মিত্রবাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধ

136

ক্রমান্বয়ে সীমান্ত-সংঘাত আরো তীব্র হয়ে ওঠে। পাকিস্তান অভিযোগ করেছিল যে, সাতটি স্থানে ভারত যুদ্ধের ফ্রন্ট খুলেছে এবং তাদের প্রতিরক্ষা ব্যূহে আঘাত হেনেছে। ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই ত্রিমুখী যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই প্রবল হয়ে উঠতে থাকে। এসব দেখেশুনে ভারত সরকার বুঝেছিল, পাকিস্তান যুদ্ধ করবেই। ভারত তখন যে রাজনৈতিক সমাধানের চেষ্টা বা আশা একেবারে ছেড়ে দিয়েছে, তা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে ভারত সামরিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছিল। পশ্চিমের প্রস্তুতি দেখে এবং নাশকতামূলক কাজের লোক ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত মোটামুটি পরিষ্কার বুঝে ফেলে পাকিস্তান রাজনৈতিক সমাধানের দিকে যাবে না, বরং লড়াই-ই করবে। তখন থেকে ক্রমেই ভারতের প্রস্তুতিও জোরদার হচ্ছিল। পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার লক্ষ্যে অবিলম্বে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে ভারত আক্রমণ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রতি আবেদন জানান। অন্যদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কংগ্রেসের কর্মিসভায় বলেন, সময় বদলে গেছে, তিন-চার হাজার মাইল দূর থেকে বর্ণের প্রাধান্য দিয়ে তাদের (পাকিস্তান) ইচ্ছামতো হুকুমনামা জানাবেন, তা মেনে নেয়া যায় না। ভারত তার নেটিভ রাজ্য নয়। আজ আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য দেশের সর্বোচ্চ প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করব, ওই সব বৃহৎ দেশগুলোর ইচ্ছানুযায়ী নয়। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আহব্বান জানান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেই লাখ লাখ বাঙালি স্বদেশে ফিরে গিয়ে শান্তিপূর্ণ জীবন-যাপন করতে পারবে১৯৭১ সালের ০৩ ডিসেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। এইদিন মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্বের ইতিহাস শুরু হয় এবং মুক্তি সংগ্রাম নতুন মাত্রা পায় । মুক্তিবাহিনীর সর্বাত্মক হামলায় পাকিস্তানি হানাদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের বেশে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তারা একের পর এক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে পাক সেনাদের ফাঁদে ফেলেন। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। মিত্রবাহিনীর সাথে সম্মিলিতভাবে সম্মুখযুদ্ধে এগিয়ে যায় বীর বাঙ্গালী। কুমিল্লায় মেজর আইনউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মিয়াবাজারে পাকসেনাদের ওপর হামলা চালায়। ভারতীয় আর্টিলারি বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা মিয়াবাজার দখল করে নেন। আখাউড়ার আজমপুর স্টেশনে দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দিনভর যুদ্ধ চালিয়ে যায়। সিলেটের ভানুগাছায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। নোয়াখালীতে সুবেদার মেজর লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল সোনাইমুড়ি মুক্ত করে। এরপর তারা চৌমুহনীতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। মেজর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী মাইজদীতে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালায়। রংপুরের পলাশবাড়ীতে ১২ জন পাকসেনা আত্মসমর্পণ করে। সাতক্ষীরা থেকে পিছু হটে দৌলতপুরের দিকে যায় পাকবাহিনী। পাকিস্তান এয়ারলাইন্স পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সব ফ্লাইট বাতিল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঢাকায় সান্ধ্য আইন জারি ও নিষ্প্রদীপ ব্যবস্থা পালনের নির্দেশ দেয়। এদিন ১১নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনী কামালপুর বিওপি আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। জুমার নামাজের পর ভারতীয় হামলার প্রতিবাদে একটি মিছিল চট্টগ্রাম শহর প্রদক্ষিণ করে লালদীঘি ময়দানে জড়ো হয়। জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আল-মাদানীর সভাপতিত্বে এ সভায় বক্তব্য রাখেন কনভেনশন লীগ প্রধান ফজলুল কাদের চৌধুরী, পিডিপির মাহমুদুন্নবী চৌধুরী, ছাত্রনেতা আবু তাহের প্রমুখ। এইদিন বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার এক জনসভায় ভাষণদানকালে পাকিস্তান বিমানবাহিনী পৌনে ছয়টার সময় ভারতের বিমানবাহিনীর স্থাপনা সমূহ ও রাডার স্টেশনসহ অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, যোধপুর ও আগ্রার বিমানবন্দরগুলোতে আকস্মিক বোমাবর্ষণ করে সর্বাত্মক যুদ্ধের সূচনা করে। কলকাতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ঠিক তখনই খবর এল : পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করেছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, আগ্রাসহ সব জায়গায়। বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন ইন্দিরা গান্ধী। চিফ সেক্রেটারি নির্মল সেন গুপ্ত একটা টেলেক্স হতে দাঁড়িয়ে আছেন। টেলেক্সটা হাতে নিয়ে গম্ভীরভাবে চোখ বুলালেন তিনি। সভা আর অগ্রসর হলো না। ইন্দিরা গান্ধী ব্রিগেড প্যারেড ময়দানের সভা সংক্ষিপ্ত করে সন্ধ্যায় দিল্লী রওয়ানা হন। এয়ারপোর্টে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করলেন আপনি তো কিছুই বললেন না, পাকিস্তান ভারত অ্যাটাক করেছে। এরাব সব এরাব সব ঃGive me Give me three hours time and wait for the Radio announcement বলেই ঘট ঘট করে প্লেনে উঠে গেলেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনার প্রাক্কালে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে যুদ্ধ ঘোষইা বিলম্বিত করবার জন্য অনুরোধ করা হয়। কারই তাকে বলা হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঢাকা এবং চট্টগ্রাম আক্রমন করবে এবং ভারত, পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অপ্রস্তুত অবস্থার পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে ভারতের যুদ্ধ ঘোষণা। এ ব্যাপারে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল প্রতাপ চন্দ্র লাল ভুমিকা পালন করেন । ভারতীয় বিমান বাহিনী কর্তৃক ইতোপূর্বে মুক্তিবাহিনীকে প্রদত্ত অটার এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার এবং ডাকোটা বিমান দিয়ে ভারতের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর বিমান ঘাঁটিতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গঠিত হয় । ডাকোটা বিমান যেটা ছিলো যোধপুরের মহারাজার ব্যক্তিগত বিমান। বিমানটি তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ মুক্তিফৌজকে উপহার দেন। দ্বিতীয় বিমানটি ছিলো কানাডীয় অটার বিমান, তৃতীয় বিমানটি ছিলো ফরাসী হেলিকপ্টার নাম-এলুয়েট ৩। এই দুইটি বিমান ভারতীয় বিমানবাহিনী বাংলাদেশ মুক্তিফৌজের বিমানসেনা ইউনিটকে উপহার দিয়েছিল। এই বিমানগুলো নিয়েই স্বয়ংসম্পূর্নভাবে মুক্তিফৌজের নিজস্ব পাইলট ও টেকনিশিয়ানদের নিয়ে গঠিত বিমান বাহিনী দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ গ্রহন করে। সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিফৌজের ক্ষুদ্র এই বিমান বাহিনী পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে মধ্যরাত ১২:০১ মিনিটে ঢাকার নারায়নগঞ্জের গোদনাইলে এবং ১২:১০ মিনিটে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় গুপ্তখালি এলাকার বিমানের তৈল সংরক্ষণাগারে আকস্মিক আক্রমণের মাধ্যমে মধ্যরাতে বিমান যুদ্ধের সূচনা করে। এ আক্রমণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঐতিহাসিক অধ্যায়ে পদার্পন করেন এবং পাক বাহিনীর মারাত্বক ক্ষতি সাধনে সক্ষম হয়। পুনরায় ওই দুটি ডিপোতে আঘাত করার জন্য একই সময়ে দুই ভাগে আক্রমণ চালানো হয়। ভারতের কৈলাশহর থেকে অটার বিমানটি আক্রমণ করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার ডিপোতে এবং ভারতের তেলিয়ামুরা থেকে অ্যালুয়েট হেলিকপ্টার আক্রমণ চালায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ডিপোতে। অটার বিমানটি সমুদ্র বরাবর পথ ধরে পতেঙ্গার তেলের ডিপোর কাছে এসে বোমা হামলা করে। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম ও ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ এ অভিযান পরিচালনা করেন। বোমা হামলার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে পতেঙ্গা ডিপোতে আগুন জ্বলে ওঠে। এদিকে স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদ ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট বদরুল আলম হামলা চালান অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারটি নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে পৌঁছেই তেলের ট্যাংকারের ওপর বোমা নিক্ষেপ করেন তাঁরা। মুহুর্তের মধ্যে ট্যাংকারগুলো বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এবং মধ্যরাত ১২:২০ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। রাতে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে ভাষণে তিনি বলেন, পাকিস্তান আজ ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে। তিনি দেশবাসীকে চরম ত্যাগ স্বীকারের জন্য তৈরি হবার আহŸান জানান। আজ বাংলাদেশের যুদ্ধ ভারতের যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ মোকাবিলায় দেশকে তৈরি করা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা নেই। এর পরপরই বিবিসির সংবাদে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কর্তৃক আক্রমনের সংবাদটি প্রচার করা হয় এবং সমগ্র পৃথিবী এই যুদ্ধের খবর সম্পর্কে অবহিত হয়। রাতে যশোর, চট্টগ্রাম, তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলায় বিমান হামলা শুরু হয়। আক্রমণ শুরুর কৃতিত্ব নবগঠিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীকে (কিলোফ্লাইট) দেয়া হয়। ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের লে.জে.জগজিৎ সিং অরোরার অধিনায়কত্বে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের ভারত যৌথ কমান্ড। ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী হলো মিত্রবাহিনী। গভীর রাতেই মিত্রবাহিনী অবরুদ্ধ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্ত এলাকায় অবস্থিত মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধরত বাংলাদেশের সশস্ত্র ও মুক্তিবাহিনীর সহায়তায় মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশন গরীবপুর-জগন্নাথপুর হয়ে যশোর ঢাকা মহাসড়কসহ চতুর্থ ডিভিশন ষষ্ঠ ডিভিশনের বেশ কয়েকটি এলাকার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। যশোর কুচ্ছিা, দিনাজপুর, জেলার আরো কয়েকটি থানা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে। ভারতে জারি হয় জরুরি আইন। সে সঙ্গে শুরু হয়ে গেল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চ‚ড়ান্তপর্ব। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিভাবে পূর্ব সীমান্তে অভিযান শুরু করে। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের পাক অবস্থানগুলোকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টায় সীমান্তের ৭টি এলাকা দিয়ে প্রচন্ড আক্রমণ পরিচালনা করে। ৪র্থ ও দশম বেঙ্গল ফেনী থেকে অগ্রসর হয়ে রেজুমিয়া সেতুতে উপস্থিত হয়। ১নং সেক্টরের ক্যাপ্টেন মাহফুজ তাঁর বাহিনী নিয়ে অপর বাহিনীর সাথে একত্র হয়। ফেনী-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে এই যৌথবাহিনীর একটি কলাম ডান দিকে মুহুরি নদী ধরে এবং অপর কলাম বাঁ দিকে সড়ক ধরে চট্টগ্রামের দিকে এগুতে থাকে। পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে পিআইএর সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। ভারত ভূখন্ডে পাকিস্তানের আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানালো বাংলাদেশ সরকার। রাতারাতি গড়ে উঠলো দুই রাষ্ট্রের যৌথ সামরিক কমান্ড। শুরু হলো মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযান। মার্কিন সিনেটর উইলিয়াম স্যাক্সবি রাওয়ালপিন্ডিতে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনাকালে বলেন, তিনি বেআইনী ঘোষিত আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর আলোচনাকালে শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবার্তা হয়। তিনি শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য পূনঃরায় পাকিস্তান আসতে রাজি হয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং নয়াদিল্লীতে পার্লামেন্টে বলেন, বাংলদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন বন্ধ করার ব্যাপারে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য ভারত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আসছে। কিন্তু সে প্রচেষ্টা কোনো সুফল বয়ে আনেনি। বাংলাদেশ থেকে শরণার্থী আগমনে ও ভারত সীমান্তে পাকিস্তানী গোলাবর্ষণে ভারতের নিরাপত্তা বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়েছে। টাইম ম্যাগাজিন জানাচ্ছে, নয়াদিল্লীতে সহসা অন্ধকার নেমে এলো। সন্ধ্যা ৬টায় ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোতে সাংবাদিকরা একত্র হয়েছিলেন বাংলাদেশের যুদ্ধের খবর সংগ্রহের নিয়মিত কাজে। তখন বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, এটা ব্লাক আউটের মহড়া নয়, আসল ঘটনা। এইমাত্র আমরা জানলাম, পাকিস্তানি বিমানবাহিনী অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগরে হামলা করেছে। বিবিসির বিশেষ সংবাদদাতার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, জানায় পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত বরাবর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ অব্যাহত আছে। পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক গভর্ণর ডঃ আব্দুল মালেক একটি সতর্কবার্তা দেন যে পাকিস্তান একটি বিধ্বংসী যুদ্ধের মুখোমুখি আছে। ঢাকায় একজন সংবাদদাতা বিবিসিকে জানান শমসেরনগর, দিনাজপুর, যশোর, রংপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহ সহ সব অঞ্চলে ভারী যুদ্ধ চলছে। আমাদের সংবাদদাতা জানান পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করে যে ভারতকে জবাব দেয়া হচ্ছে এবং তাদের হতাহতের পরিমান অনেক বেশী। অল ইন্ডিয়া রেডিওতে ভারতীয় বাহিনী বলেছে তারা প্রতিরক্ষার জন্য বুধবার থেকে আগরতলা, ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানীতে পাকিস্তানী আর্মির শেলিং বন্ধ করার চেষ্টা করছে। রেডিও বলেছে পূর্ব পাকিস্তানের গেরিলারা ঠাকুরগাঁও ও সিলেটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের শহর শমসেরনগর দখল করেছে। কিন্তু রাওয়ালপিন্ডির সামরিক মুখপাত্র বলেছে ভারতীয়রা ছোটখাট কৌশলী কাজ করলেও ঠাকুরগাঁওয়ের বিমানবন্দর এখনও পাকিস্তানি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।