মিষ্টি বৃষ্টি

235

নীতু অনেক চিন্তা ভাবনা করেও নীল পরীর রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এখনও সে বুঝতে পারছে না, সত্যি সত্যিই কি সেদিন নীল পরী এসেছিল নাকি, সে নিছক স্বপ্ন দেখেছিল। খুব ইচ্ছে ছিল ওর আব্বু ও আম্মুকে নীলপরীর পুরো গল্পটা বলবে। কিন্তু তারা বিশ্বাস করবে না ভেবে আর বলা হয়নি। সেই আগের মতোই নীতুর নিঃসঙ্গ সময় কাটতে লাগলো। ওর আব্বু ও আম্মু সারাদিন অফিসেই থাকে ব্যস্ত আর বাসায় ফিরেও নীতুকে সময় দেওয়ার মতো খুব বেশি সময় তাদের নেই। উনারা শুধু নীতুকে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে বলে। পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি মার্কস নিয়ে ক্লাসে প্রথম স্থানটি ধরে রাখতে সব সময় মানসিক চাপে রাখে। যদিও নীতু লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী এবং বরাবরই ক্লাসে প্রথম স্থানটি ধরে রেখেছে। তবে এসব নীতুর মোটেও ভালো লাগে না। সে চায় তার আব্বু ও আম্মু নীতুকে সময় দিবে, গল্প শোনাবে, খেলা করবে এবং পড়ার সময় পড়াবে। কিন্তু এসবের কিছুই যে হয় না। এ নিয়ে নীতুর মনে রাজ্যের অভিযোগ থাকলেও কখনো সেটা প্রকাশ করে না। খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে, মনের ভেতর কষ্ট চেপে রাখতে পারে।
একদিন স্কুল থেকে বাসায় ফিরে যথারীতি দুপুরের লাঞ্চ করে স্কুলের হোমওয়ার্ক সেরে বিছানায় শুতে গেল। তখন বাইরে বৃষ্টি পড়ছে আর নীতু জানালা দিয়ে দেখছে। নীতুর খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজবে। কিন্তু সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। গৃহপরিচালিকা রহিমা খালা কোনভাবেই রাজি হবে না। তাই তার ভীষণ মন খারাপ।
ইদানিং অসহ্য রকমের গরম। সূর্যি মামা যেন রেগেমেগে আগুন হয়ে আছে। আর রাগ করবেই না কেন, চারপাশে যেভাবে বৃক্ষ নিধন হচ্ছে, এতে প্রকৃতির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে শুধু উঁচু উঁচু বিল্ডিং কিন্তু গাছপালা খুব একটা দেখা যায় না। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই জানালার গ্রিলে বসা সেদিনের সেই নীল পরীকে দেখতে পেল। নীল পরীকে দেখে নীতু আজকে আর ভয় পেল না। সে নীল পরীকে ডাক দিল, রুমের ভেতরে এসো বন্ধু। নীল পরী রুমে ঢুকে নীতুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো, কেমন আছো নীতু? সে তখন বিছানা ছেড়ে উঠে নীল পরীকে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি তোমাকে দেখে এখন খুব ভালো আছি। এতোদিন তুমি কোথায় ছিলে? তখন নীল পরী জানালো, তোমাদের এখানে তেমন গাছপালা নেই, সুন্দর ফুলের বাগান নেই, তাই খুব কম আসা হয়।
তখন নীতু মন খারাপ করে বললো, তোমার কথাটা একদম সত্যি। আমাদের এখানে শুধু উঁচু উঁচু বিল্ডিং আছে, সুন্দর প্রকৃতি নেই। নীল পরী নীতুকে বললো, মন খারাপ করো না। তোমার মন ভালো করতেই আজ এলাম। নীতু তখন খুব খুশি হয়ে বললো, সত্যি সত্যিই কি আমার মন ভালো করতেই তুমি এসেছো? নীল পরী বললো, হ্যাঁ, তুমি আমার বন্ধু না, তাই বন্ধুর মন খারাপে আমাকে তো আসতেই হবে। নীল পরীর কথায় নীতুর চোখের কোণে পানি এসে গেছে। নীল পরী নীতুর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, তুমি কি বৃষ্টিতে ভিজতে চাও? তখন নীতু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, তুমি কিভাবে জানলে, আমি যে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই? নীল পরী বললো, যদি তোমার মনের কথা বুঝতে না পারি, তবে আমি কেমন বন্ধু? চলো তাহলে দুজনে মিলে বৃষ্টিতে ভিজি। এই বলেই নীল পরী নীতুকে সঙ্গে করে উড়তে উড়তে সেই অপূর্ব সুন্দর বাগানটায় নিয়ে গেল।
সেখানে গিয়ে নীতু দেখে বাগানের গাছে গাছে নানা রকমের ফুল ও ফল ধরে আছে। বাগানটা দেখতে আগের চেয়েও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। নীল পরী নীতুকে বললো, তুমি কি ফল খেতে চাও, আমি এক্ষুনি এনে দিচ্ছি। এখানে অনেক মিষ্টি মিষ্টি ফল আছে। নীতু তখন আক্ষেপ করে বললো, আমি তো ফল খেতে চাইনি। আমার কাছে এখন বৃষ্টির চেয়ে মিষ্টি আর কিছুই হবে না কিন্তু এখানে যে বৃষ্টি নেই। নীল পরী তার যাদুর কাঠি ওপরের দিকে তুলে বললো, আয়রে আয় বৃষ্টি, লাগে যেন মিষ্টি। নীতুকে অবাক করে সাথে সাথেই বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে গেল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বৃষ্টির পানির স্বাদ ছিল মধুর মতো মিষ্টি। নীতু বৃষ্টিতে ভেজার সময় আকাশের দিকে তাকিয়ে হা করে বৃষ্টির মিষ্টি পানি খেতে লাগলো।
বেশ কিছু সময় দুজনেই মনের আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার। দুজনেই বৃষ্টিতে ভিজে দুরন্ত বালিকার মতো অনেক খেলা করেছ। এক সময় নীতুর শরীরে ঠান্ডা লেগে যায়। তখন নীল পরী নীতুকে সঙ্গে নিয়ে উড়তে উড়তে আবার তার রুমের বিছানায় শুয়ে রেখে বিদায় নিয়ে চলে যায়। নীতু বেশ ক্লান্ত ছিল, তাই ঘুমিয়ে পড়ে। যখন ঘুম ভাঙে, দেখে ওর আম্মু তার পাশে বসে আছে। তিনি তখন বলছেন, তুমি বিছানা থেকে একদম উঠবে না। তোমার শরীরে বেশ জ্বর এসেছে। নীতু তখন মনে মনে বলছে, জ্বর তো আসবেই। আজ যে ইচ্ছে মতো মিষ্টির বৃষ্টিতে ভিজেছি। পরক্ষণেই নীতু আবারও ভাবতে লাগলো, সত্যি সত্যিই কি নীল পরী এসেছিল, নাকি নিছক স্বপ্ন দেখে ছিলাম। ভাবতে ভাবতেই নীতু বেশ জোরালোভাবে দুই তিনটা হাঁচি-কাশি দিয়ে বসলো। মনে হচ্ছে জ্বরের পাশাপাশি সর্দি-কাশি এসেও ভর করেছে। নীতুর এবার মনে হচ্ছে, স্বপ্ন নয় হয়তো সত্যি সত্যিই নীল পরী এসেছিল।