মার বদিআলম যারে খুশি তারে মার

236

দেশে দেশে পড়ে সাড়া বুক টান করে দাঁড়া। কে কে তোরা যাবি বল? খোকা-খুকু আগে চল বুকে আছে মনোবল। হাতে থাকবে পাগলা পানি মুখে নিবি গাঁজা এখন তোরা রাজা, ইচ্ছে হলে যখন তখন দিয়ে যাবি যারেতারে সাজা। বুঝবে তখন শালার ব্যাটা কথা বলার মজা। মার বদিআলম যারে পাবি তারে মার, ধরি ধরি মার, কোপায় কোপায় মার। ভয় করিনা কারো মোরা ধারি নাকো ধার আমরা চমৎকার। হারামজাদা আমার খাই, আমার পরি, আমার সাথে বাস করি, আমার লগে সিনাজোরি? মার শালারে যা পাস তা দিয়ে লাঠি-বঁটি-হকিস্টিক, রাম দা-কিরিচ হাতের কাছে যা আছে তা দিয়ে কর ফিনিশ। ভয় করিস না সংকটে গুরু আছে নিকটে, ঢুকাই দিবি কবরে বস আছে উপরে। চিন্তা কি ব্যাটা আর তোদের? খাবি দাবি কলকলাবি ধরি ধরি ঘুম পাড়াবি। ভরসা ছাড়া চিন্তা নাই গুরুর যদি দয়া পাই। কি সাহস?এদেশ আমার, মাটি আমার, পানি আমার, আকাশ-বাতাস, বৃষ্টিপাত, বজ্রপাত, চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা সব আমার। তোর কি অধিকার, তুই কোন আবরার, তোর মাতা কি দরকার, তুই মাতস ক্যান খালি খালি?ঐ শুন আমাদের মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক, ‘ফাবিআইয়ি আলা-ই রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবা-ন’ বিরোধী, সর্বহারা তথা বাড়ি-ঘর, আত্মীয়-স্বজনহারা লেখিকা তসলিমা নাসরিন কি বলছেন?তিনি বলেছেন তুই এত নামাজ পড়স ক্যান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তোর কি দরকার? তুই ব্যাটা বোতল ধরবি, কলকি টানবি, বাবা পুড়াই ধোঁয়া নিবি, বড় ভাইদের দোয়া খুঁজবি। তারপর ক্যাসিনোতে গিয়া জুয়া খেলবি, তিন তাসের ফেনা তুলবি। তোকে কে বলছে মা, মাটি, মানুষ নিয়ে এত চিন্তা করতে? নদীর পানির এত হিসাব করস ক্যান, নদীর পানি দিই তুই কি করবি, ডুব দিবি না ভাত রাঁধবি? যা এবার উপরে গিয়ে ভাল করে শরাবন-তহুরা খা কিংবা হাউজে-কওসরের জল খা, হাহাহাহা।
এ ছিল আমাদের হবু রাজার লেকচার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর প্রতি। তারপর হবুরায় গবুচন্দ্রকে হুকুম দিলেন; ‘মন্ত্রী ক্যাসিনো স¤্রাটকে খবর লাগাও আমার সাথে দেখা করতে বল, হিসাব-কিতাব কিছু বাকী রয়ে গেছে সেসব বুঝিয়ে দিতে বল।’গবুচন্দ্র; ‘জাঁহাপনা গোস্তাকি মাপ হোক, ক্যাসিনো স¤্রাটের সাথে যে দেখা হবে না মহারাজ।’ ঔদ্ধত্য হবু; ‘কেন কি হয়েছে, কেন দেখা হবে না?’ বিন¤্র গবু; ‘তাকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে জাঁহাপনা।’ রূঢ় হবু; ‘বলো মন্ত্রী কার এত সাহস, কে গ্রেফতার করেছে আমার স¤্রাটকে?’ গবু; ‘র‌্যাব করেছে জাঁহাপনা।’ হবু; ‘র‌্যাব করেছে, র‌্যাবের এহেন স্পর্ধা কেমন করে হলো? কেন গ্রেফতার করেছে র‌্যাব আমার স¤্রাটকে?’ গবু; ‘হুজুর ক্যাসিনো চালানো নাকি অবৈধ, অপরাধ, বে-আইনি।’ হবুরাজা; ‘তাহলে এতদিন কোথায় ছিল তারা, এতদিন বলেনি কেন? এতদিন কি বসে বসে আঙ্গুল চুষছিল, বার বছর চুপ কেন ছিল? এখন আমি চলব কি করে, আমার টাকা আসবে কোত্থেকে? আয়ের অন্য কোন রাস্তা তো আমার জানা নাই, বার বছরে সব ভুলে গেছি। ক্যাসিনোই তো এখন আমার ইনকামের একমাত্র পথ। এখন আমি খাব কি?’গবু; ‘আস্তে বলেন স্যার সমস্যা হবে।’ হবু; ‘কার সমস্যা, আমি কি ডরাই সখী ভিখারী রাঘবে?’ গবু; ‘রাঘব না হুজুর র‌্যাব র‌্যাব, উপরের নির্দেশ আছে।’ হবু; ‘উপরের নির্দেশÑ কত উপর?’ গবু; ‘অতি উপর স্যার।’ হবু নিশ্চুপ।গবু; ‘কথা তো হুজুর আরো আছে।’ হবু;‘কি কথা?’ গবু; ‘চট্টগ্রামে হুজুর চাচা-ভাতিজা লাগছে, ভাতিজা বলছে চাচার কাপড় খুলে নেবে। চাচাকে একদম ল্যাংটা করে ছাড়বে।’
হবু; ‘বল কি, চাচা কে, ভাতিজা কে?’ গবু; ‘হুজুর চাচা অরিজিন্যাল, ভাতিজা ক্রিমিন্যাল।’ হবু; ‘তার মানে?’ গবু; ‘তার মানে হুজুর চাচা এক্যুরেট আর ভাতিজার বাপ ডুপ্লিকেট, নতুন এসেছেÑ হাইব্রীড।’ হবু; ‘এই চুপ, এভাবে বলে না, শরম। নতুন হাইব্রীড, কে বলল তোমাকে? নতুন হলো জাতীয় গ্রিড, আসল জিনিস। দেখ না নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়, পুরাতন কি যোগ হয়? হয় না, কারণ পুরানোর বেল নাই।
তাছাড়া শোন না, পুরানা পাপী বলে যে, নতুন পাপী কেউ কাউকে বলে? বলে না, আরো বলে পুরনো পাগলে ভাত পায়না। নয়া পাগলে ভাত পায় নাÑ এ কথা কেউ বলে?বলে না, আরো কি বলে? নবীন বরণ, প্রবীণ বরণ কেউ বলে? বলে না, নবীন বরণ প্রবীণ মরণ,নবীনের আগমন প্রবীণের নির্গমন বলে। তাই তো সবাই নবীন বরণ করে এবং পুরাতনের জানাজা পড়ে। সুতরাং কখনো নতুনকে ক্রিমিন্যাল বলবে না। সবসময় বলবে নতুন অরিজিন্যাল আর পুরাতন ক্রিমিন্যাল। নতুন আসল পুরাতন নকলÑ বুঝা গেছে ব্যাপারটা?’ গবু; ‘পরিষ্কার জাঁহাপনা, এমন করে আগে কখনো কেউ বলে নাই, তাহলে এ রকম ভুল জীবনে কখনো হত না। একমাত্র আপনিই আজ নবীন-প্রবীণের মৌলিক ব্যবধান সঠিক বিশ্লেষণ করেছেন। অতএব এ ভুল জিন্দেগীতে কোন দিন আর হবে না, গ্যারান্টি মহারাজ।’ হবু; ‘বেশ বেশ, এমন আকলবান মন্ত্রীই তো চাই। মনে রাখবে, আকলবন কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হোতা হে। মাগার আমার খোরাক কোথায়, খোরাক ছাড়া আমি বাঁচব কেমনে?’ গবু; ‘হুজুর চিন্তা করবেন না, চিন্তার কিছু নাই সব ঠিক হয়ে যাবে কারণ ঘটনা নতুন মোড় নিয়েছে।’ হবু; ‘কি রকম?’ গবু; ‘জাঁহাপনা ক্যাসিনো তলায় গেছে ইলিশ মাছ, পিঁয়াজ আর নদীর পানি এখন সামনে চলে এসেছে।’
হবু; ‘হাহাহাহা তাহলে ইস্যুর শেষ নাই, আমাদের কামাইরও সীমা নাই। প্রতিদিন খালি নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি হচ্ছে, না?’ গবু হাত কচলে; তাই তো হুজুর আমরা আজও টিকে আছি, নইলে কবেই যে ভ্যানিশ হয়ে যেতাম।’ হবু; ‘ভয় নাই গবু, ভ্যানিশ আমরা কখনো হব না। কারণ এদেশের মানুষ খালি পিঁপড়া মারতে জানে গুড় সরাতে জানে না। গুড় না সরালে পিঁপড়া মেরে কি হবে?যত মারবে তত আসবে লাভ কিছু হবেনা। অতএব আমরাই থাকব, আমরাই খাব, আমরাই শুধু কলকলাব। জনতা হল ভেড়ার দল খাবে তারা চিরতার জল। পথে-ঘাটে মরবে, ক’দিন হৈচৈ করবে তারপর বোবা হয়ে যাবে।’
গবু; ‘কিন্তু স্যার পাবলিক তো দেখি সেয়ানা মাল, এখন তারা আর ভেদা নাই। এক সময় খেদায় পড়ি ভেদা হই আছিল, এখন চালাক হই গেছে। এখন তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে শিখছে, আমাদের বিরুদ্ধে এখন তারা ফেসবুকে খালি স্ট্যাটাস দেয়।’ গবু; ‘ওই, পাবলিককে মোবাইল কে দিয়েছে?’ গবু; ‘কে দিয়েছে?’ হবু; ‘আমরাই দিয়েছি।’ গবু; ‘হক কথা।’ হবু; ‘পাবলিককে ফেসবুক কে দিয়েছে?’ গবু; ‘কে দিয়েছে?’ হবু; ‘আমরাই দিয়েছি।’
গবু; ‘সেইটাও হক কথা।’ হবু; ‘তাহলে আমার মোবাইল, আমার ফেসবুক দিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাসÑ এ সাহস পায় কোথায় হারামজাদা ঐ রামছাগলের দলেরা? আমার খাই আমার ধাই আমারেই কয় ম্যাও? রে পামর! ঐ নরাধম পাবলিক দুর্মদ-দুর্জন, গৃধিনী-শকুনি, কুক্কুর, পিশাচ দল আজি ক্ষমা নাই, ছাড় দ্বার যাব অস্ত্রাগারে, পাঠাইব জনতারে শমন ভবনে।’ গবু; ‘হুজুর শান্ত হোন শান্ত হোন হুজুর, উত্তেজিত একেবারেই হবেন না। জায়গা মতো কাম ফিনিশ, শালারে বাক্সতে ভরে উপরে পাঠিয়ে দিয়েছে। এতক্ষণে মনকির-নকিরের সাথে মনে হয় বৈঠক শুরু হয়ে গেছে।’ হবু হেসে; ‘বল কি, কে করল এ কাম?’ গবু; ‘স্যার আমরা আছি কেন সর্বদা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত, যদি এই সামান্য কাজটাই করতে না পারি? সেই লিবারেশন পিরিয়ড থেকেই সার্ভিস খালি দিতেই আছি, দিতেই আছি। কত লোকের সর্বনাশ করছি, কত জনেরে পথে বসাইছি আর কত জনরে কবরে পাঠাইছি শুধু হুজুরের মন রক্ষার জন্য। হারামজাদারে লাঠি-স্ট্যাম্প-হকিস্টিক দিয়ে এমন বানানি বানাইছে, সারা শরীর ফুলে ফুলে কালো হয়ে গেছে। পোস্ট মর্টেমে ডাক্তার রিপোর্ট দিছে শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন নেই।’ শুনে হবু তো অবাক; ‘বল কি, তাহলে ঐগুলো কিসের দাগ?’ গবু হাত কচলাতে কচলাতে হেঁহেঁহেঁ করে; ‘হুজুর আমরা তবে কেন আছি? আমরা কি ঘোড়ার ঘাস কাটার জন্য রয়েছি, এ সামান্য ব্যাপারটাই সিস্টেম করতে না পারলে? ডাক্তার বলেছে ওটা রাসায়নিক বিক্রিয়া, মানে এলার্জির সমস্যা!’ হবু; ‘হাহাহাহা, তাহলে ডাক্তাদের কাছেও ভ্যারাইটিস ব্যবস্থাপত্র থাকে।’ গবু; ‘সব আপনার মেহেরবানি হুজুর। দক্ষিণার জোরে সকল পÐিতেরই কাছে সব বিধান মেলে এবং সকল ডাক্তারেরই কাছে সব রোগের সার্টিফিকেট পাওয়া যায়Ñ গুরু বলেছেন হুজুর, হৈমন্তীতে, হেঁহেঁহেঁ।’ টাকার উপর ভিটামিন নাই গুরুর উপর কথা নাই।
হবু; ‘শুনলাম ব্যাটা নাকি বড় ভাইদের সালাম করে না?’ গবু; ‘না হুজুরÑ শুধু সালাম নয়, বড় ভাইদের নামটা পর্যন্ত জানে না। কত্ত বড় বেয়াদপ হুজুর দেখেছেন, এ অপমান কি সহ্য হয়? নাম জানে না, কার কি পদবী সেটা জানে না, কমিটিতে কে কে আছে, কতজন আছে কিচ্ছুই জানে না!’ হবুরায়; ‘কি এত্তবড় কথা, কিচ্ছুই জানে না, কমিটিকে এত বড় অবহেলা? এটা তো বরদাস্ত করা যায়না। মহাবেয়াদপ দেখছিহারামজাদারে আরো দিলনা ক্যান?’ গবু; ‘কেমনে দেবে হুজুর? তার আগেই তো চলে গেল, তবে ব্যাটার ভাইকে দিছে, পারলে মা-বাপকেও দিত, সুযোগ পায় নাই।’ হবু; ‘কেন সুযোগ পায় নাই? সুযোগ পেতে হবে, শোন সুযোগ পাওয়া নয় সুযোগ করে নিতে হবে, এখন থেকে সেটাই ঘোষণা করে দেবে।’ গবু; ‘জি হুজুর সেটাই হবে, আদেশ শিরোধার্য।’হবু; ‘মনে রাখবে জনতাকে কখনো প্রশ্রয় দিতে নাই, তারা হচ্ছে বলদ। যতক্ষণ খেদায় রাখবে ততক্ষণ ভেদা হয়ে থাকবে, যেই বের করেছো সঙ্গে সঙ্গে গলদ কাম শুরু করে। তাই সবসময় মারের উপর রাখতে হয় তাদের। সকালে মার, দুপুরে মার, বিকালে মার, রাত্রে মার তবেই সোজা থাকবে তারা, নইলে সিধা কখনো রাখতে পারবেনা। মনে থাকবে তো কথাটা?’ গবু; ‘চিরজীবন মনে থাকবে জাঁহাপনা, এখন হতে ঘোষণা করে দিলাম, মার বদি আলম জনতারে মার। যখন ইচ্ছা তখন মার, যত খুশী তত মার, যারে পাবি তারে মার, যেমন খুশী তেমন মার। মারতে মারতে করে দিবি সোজা দুনিয়ার বার। ঠিক আছে না হুজুর ফরমূলাটা?’ হবু; ‘পুরা ঠিক, যাও আজ হতে তোমাকে ফজিলতে মর্তবা দান করলাম।’ আলহামদুলিল্লাহ্ হুজুর, হেঁহেঁহেঁহেঁ।
লেখক : কলামিস্ট