মানুষ মানছে না লকডাউন বাঁচতে হলে মানতে হবে

97

বিশ্বে করোনাভাইরাস ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, স্পেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর অবস্থা সংকট জনক। চীনেও নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব আবার বাড়ছে। রাশিয়া, ইরান, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, ব্রাজিলসহ আরো বহুদেশ করোনা থেকে বাঁচার জন্য দেশব্যাপী ১৪৪ ধারা জারি করেছে। বিশ্বজুড়ে এ মহামারির প্রভাব থেকে ৫৩ হাজার বর্গমাইল আয়তনের ছোট্ট এ-বাংলাদেশও মুক্ত নয়। ছোঁয়াছে এ রোগের আবির্ভাবের পর এ পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান তাতে মনে হচ্ছে আমরা মহাবিপদের ঝুঁকিতে রয়েছি। কেননা এদেশের আমজনতা এ কোভিড -১৯ সম্পর্কে একেবারে উদাসীন ও বে-ওয়াকিবহাল। কি করে এদের বোঝানো যায় তা বোধগম্য নয়। সরকার, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ও প্রিন্টিং মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন এমনকি সেনাবাহিনী শক্তি প্রয়োগ করেও জনগণকে বোঝাতে পারছে না। দেশের স্থানীয় প্রশাসনের ইউনিয়ন থেকে সিটিকর্পোরেশন, বিভাগীয় ও জেলাশহর পর্যন্ত দায়িত্বশীলরা পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার-ফেস্টুন এবং মাইকিং করেও সাধারণ মানুষকে ঘরে ঢুকাতে পারছে না। যে-ই বলুক শুনার যেন কেউ নেই এমন অবস্থা। অকারণে শিশু-তরুণ-যুবক-প্রৌঢ় সবাই নানা অজুহাতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছে। রাস্তায় অহেতুক ঘোরাফেরা করছে। দোকানের সামান্য অংশ খোলা রেখে চা বিক্রি করছে দোকানিরা। সেখানে গাদাগাদি গায়ে গা ঘেঁষে বসে চা খাচ্ছে গল্প-গুজব করছে। সরকারি বেসরকারি সংস্থা ত্রাণ দিচ্ছে কিন্তু অনেকে সেই ভোগ্যপণ্য বিক্রি করে আবার অভাবের কথা বলে বেরিয়ে পড়ছে রাস্তায়, লোকালয়ে।
সামাজিক দূরত্বের কোন বালাই তাদের নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাস পজেটিভ পাওয়া গেছে ৬৭ বছর বয়স্ক একজনের মধ্যে। ওই ব্যক্তির বিদেশ কানেকশন নেই, অথচ সে করোনা ভারাসে আক্রান্ত। তার বাড়ি চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়ায়। যেহেতু তার বিদেশ যাওয়া কিংবা আসার কোন খবর পাওয়া যায়নি, সেহেতু সে সামাজিক যোগাযোগের কারণে আক্রান্ত। অথচ শহর, গ্রাম সবখানে মানুষ ছয় ফুট দূরত্ব তো দূরের কথা একফুট দূরত্বও মানছে না। প্রয়োজনের অজুহাতে নর-নারী শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত করছে। সারাদেশে লকডাউনের কারণে বাস মিনিবাস, মাইক্রুবাস বন্ধ। জনগণ রিক্সা, অটোরিক্সা, সিএনজি অটো-রিক্সা করে ৫০ থোকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথে যাতায়াত থেমে নেই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতার মধ্যেও মানুষ রিক্সা, অটো-রিক্সা, সিএনজি-রিক্সায় চড়ে, গায়ে গা ঘেঁষে বসে যাতায়াত করছে। চালকরা কখনো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে কখনো পুলিশকে বশ করে চালিয়ে যাচ্ছে গাড়ি। লোকেরা উল্লেখ্য গাড়ি পাওয়া বলে যাতায়াত থামাচ্ছে না। করোনা আক্রান্ত হবার কোন ভয় অধিকাংশ জনগণেরর মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে না।
দূরের যাত্রায় রিকসা অটো রিকসা জাতীয় গাড়ি পর্যাপ্ত না পেলে ট্রাক, মনিট্রাকে করে গায়ে গা লাগিয়ে যাতায়ত করছে। পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখছে। আবার কিছু অসাধু এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার এ্যাম্বুলেন্সে হুইসেল বাজিয়ে পাঁচগুণ দশগুণ ভাড়া নিয়ে তথাকথিত যাত্রীদের বহন করছে। পুলিশ সে সব গাড়ি তল্লাশি করার প্রয়োজনও অনুভব করতে দেখা যাচ্ছে না। আদৌ রোগীর গাড়ি কি না তাও দেখছে না। সড়কের অবস্থা যখন এমন সরকার ও প্রশাসন কি ভাবে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে আমাদের বুঝে আসে না। বাঙগাল মরতে চায়, তাদের সরকার ও প্রশাসন কি করে বাঁচাবে!
প্রশাসনিক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা আরো কঠোরতর হওয়া প্রয়োজন। বহুদেশ রাস্তায় বের হলে গুলিকরার নির্দেশ পর্যন্ত দিচ্ছে। আমাদের দেশের চিকিৎসা সেক্টর বহির-বিশ্বের মতো উন্নত নয়। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার সাথে তুল্যও নয়। বর্তমানে এদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৭০, আর মারা গেছে ৮ জন। এখনো সময় আছে দেশে লকডাউন শতভাগ কার্যকর করা গেলে এ জাতিকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব।এদিকে দেশে বহু গার্মেন্স ফ্যাকটরি খুলে দেয়া হয়েছে । যানবাহন বন্ধের এ সময়ে চাকুরি বাঁচাতে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এর ফলে নানা ভাবে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
আমরা জনগণের উদ্দেশ্যে বলি, ঘরে থাকুন। কোন রকম প্রাণে বেঁচে থাকলে চাকুরি, ব্যবসা, দিন মজুরের কাজ সব করে ভবিষ্যৎ পার করা যাবে। করোনায় প্রাণ গেলে দেশময় বিপর্যয় নেমে আসবে। আপনি বাঁচেন, অন্যকেও বাচান। বাচান দেশ ও জাতিকে।