মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন ন্যক্কারজনক সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

74

দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত। ১৯৭১ সালে যে সকল বীর-বাঙালি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মুক্তিযুদ্ধে জীবনবাজি রেখে যাঁরা এদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদয়ে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের সম্মান করা এ জাতির দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ সকল সূর্য সন্তানদেরকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে সরকার ও প্রশাসনকে। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তাঁদের সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে একটি মাত্র প্রধান পরিচয়, তা হলো তাঁরা ‘মুক্তিযোদ্ধা’। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক’ মন্ত্রণালয়। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে শুরু করে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণে বহু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদার প্রাপ্যতা সমগ্র জাতির কাছে অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এমতাবস্থায় কোন মুক্তিযোদ্ধার প্রয়াণের পর তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করা, অবমাননা করার শামিল।
দেশের প্রায় সবক’টি দৈনিক পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানা গেছে চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকার কারণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যক্কারজনক হত্যাকাÐের প্রথম প্রতিবাদকারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করায় এলাকায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে। উপজেলা প্রশাসন রহস্যজনকভাবে এ বিষয়ে নিরব ছিল। কি কারণে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়নি তা স্পষ্ট হবার পর এলাকায় এবং সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা এ ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। উক্ত মানববন্ধনে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর পক্ষের লোকেরা ন্যক্কারজনক হামলা করে অনেককে আহত করে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ সারাদেশে চলছে।
যে দলের হাত ধরে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সে দলের শাসন আমলে, সে দলের এমপির এলাকায় একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁর পরিবারকে অসম্মান প্রদর্শনের সাহস সংশ্লিষ্টদের কি করে হলো তা আমাদের বুঝে আসে না। বিষয়টি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীসহ সমগ্র দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে।
মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের সম্মানের পাত্র। তাঁদের অবর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও জাতির কাছে সম্মানের দাবিদার। এসব বিষয়কে পাশ কাটিয়ে যে বা যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে অসম্মান করছে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা সরকার ও প্রশাসনের কর্তব্য। তাছাড়া মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করার প্রতিবাদকারী যে সকল সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের হয়েছে তা প্রত্যাহার করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা জরুরি বলে মনে করে, বাঁশখালীর সর্বস্তরের জনতা, দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। দেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে এ দেশ স্বাধীন করেছে, তাঁদের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার সাহস যেন এ দেশের কেউ না করে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।