মামলা আর অনিয়মে আটকে গেছে মরা খাল খনন কাজ

31

পটিয়ায় আট মামলা আর ঠিকাদারের অনিয়মে আটকে গেছে পটিয়া পৗরসভার সুচক্রদন্ডী থেকে হাইগাঁও পর্যন্ত মরা খাল খনন কাজ। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেখ হাসিনার শতবর্ষের ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় সুচক্রদন্ডী থেকে হাইদগাঁও পর্যন্ত মরা খালের খনন কাজ শুরু হলেও বড় স্কেবেটর ব্যবহার এবং মাটি বিক্রিসহ নানা অনিয়মের কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় নি। আর ঠিকাদারের বিলম্বের এ সুযোগে আটটি মামলা দায়ের হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী একরাম হোসাইন জানান, প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অর্ধেকের বেশি খাল খনন হয়েছে। ঠিকাদার ছোট স্কেবেটরের বদলে বড় স্কেবেটর দিয়ে খাল খনন করতে গিয়ে খনন কাজ বিলম্বিত হয়। এ সুযোগে বিভিন্ন মৌজায় ৮টি মামলা এবং বর্ষা চলে আসায় খাল খনন না করেই চলে গেছে ঠিকাদার।
জানা গেছে, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর খালের খনন কাজ শুরুর মাধ্যমে জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় এমপি সামশুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়ন শুরু হয়। পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের সুচক্রদন্ডী গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে খাল খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর স্থানীয় লোকজন তাতে বাধ সাধেন। পরে স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপের হস্তক্ষেপে সুচক্রদন্ডী এলাকায় খালের খনন কাজ সম্পন্ন হয়।
খালের সুচক্রদন্ডী এলাকায় খনন কাজ ঠিকমত হলেও পরবর্তীতে সুচক্রদন্ডীর পূর্ব দিক থেকে মাটি বিক্রির ব্যবসায় জড়ায় ঠিকাদার। খালের মাটি তুলে বিক্রি করা হতো খাল সংলগ্ন বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। কোন কোন স্থানে খালের উপর ব্যক্তি বিশেষের বাড়িঘর ও দখলীয় খালের অংশ রক্ষায় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে খাল খনন না করেই অন্যত্র চলে যায় ঠিকাদার। সে সময় এলাকার লোকজন ক্ষুব্দ হয়ে উঠলে এবং বিষয়টি জানালে সামশুল হক চৌধুরী মরা খাল যথাযথভাবে খননের নির্দেশ দেন। এরপরই ঠিকাদার মাটি বিক্রির বাণিজ্য করতে না পেরে খনন শেষ না করেই চলে গেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান শতবর্ষের ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় পটিয়াসহ সারা দেশের ৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়ে) কাজ আগামী বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে এ কাজ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে পটিয়ার সুচক্রদন্ডী গ্রামে ৮১ লাখ ৭১ হাজার টাকার কাজটি পেয়েছে মেসার্স মোস্তফা এন্ড সন্স। প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৫ কিলোমিটারের বেশি খাল খনন করার কথা। সরকারের প্ল্যান অনুযায়ী খালের খনন সম্পন্ন হলে পটিয়া পৌর এলাকার বিশাল একটি অংশ ও হাইদগাঁও ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা নিরসন হতো। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর জোয়ারের পানি দিয়ে ইরিগেশনের মাধ্যমে শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ সম্ভব হতো। গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কাজটি শুরু হয়েও শেষ হয় নি। বিপত্তি বাধে ঠিকাদারের গাফেলতি, অনিয়ম এবং মাটি বিক্রিকে কেন্দ্র করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী একরাম হোসাইন বলেন, ঠিকাদার কতটুকু খাল খনন করেছেন তা জরিপ করা হচ্ছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে অর্ধেকের বেশি খাল খনন হয়েছে। আগামী শুকনো মওসুমে খালটি আবারও খনন করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলার কারণে বিষয়টি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ছোট স্কেবেটর দিয়ে খনন করা হলে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পুরো খালটিই খনন হয়ে যেতো। মামলা বা অন্য কোন সমস্যা এতে বাধা হতো না। এতে ঠিকাদারের গাফেলতি রয়েছে।