‘মুক্তি ভবনের’ চাবি পেলো মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছের পরিবার

62

যাঁরা দেশের তরে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে পারেননি, তাদের জন্য বাড়ি তৈরি করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এমনই একজন উত্তর কাট্টলীর মাওলানা তমিজুর রহমানে বাড়ির প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছ। গতকাল তাঁর পরিবারের কাছে তৈরি ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বাড়ির নাম রাখা হয়েছে ‘মুক্তি ভবন’। এ উপলক্ষে গতকাল দুপুরে সিটি কর্পোরেশন কনফারেন্স রুমে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলা বসে। সিটি কর্পোরেশনের এমন উদ্যোগ নিয়ে তাদের মুখে উচ্চারিত হয়েছে প্রশংসাবাণী।
জানা গেছে, চসিক ২০১৭ সালে নগরের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তাদের বসতভিটায় পাকা বাড়ি তৈরি করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়। নগরীর ৫০ জন অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার গৃহ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ১৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান নগরীর অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছ, ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন, ২৫নং রামপুর ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, ৩০ পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা নুর আহম্মদ এবং ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মুক্তিযোদ্ধা কুতুব উদ্দিনের গৃহ নির্মাণের কাজ শুরু করে চসিক। ইতোমধ্যে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছের গৃহের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাড়ে ৯শ বর্গফুট বিশিষ্ট এই ‘মুক্তি ভবন’ নির্মাণ করতে চসিকের ব্যয় হয়েছে ২৬ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। এটাই চট্টগ্রাম শহরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম ‘মুক্তি ভবন’। এতে থাকছে ২টি বেড রুম, ১টি কিচেন, ১টি ডাইনিং, ২টি টয়লেট এবং ১টি ড্র্য়নিং রুম। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামুদ্দোহার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা। তাঁরা দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। তাদের কারণেই আজ আমরা স্বাধীনভাবে চলার ও কথা বলার অধিকার লাভ করেছি। এদেশের মাটিতে নিজেদের বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছি। জাতির সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঋণ অবশ্যই শোধ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নগরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদেরও ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফ্ফর আহমদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সিটি মেয়রের কাছ থেকে মুক্তি ভবন পেয়ে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াছের পরিবারের সদস্যরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মরহুমের পুত্র হুমায়ন মোহাম্মদ বাবর আবেগী কন্ঠে বলেন, ৪ বছর আগে আমার পিতা মারা যান। মুত্যুকালে তিনি ২ গÐার চেয়ে কম বসত ভিটে রেখে যান। এই ভিটার উপর একটি বেড়ার ঘর ছিল। সেখানে আমি আমার মা ও বোন কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রস্তাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এই মুক্তি ভবন নির্মাণ করে দিয়েছে। এজন্য চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নিকট আমাদের পরিবার কৃতজ্ঞ।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চসিক প্যানেল মেয়র ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু, মো. জহুরুল আলম জসিম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবিদা আজাদ, সচিব আবু সাহেদ চৌধুরীসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মহানগর ইউনিট কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি কমান্ডার শহীদুল হক সৈয়দ, সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, খোরশেদ আলম (যুদ্ধাহত), এফ এফ আকবর খান, কোতোয়ালী থানা কমান্ডার সৌরিন্দ্রনাথ সেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষী কাজী নুরুল আবছার, আকবর শাহ থানা কমান্ডার মো. সেলিমউল্লাহ, পাহাড়তলী থানা কমান্ডার হাজী জাফর আহামদ, খুলশী থানা কমান্ডার মো. ইউসুপ, বন্দর থানা কমান্ডার কামরুল আলম পতু, বাকলিয়া থানা কমান্ডার মো. আলী হোসেন, সদরঘাট থানা কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর আলম, কোতোয়ালী ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম, আকবর শাহ ডেপুটি কমান্ডার মো. নূর উদ্দীন, হালিশহর ডেপুটি কমান্ডার মো. আবুল কাশেম, খুলশী ডেপুটি কমান্ডার মো. লিয়াকত হোসেন, পতেঙ্গা ডেপুটি কমান্ডার মো. আবুল কালাম, নৌ কমান্ডো এ এইচ জিলানী চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুল হায়দার, মো. আবদুচ ছবুর, খুরশিদ আলম, প্রণাল চৌধুরী, নুরু নবী, শম্ভু দাশ, সৈয়দ আহামদ, আবদু ছবুর, মো. আলাউদ্দীন, আবদুচ সালাম, আবদুচ সবুর প্রমুখ ।