মিয়ানমারে যুদ্ধাপরাধের নতুন অভিযোগ জাতিসংঘের

19

মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অস্থিতিশীল প্রদেশগুলোর বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘন করে নতুন যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের এক তদন্ত কর্মকর্তা। গত মঙ্গলবার মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে মিয়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ইয়াঙ্গি লি এ অভিযোগ করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এক সাঁড়াশি অভিযানে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত টপকে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ‘গণহত্যার উদ্দেশ্যে’ মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ওই অভিযানে ব্যাপক খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ করে বলে পরে জাতিসংঘের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছিলেন।
ইয়াঙ্গুনের সরকার এসব বর্বরতার অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবেই ওই অভিযান চালানো হয়েছিল।
বিধ্বস্ত রাখাইন ও চিন প্রদেশে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে এখনো জাতিগত বিদ্রোহীদের লড়াই অব্যাহত আছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি প্রদেশ দু’টির বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে।
এরই মধ্যে মিয়ানমারের যাতায়াত ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গত ২২ জুন রাখাইন ও চিন প্রদেশের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে টেলিকম কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয়। ‘শান্তি বিঘ্ন এবং অবৈধ কর্মকান্ডের সমন্বয়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার’ রুখতে মন্ত্রণালয় ওই নির্দেশ দেয় বলে জানিয়েছে টেলিনর গ্রুপ। খবর বিডিনিউজের
রাখাইন ও চিনে মোবাইল ফোন ‘বø্যাক আউটের’ মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সম্ভবত বড় ধরনের কোনো মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গত সপ্তাহে আশঙ্কার কথা বলেছিলেন লি। মঙ্গলবার তিনি ওই আশঙ্কার বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে হাজির করেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন প্রদেশের উত্তরে ও দক্ষিণাঞ্চলীয় চিন প্রদেশের একাংশে আরাকান আর্মির সঙ্গে (সেনাবাহিনীর) যে সংঘর্ষ গত কয়েক মাস ধরে চলছে, তা বেসামরিকদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে। তাতমাদাও (মিয়ানমার সেনাবাহিনী) ও আরাকান আর্মির অনেক কাজই মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করেছে; মানবাধিকার লংঘনের পাশাপাশি সম্ভবত এগুলো যুদ্ধাপরাধের মাত্রাও ছুঁয়েছে’।
পালেতোয়ার ১২ নির্মাণশ্রমিক এবং বাংলাদেশ সীমান্তের কাছ থেকে ৫২ গ্রামবাসীসহ অনেক বেসামরিক লোককে আরাকান আর্মি অপহরণ করেছে বলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে জানান লি। অন্যদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাসাজশ আছে এমন সন্দেহে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও রাখাইনের অসংখ্য বাসিন্দাকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আটক অনেকে নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে মারা গেছে বলেও দাবি তার।
এপ্রিলে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাঁশ সংগ্রহ ব্যস্ত রোহিঙ্গাদের ওপর গুলি ছুড়েছিল বলেও জানান জাতিসংঘের এ বিশেষজ্ঞ। চলতি বছর সহিংসতার কারণে ৩৫ হাজারের মতো লোক পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কিয়াও মোয়ে তুন বলেছেন, তার দেশের সরকার আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে এবং সংকট সমাধানে চেষ্টা করছে।