মার্কিন দূতাবাসের ‘দুরভিসন্ধি’ দেখছেন জয়

45

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের যে অভিযোগ প্রিয়া সাহা করেছেন, তার পেছনে মার্কিন দূতাবাসের ‘দুরভিসন্ধি’ রয়েছে বলে সন্দেহ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের।
গতকাল রোববার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, এই ধরনের কাজের পিছে একটাই কারণ চিন্তা করা যায়: মানবিকতার দোহাই দিয়ে আমাদের এই অঞ্চলে সেনা অভিযানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে ওয়াশিংটনে এক সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত বুধবার হোয়াইট হাউজে যান এনজিওকর্মী প্রিয়া সাহা, যিনি বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন।
প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ আছে। আমার অনুরোধ, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু বিচার হয়নি।
তার ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশের বিভিন্ন মহলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণেœর উদ্দেশ্যেই’ প্রিয়া সাহা এই ধরনের ‘বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ’ করেছেন।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রিয়া সাহা তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ওই সম্মেলনে যাননি। হোয়াইট হাউজে যে অভিযোগ তিনি করেছেন- তা তার একান্তই নিজস্ব বক্তব্য, সংগঠনের নয়। খবর বিডিনিউজের
অন্যদিকে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ থেকে আটজনকে মনোনীত করেছিল তারা। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সব সময় ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানেই কোনো অংশগ্রহণকারীর মত প্রকাশের স্বাধীনতায় যুক্তরাষ্ট্র কখনও হস্তক্ষেপ করে না। তবে দূতাবাসের ওই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, যখন তাদের একজন মনোনীত অংশগ্রহণকারী তাদেরই রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে কোনো ভয়ংকর মিথ্যা বক্তব্য দিলেন, তাদের উচিত ছিল তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবাদ জানানো, যা তারা করেননি।
প্রিয়া সাহার অভিযোগ খÐন করতে গিয়ে জয় লিখেছেন, উনি বলেছেন বাংলাদেশ থেকে নাকি ৩ কোটি ৭০ লক্ষ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ‘গায়েব’ বা ‘গুম’ হয়ে গেছেন। প্রায় ৪ কোটির কাছাকাছি যে সংখ্যাটি উনি বলছেন তা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যার ১০ গুণেরও বেশি, আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যার কাছাকাছি। এতো মানুষ গুম হলো সবার অজান্তে? ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ গায়েব হলো কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়াই?
নিজের সন্দেহের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা লিখেছেন, এই বিষয়টি থেকে কিন্তু মার্কিন দূতাবাসেরই দুরভিসন্ধি প্রকাশ পায়। তারা জেনেশুনেই প্রিয়া সাহাকে বাছাই করে, কারণ তারা জানতো উনি এই ধরনের ভয়ংকর মিথ্যা মন্তব্য করবেন। প্রিয়া সাহার এ কাজের পেছনে ‘সেনা অভিযানের ক্ষেত্র প্রস্তুত’ করার অভিসন্ধি থাকতে পারে- এমন মন্তব্য করে জয় লিখেছেন, মনে রাখা ভালো, কয়েক দিন আগেই মার্কিন এক কংগ্রেসম্যান একটি বক্তব্যে বলেছিলেন বাংলাদেশের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য দখল করা উচিত।
নিজের সন্দেহের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র জয় লিখেছেন, মার্কিন দূতাবাস যে আওয়ামী লীগ বিরোধী তা নতুন কিছু নয়। তাদের সকল অনুষ্ঠানেই জামায়াত নেতাকর্মীরা ও যুদ্ধাপরাধীরা নিয়মিত আমন্ত্রিত হতেন। প্রিয়া সাহার মিথ্যা বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তাদের সরাসরি আধিপত্য বিস্তারের ষড়যন্ত্র পরিষ্কারভাবেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মার্কিন দূতাবাসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলেও যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার এবং তাদের অবস্থানের প্রশংসা করেছেন সজীব ওয়াজিদ জয়।
সৌভাগ্যবশত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সরকার অন্যান্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার নীতিতে বিশ্বাসী নন। তারা এই ধরনের ভয়ংকর মিথ্যা দাবি বিশ্বাস করার মতন বোকাও নন।