফিরে যান।
মুজাফফর আহমদ লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে: ঞযব ঈরারষ ঝবৎারপব রহ চধশরংঃধহ (১৯৬৩), ঈড়হংঃরঃঁঃরড়হধষ চৎড়নষবসং রহ চধশরংঃধহ, অহ ঊীধসরহধঃরড়হ ড়ভ ঃযব ঈৎরঃরপরংসং ধমধরহংঃ ইঁৎবধঁপৎধপু (১৯৬৪), এড়াবৎহসবহঃ ধহফ চড়ষরঃরপং রহ চধশরংঃধহ (১৯৬৮), ঞযব চড়ষরঃরপধষ ঝুংঃবস ড়ভ গড়ফবৎহ ঝঃধঃবং, ঊহমষধহফ টঝঅ, ঋৎধহপব, টঝঝজ ধহফ এবৎসধহু, জঁৎধষ এড়াবৎহসবহঃ রহ ঊধংঃ চধশরংঃধহ (১৯৬৯), ঞযব ঝঢ়বপরধষরংঃ রহ এড়াবৎহসবহঃ। ১৯৭৮ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : বাংলাপিডিয়া