মার্চেই প্রবল বজ্রঝড় ও মৃদু তাপদাহের আভাস

85

প্রকৃতিতে এখন বইছে বসন্ত-বাতাস। চলতি ফেব্রূয়ারির শেষদিকে মৃদু-মন্দ বাসন্তী হাওয়ার সাথে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’দিন বজ্রঝড়ের মধ্য দিয়েই ঘোমটা তুলতে পারে কালবৈশাখী। বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদও। তবে, মার্চেই চেনারূপে দেখা মিলবে কালবৈশাখীর। তখন প্রবল বজ্রঝড়ের সাথে মৃদু তাপদাহে তাপমাত্রার পারদ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত চড়তে পারে। যদিও সময়ের হিসাবে ওই তাপমাত্রা স্বাভাবিক বলেই গণ্য করা হয়ে থাকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বছরের প্রথম তিনমাসের (জানুয়ারি-মার্চ) আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে মার্চ মাসেই তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চড়ার কথা বলা হয়েছে। তার সাথে একই সময়ে হবে প্রবল কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়। চলতি ফেব্রূয়ারির বাকি ক’দিনে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। এ সময়ে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুই দিন বজ্রঝড় হতে পারে। আর মার্চে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’দিন মাঝারি থেকে তীব্র কালবৈশাখী কিংবা বজ্রঝড় এবং অন্যত্র দুই থেকে তিন দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী কিংবা বজ্রঝড় হতে পারে। এছাড়া, মার্চ মাসের দিনের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়ে প্রায় ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত চড়তে পারে। এরইমধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘর ছুঁয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নামে বৈশাখ যুক্ত থাকলেও শীতের বিদায়ের পর ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, সমগ্র পূর্ব এবং উত্তরপূর্ব ভারতে যে ঝড় বয়ে যায় তাই কালবৈশাখী। বাংলা বর্ষের শুরুতে মানে বৈশাখ মাসে এ ঝড় তুলনামূলকভাবে বেশি হয় বলেই এ ঝড় কালবৈশাখী
নামে পরিচিত লাভ করেছে। কালবৈশাখীর আসল নাম,‘নর-ওয়েস্টার।’ অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় ধেয়ে আসে বলে একে বলে ‘নর-ওয়েস্টার’। তাই বলে কালবৈশাখী শুধুমাত্র বৈশাখ মাসেই (মানে ১৫ এপ্রিল থেকে ১৫ মে পর্যন্ত) দেখা যাবে-এমনটি নয়। কালবৈশাখী এবং সাধারণ ঝড়ের মধ্যে পার্থক্য বিচার করার কিছু মাপকাঠি রয়েছে। মোটা দাগে বলা যায়, ঝড়ের গতিবেগ ঘন্টার ৫০ কিলোমিটারের বেশি এবং স্থায়ীত্ব অন্তত এক মিনিট হলে সেটাই কালবৈশাখী ঝড়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীতের বিদায়ের পর গত মৌসুমে বসন্তের প্রথম সপ্তাহেই আগাম কালবৈশাখীর জানান দিয়েছিল প্রকৃতি। চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মৌসুমের প্রথম তুমুল শিলাবৃষ্টি ও বজ্রঝড় কেড়ে নিয়েছে দুই শিশুসহ চার জনের প্রাণ। আমের মুকুল, গাছপালা ও ক্ষেতের ফসলের বুকে রেখে যায় ক্ষতচিহ্ন। দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে গেলবারের আগাম কালবৈশাখীর প্রথম শিলাবৃষ্টির ধরণ স্থানীয় বাসিন্দাসহ অনেকের ‘চোখ কপালে’ তুলে দিয়েছিল। বিশেষ করে রাজশাহীর পুঠিয়ায় শিলাবৃষ্টির তান্ডবলীলার সাক্ষী হয়ে স্থানীয় প্রবীণরা বলেছেন, বিগত ৬০ বছরে এমন ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি তারা আগে কখনও দেখেন নি। গত ১৭ ফেব্রূয়ারি ভোরের এই শিলাবৃষ্টির অসংখ্য ছবি এবং ভিডিওচিত্র গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছবিগুলোর দিকে তাকালে দেশের প্রত্যন্ত জনপদের যে কোনও মানুষের চোখ হঠাৎ করে আটকে যেতেই পারে বিস্ময়ে! এমন দৃশ্য আমাদের দেশে খুব একটা পরিচিত নয়। দেখে মনে হবে ইউরোপ কিংবা আমেরিকার মত শীতপ্রধান কোনও দেশের তুষারপাতের দৃশ্য। শিলাবৃষ্টির তীব্রতা এতোটাই বেশি ছিল যে, গ্রামগুলোতে টিনের চাল ছিদ্র হয়ে ঘরেও শিলা ঢুকে যায়। শিলাবৃষ্টি থামার তিন ঘণ্টা পরও বাইরে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছিল না। স্থানীয়রা কোদাল দিয়ে রাস্তায় জমে যাওয়া শিলা সরিয়ে চলাচলের উপযোগী করে। ৩৮ মিনিট স্থায়ী শিলাবৃষ্টিতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত ৭ ফেব্রূয়ারি বিকেলে দিল্লিতে অনেকটা একইধরনের শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ধোঁয়াশা-দূষণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা দিল্লিতে শিলাবৃষ্টি কখনো-সখনো হয়, কিন্তু এত তীব্র শিলাবৃষ্টি শহরের অনেক বাসিন্দাই আগে দেখেন নি। সাথে সাথেই শোরগোল পড়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। বহু লোক ফেসবুক-টুইটার-হোয়াটস অ্যাপে শিলাবৃষ্টির ছবি ও বরফ-ঢাকা রাস্তায় গাড়ি চালানো কিংবা হৈ-হুল্লোড়ে মাতামাতির ছবি পোস্ট করতে থাকেন।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার জন্য প্রচারিত আবহাওয়ার দৃশ্যপটে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আংশিক মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানতঃ শুষ্ক থাকতে পারে। তবে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দুয়েক জায়গায় হালকা কিংবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আলামত রয়েছে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি আর দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী দু’দিন বা ৪৮ ঘন্টার আবহাওয়ার অবস্থায় সামান্য পরিবর্তন এবং বর্ধিত পাঁচদিনের আবহাওয়ার অবস্থায় এ সময়ের শুরুতে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে দেশের সর্বোচ্চ ৩১ ডিগ্রি আর সিলেটের শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
উল্লেখ্য, এশিয়া অঞ্চলের আবহাওয়াবিদরা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে তীব্র তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে গণনা করেন।