মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ করুন

71

নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলার শুনানির গতকাল মঙ্গলবার প্রথম দিন শেষ হয়েছে। প্রথম দিনে গাম্বিয়া তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছে। গাম্বিয়া মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চলতে থাকা গণহত্যা বন্ধে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকদেরকে ব্যবস্থা গ্রহণের আহব্বান জানিয়েছে।
এ সপ্তাহে ১৭ জন বিচারকের প্যানেলের সামনে আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় গণহত্যার মূল অভিযোগটি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। তবে গাম্বিয়া বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বাড়ার মতো কোনোরকম কর্মকান্ড বন্ধ করতে মিয়ানমারের জন্য আদালতকে একটি নির্দেশনামা ইস্যু করার অনুরোধ জানিয়েছে।
গাম্বিয়া যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, মিয়ানমার ২০১৭ সালের অগাস্ট থেকে শুদ্ধি অভিযানের নামে ধারাবাহিকভাবে এবং ব্যাপকভাবে নৃশংসতা চালিয়ে গেছে, যেটি গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে। গাম্বিয়ার আইনজীবীরা মিয়ানমারে ব্যাপক ধর্ষণ, হত্যা এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া এবং রোহিঙ্গা শিশু হত্যার বিবরণ আদালতে তুলে ধরেছে। শুনানির শুরুতে বক্তৃতায় গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেন, আমরা কেবল রোহিঙ্গাদের অধিকারের সুরক্ষাই চাই না বরং গণহত্যা কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে মিয়ানমারকে গণহত্যা না চালাতে বাধ্য করে নিজেদের অধিকারও অক্ষুন্ন রাখতে চাই। খবর বার্তা সংস্থার
গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু বলেন, গাম্বিয়া আপনাদের যা বলতে চায় তা হলো, আপনারা মিয়ানমারকে কান্ডজ্ঞানহীন হত্যাকান্ড বন্ধ করতে বলুন।
তিনি আরও বলেন, তাদের বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতায় আমরা স্তম্ভিত, এটি আমাদের বিবেককে প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমরা চাই তারা নিজ দেশে গণহত্যা বন্ধ করুক।
শুনানিতে মিয়ানমারকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অং সান সুচি। অন্যদিকে গাম্বিয়ার নেতৃত্বে রয়েছেন দেশটির আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু।
শুনানিতে আদালতের নির্দিষ্ট ১৫ জন বিচারকের পাশাপাশি আরও দুজন এডহক বিচারপতি অংশ নিয়েছেন। গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে নাভি পিল্লাই এবং মিয়ানমারের পক্ষ থেকে প্রফেসর ক্লাউস ক্রেস এডহক বিচারপতি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী শুনানির শুরুতেই তাদের দুজন শপথ নেন। তিন দিনের শুনানি শেষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল তথ্য উপাত্ত নিয়ে শুনানিতে উপস্থিত হয়েছে। প্রতিনিধিদলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিও রয়েছেন।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে সাত লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর এই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করে। মানবাধিকার গ্রূপগুলো একে গণহত্যা বলে বর্ণনা করে।
গত মাসে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’র (ওআইসি) পক্ষে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে চালানো গণহত্যার ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে গাম্বিয়া। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে আইসিজে আয়োজিত শুনানির প্রথম দিনে মঙ্গলবার গাম্বিয়া যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। আজ মিয়ানমার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। আগামীকাল শুনানির শেষ দিনে প্রথমে গাম্বিয়া এবং পরে মিয়ানমার যুক্তিখন্ডন করবে।
আদালতে পাথরের মতো মুখ করে বসে ছিলেন সু চি : মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে শুনানির প্রথম দিনে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সামরিক বাহিনীর একের পর এক নৃশংসতার ঘটনা তুলে ধরা হচ্ছিল তখন সেখানে পাথরের মত মুখ করে বসে ছিলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি।
এসব অভিযোগের জবাব দেয়ার জন্য মিয়ানমার যে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে ফার্স্ট মিনিস্টার মিজ সু চি নিজেই তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দ্য হেগ শহরের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গ্যাম্বিয়া।
১৫ সদস্যের আদালত : এই আদালতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট হলেন সোমালিয়ার বিচারপতি আবদুলকোয়াই আহমেদ ইউসুফ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট চীনের বিচারপতি ঝু হানকিন। বিচারকদের নির্বাচন করেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদ। অন্য সদস্যরা হলেন, স্লোভাকিয়ার বিচারপতি পিটার টমকা, ফ্রান্সের বিচারপতি রনি আব্রাহাম, মরক্কোর মোহাম্মদ বেনুনা, ব্রাজিলের অ্যান্টোনিও অগাস্টো কানকাডো ত্রিনাদে, যুক্তরাষ্ট্রের জোয়ান ই ডনোহু, ইতালির গর্জিও গাজা, উগান্ডার জুলিয়া সেবুটিন্দে, ভারতের দলভির ভান্ডারি, জ্যামাইকার প্যাট্রিক লিপটন রবিনসন, অস্ট্রেলিয়ার রির্চাড ক্রর্ফোড, রাশিয়ার কিরিল গিভরগিয়ান, লেবাননের নওয়াফ সালাম এবং জাপানের ইউজি ইওয়াসাওয়া।