মাস্টার নজির আহমদ কীর্তিতেই অমর

121

আজ ২৭ জুন ২০২০। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, সমাজসেবক, দানবীর দৈনিক পূর্বদেশের প্রতিষ্ঠাতা মাস্টার নজির আহমদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। পূর্বদেশ পরিবার আজ স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছে তাঁকে । মাস্টার নজির আহমদ মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের থেকে চির বিদায় নিয়েছেন অর্ধযুগ অতিক্রম করতে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁর শূন্যতার ক্ষত যেন এখনও শুকায়নি। তাঁর অক্ষয় কীর্তিগুলো বরং আমাদের কাঁদিয়ে যাচ্ছে। একইসাথে আমাদের সাহস ও অনুপ্রেরণাও যোগাচ্ছে। মাস্টার নজির আহমদ একজন ব্যক্তি মাত্র ছিলেন না, তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল প্রতিষ্ঠানে। যেখান থেকে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটছে অবিরত। মাস্টার নজির আহমদ ১৯২৭ সালে চট্টগ্রাম জেলার সর্বদক্ষিণে বাঁশখালী উপজেলার অজপাড়া গাঁ নাপোড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সময়টা ছিল ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী ভারতীয়দের বিপ্লবের কাল। নাপোড়ায় ওই বিপ্লবের আবেদন তখন হয়ত বেশি পৌঁছেনি, কিন্তু ভবিষ্যতের এক কীর্তিমানের জন্ম নাপোড়া দিয়েছে, যার রক্ত¯্রােতে প্রবাহিত হয়েছিল দেশপ্রেম ও মানবপ্রেম। শিক্ষার্থীর কাল পেরিয়ে নিজ গ্রামে নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন শিক্ষা বিতরণের ঝুড়ি।
জীবনের দীর্ঘ চারদশক প্রায় শিক্ষার ফেরিওয়ালা নাঙ্গা পায়ে কাদামাটি, শুকনো পথ, শীত বা বৃষ্টি কিংবা প্রচÐ তাপদাহ মাড়িয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ভরপুর করেছিলেন নাপোড়া গ্রামের শিশু-কিশোরদের। স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের তরঙ্গমালায় কাছে দাঁড়িয়ে মাস্টার নজির আহমদ অবলোকন করেছিলেন একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের, আর মনের গভীরে ছবি একেঁছিলেন শিক্ষা-সংস্কৃতিতে একটি সমৃদ্ধ বাঁশখালীর। সেই স্বপ্ন বিভোর মানুষটি গড়ে তুললেন নজির আহমদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আম্বিয়া খাতুন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, জোবেদা খাতুন এতিম খানা ও হেফজ খানা, মাস্টর নজির আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এরসাথে সংসার জীবনে মহান প্রভু থেকে প্রাপ্ত নিয়ামতগুলোকে তিনি তাঁর স্বপ্ন পূরনোর যোগ্যতায় ভরপুর করে তুললেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই তার স্বপ্নগুলো একে একে পূর্ণতা দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা গড়ে তুলেছেন ‘মাস্টার নজির আহমদ ট্রাস্ট’। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে মরহুম মাস্টর সাহেবের অসমাপ্ত কাজগুলোর পূর্ণতা দানসহ মাস্টর সাহেবের স্বপ্নেন বাঁশখালীর আর্ত-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্ররিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
মাস্টার নজির আহমদ ব্যক্তিজীবনে সততার যেমন শতভাগ চর্চা করেছেন অনুরূপ তার সন্তানদেরও সেই নৈতিকতায় এবং আদর্শে গড়ে তুলেছেন। মাস্টার নজির আহমদ বাঁশখালীর দুর্গম জনপদে থেকেও একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। জীবনের শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি সেই আদর্শে অটল ছিলেন। মরহুম নজির আহমদ শিক্ষাবিদ ছিলেন,সমাজ হিতৈষীই ছিলেনা শুধু, ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন ধর্মভীরুও ছিলেন। ফলে আমরা দেখতে পাই, তিনি শিক্ষা বিস্তারের স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার জন্য মাদ্রাসাও গড়ে তুলেছেন। জীবনের শেষ বিকালে এসে মাস্টার নজির আহমদ বন্দর নগরী চট্টগ্রামের শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দৈনিক পূর্বদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। যা তার জীবদ্দশায়ই চট্টগ্রামের প্রথম সারির প্রধান পত্রিকায় পরিণত হয়েছিল। পূর্বদেশের এ অগ্রযাত্রার পেছনে রয়েছে মাস্টার নজির আহমদর দোয়া ও আশীর্বাদ।
আমরা মাস্টার নজির আমাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছি তাঁর কবর যেন বেহেস্তের বাগানে পরিণত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, মাস্টার নজির আহমদের মত মানুষের মৃত্যু আছে বটে তারা যে কীর্তি রেখে গেছেন তাতেই তাঁরা অমর-অক্ষয় হয়ে থাকবেন। আবারও বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মাস্টার নজির আহমদের প্রতি।