মাহে রমজানের তাৎপর্য এবং রোজার ফযিলত

221

আরবী বার মাসের মধ্যে রমজানুল মোবারক অধিক বরকতময় ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। আল্লাহ কোরআন শরীফে বর্ণনা করেছেন, রমজান আমার মাস। যেহেতু এই মাসে আমি বান্দাদের জন্য রোজাকে ফরজ করেছি। রমজানের প্রতিটি দিবস সূবেহ সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নির্দেশে বান্দারা রোজার নিয়তে উপবাস করেন। যাবতীয় পানাহার, অশ্লীলতা, মিথ্যাচার এবং পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। আল্লাহ ছুবহানাতাআলা বলেছেন, বান্দাদের প্রতিটি কাজ- তার নিজের জন্য, শুধু রোজা ছাড়া। রোজা আামার জন্য। তাই আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। আল্লাহকে বিশ্বাস করে ভয়-ভীতির মাধ্যমে বান্দারা রোজা পালন করেন। রোজার বিধি-বিধান এবং ফযিলত সম্পর্কে আল্লাহতাআলা কোরআনুল করিমে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কাছে রোজাদারদের সম্মান এবং প্রতিদান অন্য আমলকারীদের চেয়ে অনেক বেশি। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে নেকির প্রত্যশায় রমজান মাসে রাত জেগে ইবাদত করে, আল্লাহ পাক তার অতীতের গুণাহগুলো মাফ করে দেন। কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে রোজার ফযিলত সম্পর্কে আলোকপাত করা হল।
* মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পথে নিয়ম-নীতির মাধ্যমে রোজা পালনকারীদের আল্লাহ নিজে পুরস্কৃত করবেন। * রমজান মাসে একটি ফরজ আদায় করলে সত্তরগুণ সওয়াবের অধিকারী হওয়া যায়। এই মাসের নফল এবাদত অন্য সময়ের ফরজ ইবাদতের সমতুল্য। * শুধু উপবাস থাকার নাম রোজা নয়। সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং লজ্জাস্থানকে গুণামুক্ত বা পবিত্র রাখার নাম রোজা। রোজার মাধ্যমে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জিত হয়। * রোজা যাবতীয় অবাঞ্চিত কাজ থেকে বিরত রাখতে সহায়ক। * রোজা আল্লাহ ছুবহানাতাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের মাধ্যম। * রোজাদারদের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধির চেয়ে ও সুগন্ধিময়। * বান্দাকে সঠিক ও সরল পথে পরিচালিত করার জন্য রোজা হচ্ছে বাৎসরিক প্রশিক্ষণ। * রোজা মানুষে মানুষে বৈষম্য দূর করে, রোজা হচ্ছে সম্প্রীতির বন্ধন। * রোজা শয়তানের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। হাদিসে বর্ণিত, “রোজা ঢালস্বরূপ”। * রোজার মাধ্যমে অন্তরের যাবতীয় মলিনতা ও কুটিলতা দূরীভূত হয়। * জান্নাতের একটি দরজার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন আল্লাহর নির্দেশে শুধু রোজাদারগণ ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। * নবী করিম (সাঃ) রোজাদারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যদি কেউ কাউকে গালি দেয় অথবা ঝগড়া করতে চায়, তাহলে সে যেন বলে “আমি সওম পালন করছি অর্থাৎ আমি রোজাদার” * রোজাদারদের দু’টি আনন্দ। একটি হল ইফতারের সময় এবং অন্যটি আল্লাহর সংগে সাক্ষাত লাভের সময়। * রোজা বিশ্ব মুসলিম সমাজে সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব এবং ভালবাসার সৃষ্টি করে।
নবী করিম (সাঃ) ইরশাদ করেন, রোজা শুধু আমার উম্মতের জন্য ফরজ করা হয়নি। পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের উম্মতের জন্যও আল্লাহ রোজা ফরজ করেছিলেন। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বান্দাদের রোজা রাখার ব্যপারটি আল্লাহতাআলার কাছে খুবই আনন্দদায়ক বিষয়। সেই প্রেক্ষিতে আল্লাহতাআলা রমজান মাসে বেহেস্তের দরজা সমূহ খোলা রাখেন এবং দোযখের প্রতিটি দরজা বন্ধ করে দেন। আল্লাহর নির্দেশে ফেরেস্তাগণ রমজান মাসে বান্দাদের নেক আমলগুলো তাড়াতাড়ি লিপিবদ্ধ করেন এবং বদআমলগুলো লিপিবদ্ধ করার ব্যপারে গড়িমসি করেন। মাহে রমজানে বান্দাদের যাবতীয় নেক কাজ সমূহকে আল্লাহতাআলা ইবাদত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই রমজান মাসে ভেজাল খাবার পরিবেশন না করার জন্য নবী করিম (সাঃ) উম্মতের প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। একজন রোজাদারকে ইফতার করানো উত্তম সওয়াবের কাজ। অক্ষমতায় প্রয়োজনে একটি খেজুর অথবা এক গ্লাস পানি দিয়ে ইফতার করানোর ব্যাপারে তিনি মত প্রকাশ করেছেন।
* মাহে রমজানে আল্লাহ পাক কোরআন নাযিল করেছেন। আল-কোরআন মানব জাতির জন্য হেদায়েত। কোরআনের আলোকে সমাজ বিনির্মাণের প্রেরণা জোগায় পবিত্র মাহে রমজান। *রমজান মাসে শবে কদর নামে একটি মর্যাদাপূর্ণ বরকতময় রজনী দান করেছেন। কোরআন মজিদে বর্ণিত, এই রাত্রি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। শবে কদরের তারিখ অনির্দিষ্ট। তবে শেষ দশকের যেকোন বেজোড় রাত্রিতে শবে কদরকে তালাশ করার কথা হাদিসে বলা হয়েছে। * রমাজানের শেষ দশ দিন ই’তিকাফের জন্য স্বীকৃত। দুনিয়ার যাবতীয় কর্মকান্ড, পরিবার-পরিজন এবং আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে আল্লাহর ঘর মস্জিদে গিয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে মনোনিবেশ করাই ই’তিকাফ।
আত্মশুদ্ধি অর্জন এবং কুপ্রবৃত্তি দমনের মাস রমজান। আখেরাতের পুঁজি করার শ্রেষ্ঠ সময় এই রমজান মাস। পবিত্র মাহে রমজানের সম্মানার্থে আল্লাহ পাক পাপিষ্ট বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। তা রমজানের প্রতি রাত্রেই হয়ে থাকে।
লেখক : প্রাবন্ধিক