মিয়ানমারে কারাভোগ শেষে ফিরলেন ২৪ বাংলাদেশি

9

কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা এক নারীসহ ২৪ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। মিয়ানমারের মংডুতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে টেকনাফ ২ বিজিবি এবং মিয়ানমার ৪ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের মধ্যে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়। টেকনাফে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি এ তথ্য জানায়। ফেরত আসা বাংলাদেশিরা দুই থেকে সাড়ে পাঁচ বছর মিয়ানমার কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে জানান তারা। তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফনদী, সাগরে মাছ শিকার এবং সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে সেদেশের আইশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করে।
বিজিবি জানায়, মিয়ানমারের সামরিক সরকার গঠনের পর প্রথম বারের মতো মংডুতে গতকাল বেলা ১১টায় ২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল এবং মিয়ানমারের মংডুর ৪ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জু লিন অং নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়ে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটের জেটি ঘাটে পৌঁছায়। এ সময় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিক্যাল টিম ফেরত আসা বাংলাদেশিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। পরে দুপুর দেড়টার দিকে জেটি ঘাটে ২ অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মো. রুবায়াৎ কবীর, অপারেশন অফিসার লে. মুহতাসিম শাকিল, এডিসি নাজমুল হুদা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান জানান, বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৪ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা মালয়েশিয়া ও সাগরে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমারের হাতে আটক হয়েছিল। তাদের সাজাভোগ শেষে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়।
তিনি বলেন, সে দেশের কারাগারে আরও বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। তাদের উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কোয়ারেন্টিন শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এখান থেকে সাগরপথে কেউ যাতে অবৈধভাবে যাত্রা করতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
সবচেয়ে বেশি সাজা ভোগ করে ফেরত আসা রহমত উল্লাহ ও মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সাড়ে পাঁচ বছর মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগ করেছি। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে সাজা দেওয়া হয়। সেদেশে কারাগারে অনেক কষ্ট। তারা টিকমতো খাবার দিতেন না। কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশি কষ্টে দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি। অবশেষে সরকারের চেষ্টায় স্বদেশে ফেরত আসতে পেরেছি, এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।