মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় স্মৃতিসৌধ-শহীদ মিনার

133

মুক্তিযুুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। আরো কয়েকটি স্থানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক বাহিনী। এসব স্থানকে স্মৃতিময় করে রাখতে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করছে জেলা পরিষদ। গত কয়েক বছর ধরে যুদ্ধকালীন স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাগুলো সংরক্ষণ করার ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থ বছরেও আরো ২৩টি স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করতে যাচ্ছে পরিষদ। দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে এ অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই যুদ্ধকালীন স্মৃতিকে নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছি। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার রক্ষাসহ যুদ্ধকালীন স্মৃতিময় স্থানগুলো সংরক্ষণ করে আসছি। বেশ কয়েকটি প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। আরো কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে।’
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, মিরসরাইয়ে স্মৃতিসৌধের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নে নতুন নকশা তৈরি, সীতাকুন্ডে আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, সন্দ্বীপে কার্গিল সামাজিক সংগঠন সংলগ্ন এলাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ, হাটহাজারীতে ফতেয়াবাদ আহমদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, ফটিকছড়িতে দাঁতমারা এবি জেড উচ্চ বিদ্যালয়ে ও খিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, নানুপুর বিনাজুরীতে হত্যাযজ্ঞের স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, রাউজানে বিনাজুরী সোনাইমুখ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার, রাঙামাটি সড়কে গোধারপাড় এলাকায় পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পন স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, ইয়াছিন নগর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, পোমরা ফরেস্ট্রি অফিসের পেছনে বধ্যভূমির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত, বোয়ালখালী সৈয়দপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, চন্দনাইশ পৌরসভা সদরে শাহ আমিন পার্কে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, আনোয়ারা উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, বাঁশখালীর জলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, পূর্ব বড়ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, পৌরসভা শিশু নিকতন ক্যাম্পাসে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের অসমাপ্ত অংশের কাজ, সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম সিনিয়র আলিয়া মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নির্মাণ, গাটিয়াডাঙ্গা আল-মেহেদী আবুল বশর একাডেমিতে শহীদ মিনার নির্মাণ, উত্তর জনার কেওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, পশ্চিম কাটগড় (শহীদ ইউনুচ) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, ঠাকুরদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে ২৩টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তাবায়িত হলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার পাশাপাশি নতুন প্রজম্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে এক ধরনের বার্তা পৌঁছাবে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘কয়েকটি উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার করা হয়েছে। আবার নতুন করে কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগে এক ধরনের নকশায় আমরা এগুলো নির্মাণ করেছিলাম। এবারের স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারগুলো দৃষ্টিনন্দন নকশায় নির্মাণ করতে বাজেট বাড়ানো হয়েছে। যুদ্ধের অবস্থান অনুসারেই নকশা বানানো হচ্ছে। নতুন নির্মাণ করতে যাওয়া স্মৃতিসৌধগুলো সম্মুখযুদ্ধ ও বধ্যভূমির ক্ষেত্র বিবেচনায় নিয়ে নকশা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।’