মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অপমান ও হামলার ঘটনার বিচার নিশ্চিত ও দ্রুত করতে হবে

57

চট্টগ্রাম জেলার সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রান্তিক জনপদ বাঁশখালী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বাঁশখালী ঐতিহ্যগত ও ঐতিহাসিক নানা স্থাপত্য, ঘটনা ও ব্যক্তিক পরিচয় রয়েছে দেশব্যাপী। দেশের শিক্ষা, সাহিত্য, সাংস্কৃতি ও শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে এ জনপদের বড় একটি অংশ ব্যাপক অবদান রেখে আসছে। এছাড়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে এ প্রান্তিক জনপদের অসংখ্য লোক আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন। সর্বোপরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলে সর্বপ্রথম এ বাঁশখালীর দুঃসাহসী অগ্নিগর্ব সন্তান মৌলভী সৈয়দ প্রতিবাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ প্রজ্জলিত করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য স্বাধীনতার ৪৯ পঞ্চাশ বছর পর বঙ্গবন্ধুর লালিত সংগঠন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হয়ে সেই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তথাপি বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী সৈয়দের পরিবারের প্রতি অপমানজনক আচরণ করা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার লক্ষে বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি বলে মিথ্যাচার করার মত নানা কাহিনীর অবতারনা করা সত্যিই দুঃখজনক। ঘটনা এখানেই শেষ হলেই হয়ত আর বেশিদূর এগুনোর সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু ক্ষমতার দর্প এতো বেশি বেড়ে গেলো, বাঁশখালীর নিন্দনীয় ঘটনার প্রতিবাদ যখন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের সন্তান ও সাংবাদিকদের উপর নির্বিচারে হামলা করা হয়। এ ঘটনায় প্রবীন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সর্বশেষ এ ঘটনা আমাদের বাকরূদ্ধ করে। এ বর্বর ঘটনা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। চট্টগ্রামসহ দেশ-বিদেশের সবর্ত্র এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আমরাও তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। একইসাথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পূর্বাপর সকল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষকরে, বর্তমান স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি যেখানে ক্ষমতায় এবং যাদের দৃঢ় নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা একটি সন্মানজনক অবস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছে সেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার চির বিদায়ে রাষ্ট্রীয় সন্মান প্রদর্শন না করা ঘটনার পরম্পরায় নানা কটুক্তি ও মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে নিঃসন্দেহে। এখন ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণকারী এ জনপ্রতিনিধি ও তার লেলিয়ে দেয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেন সরকার-তা দেখার বিষয়। তবে আশার কথা, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন। সর্বশেষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও অপরাধী যেই হোক মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এর আগে ২৮ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসককে ফোন করে মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফকে কেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়নি-এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। উল্লেখ্য যে, গত ২৮ জুলাই বাঁশখালীর মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ডা. আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না করার সংবাদটি গুরুত্বসহকারে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর দেশব্যাপী প্রতিবাদ শুরু হয়। ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আয়োজনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জনৈক সেলিমুল হকের নেতৃত্বে সমাবেশে হামলা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। সেলিম বাঁশখালী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তবে তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে হামলাকারীদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেন এবং একজনকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা হয়।
আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে কথাটি বলেছেন তা হুহু তুলে ধরে তাঁর অভিব্যক্তির বাস্তবায়র ঘটবে- এমনটি আশা করি। ‘পাকিস্তানি শাসন-শোষণের কবল থেকে এ দেশকে মুক্ত করতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, দেশ স্বাধীন করেছেন। স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাতি লাল-সবুজের একটি পতাকা পেয়েছে। কিন্তু একটি কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে এ দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত করা হয়। ’৭৫ পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের উপর অনেক অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক ও জনবান্ধব সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না’।