মাস্ক পরাটা জরুরি নয়

84

এই ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। তাই মাস্ক তেমন কোনো সুরক্ষা দিতে পারে না। করোনাভাইরাসের কারণে মাস্ক ও স্যানিটাইজার কিনতে কমবেশি সবাই ব্যতিব্যস্ত। তবে প্রশ্ন হল, এই মাস্ক আসলে কতটুকু জরুরি? ‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ আইওয়া’স কলেজ অফ মেডিসিন’য়ের ‘মেডিসিন’ ও ‘এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ বিশেষজ্ঞ এলি পেরেনচেভিচ বলেন, ‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যদি পাশের বাড়িতেও থাকে তাও আপনার মাস্ক ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাস্ক ব্যবহার করা জরুরি নয়, উচিতও নয়। মাস্ক যে তাদের নিরাপদ রাখবে এমন কোনো প্রমাণ নেই। সাধারণ মানুষ মাস্ক পরে ভুলভাবে, যা তাদের সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে সংক্রমণের আশঙ্কাই বরং বাড়ায়। কারণ মাস্ক পরার পরই মানুষ হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করছে বেশি’।
অসুস্থ হলেই মাস্ক পরা উচিত
মাষ্কের কার্যকারিতা নিয়ে পেরেনচেভিচ বলেন, ‘যারা মাস্ক কিনছেন তাদের অধিকাংশই করোনাভাইরাস রোধ করতে পারেন এমন মাস্ক পাচ্ছেন না। করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না, ‘ড্রপলেট’য়ের মাধ্যমে ছড়ায়। হাঁচি কিংবা কাশি দিলে মুখ থেকে যে লালা ছিটকে বেরিয়ে আসে তার প্রতিটি এক একটি ‘ড্রপলেট’। করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসা এই ‘ড্রপলেট’গুলোতেই মিশে থাকে ভাইরাস’।
‘যেহেতু ভাইরাস বাতাসে থাকে না, তাই স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভাইরাস কোনো সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না। আবার অধিকাংশ মানুষ যে ‘সার্জিকাল মাস্ক’ ব্যবহার করছেন তা পরিধাণকারীর ‘ড্রপলেট’ বাইরে ছড়িয়ে পড়া আটকে রাখতে পারে। তবে বাইরের কোনো ‘ড্রপলেট’ ভেতরে প্রবেশ করা রুখতে পারে না। অর্থাং এই মাস্কগুলো একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি পরিধান করলে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধ হবে। তবে কোনো সুস্থ মানুষ এই মাস্ক পরিধান করে ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচতে পারবেনা’।
যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করছেন তারা রোগীর কাছাকাছি থাকার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে রোগীকে মাস্ক পরানো আবশ্যক। এক্ষেত্রে কে কীভাবে মাস্ক ব্যবহার করবেন এবং ব্যবহারের পর মাস্কটি কীভাবে নষ্ট করবেন তা জেনে নিতে হবে চিকিৎসকদের কাছ থেকে।
করোনাভাইরাসে বায়ুবাহী হওয়া প্রসঙ্গে পেরেনচেভিচ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়নি যা প্রমাণ করে যে এই ভাইরাস বায়ুবাহী। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো সুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি নিঃশ্বাস ছাড়লে যে তিনিও আক্রান্ত হবেন এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে ভাইরাস মিশ্রিত ‘ড্রপলেট’ কোনোভাবে বাষ্পীভূত হয়ে গেলে বাতাসে করোনাভাইরাস আসতে পারে। তবে এমন কোনো সংক্রমণের ঘটনাও এখন পর্যন্ত কোথাও পাওয়া যায়নি, সবই ‘ড্রপলেট’য়ের মাধ্যমে ছড়িয়েছে’।
‘মাস্ক’ ও ‘রিস্পিরেটরস’ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘থ্রিএম’য়ের মতে, ‘মাস্ক ও রেস্পিরেটর’য়ের মধ্যে মূল তফাৎ হলো ‘রেস্পিরেটর’ একজন সুস্থ মানুষকে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে আবার অসুস্থ মানুষকে ভাইরাস ছড়ানো থেকেও সুরক্ষা দেয়, মাস্ক তা পারেনা’। এই ‘রেস্পিরেটর’গুলোকে ‘এন নাইটিফাইভ’, ‘এফএফপিটু’ ইত্যাদি ‘রেটিং’ দেওয়া হয়। এই ‘রেটিং’ দিয়ে বোঝানো হয় বাতাসে থাকা দূষিত কণা কী পরিমাণে আটকাতে পারে এবং কোন আকারের কণা এই ‘রেস্পিরেটর’ ভেদ করতে পারেনা। আবার কণা ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেওয়ার পর দূষিত হয় এই ‘মাস্ক’ এবং ‘রেস্পিরেটর’। তাই একবার ব্যবহারের পর তা সঠিকভাবে ধ্বংস করাও জরুরি’। অত্যাধুনিক এই মাস্ক ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানাও প্রয়োজন। যাতে মাস্কটি মুখমন্ডলের ওপর বসে বায়ুরোধক পরিবেশ তৈরি করতে পারে। খবর বিডিনিউজের
তারপরও ‘লিক’ বা ছিদ্র হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই বলছে কোনো ‘মাস্ক’ বা ‘রেস্পিরেটর’ই শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারেনা।