মানুষের মুক্তির কথা বলে নাটক প্রবন্ধ ও কবিতা

51

যারা নদীর তীরে, সমুদ্রের তীরে জন্মায় তারা কবি হয়। কবি অভীক ওসমানের জন্মও শঙ্খ নদীর তীরে। তার কবিতা আমাদের মনকে স্পর্শ করে। তার লেখাগুলো আমাদের চিন্তার শক্তি জোগায়। তার নাটক, প্রবন্ধ ও কবিতা মানুষের মুক্তির কথা বলে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে খড়িমাটির উদ্যোগে ‘প্রমা ও লাবণ্যে অভীক ওসমান’ সম্মাননা গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজবিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অভীক ওসমান একজন বহুমাত্রিক লোক। আজকের সময়ে বহুমাত্রিক লোক তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। খুব অল্প বয়সে বাবা-মাকে হারানো ছেলেটি শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে কবিতা, নাটক ও প্রবন্ধ রচনা করেছেন। মাওলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদীর অপ্রকাশিত ‘হতাশ জীবন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ সম্পাদনা করে অভীক ওসমান আমাদেরকে ঋণী করে গেছেন। তিনি একজন সৃজনশীল লেখক। তিনি অনেক বছর তার সৃষ্টিশীল লেখনী উপহার দিয়ে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্যে রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, অভীক ওসমান একজন মেধাবী ছাত্র, লেখক, কবি ও রাজনীতিবিদ। অনেক প্রতিক‚লতার মধ্যে দিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন। তার মেধা শক্তি আমাদেরকে মুগ্ধ করে। যেকোনো সময় মানুষের বিপদে সহযোগিতা করতেন তিনি। শুধু নিজে পড়ালেখা করেননি, অন্যকে পড়ালেখার জন্যও সহযোগিতা করে গেছেন।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীক ও নানা সৃষ্টিশীল কর্ম নিয়ে পত্রিকায় লেখার মত তেমন লোক ছিল না চট্টগ্রামে। আমি যখনই কোনো একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য বলতাম, সে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে তা করত। পারব না, এই শব্দটি আমি তার কাছ থেকে শুনিনি।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, বয়সে ছোট হলেও একইসাথে রাজনৈতিক অজ্ঞিতার মধ্যে দিয়ে গেছে। সৃজনশীল মানুষ হিসেবে অভীক ওসমান কবিতা, প্রবন্ধ ও নাটক লিখেছে। আজকের যুগে তরুণদের মধ্য সংগঠন গড়ে তোলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা তেমন হয় না। জীবনের নান প্রতিক‚লতা পেরিয়ে নিজস্ব চিন্তা ও কাজের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার অগ্রগতি থেমে নেই।
জিপিএইচ গ্রæপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলে রূপকল্প ২০৪১ পূরণ করা সম্ভব হবে। আর সমাজের প্রত্যেক স্তরে রয়েছে বিশৃঙ্খলা। এই বাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে জনসংখ্যাকে মানসম্পদে পরিণত করতে হবে। সেই সাথে অভীক ওসমানের মত মানুষ সমাজের প্রত্যেক স্তরে গড়ে উঠলে ২০৪১ এর স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে।
শিক্ষাবিদ রীতা দত্ত বলেন, ছাত্রজীবনে লেখাপড়ার পাশাপাশি সাহিত্যকর্ম চর্চা, লেখালেখি ও সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যারা কাজ করেছেন অভীক ওসমান তাদের একজন। এই বইটি অভীক ওসমানকে নানাভাবে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। তার নামের সাথে কাজের ভীষণভাবে মিল রয়েছে। তিনি একজন দেশপ্রেমিক।
কবি ও শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ বলেন, একটা মানুষের মূল্যায়ন ও তার সৃষ্টিশীল বিষয়কে সম্মাননা জানান জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠান মাইলফলক। নানাক্ষেত্রে তার অবদান অতুলনীয়। তিনি একজন পরিশ্রমী লেখক। তার মেধা ও পরিশ্রম করার শক্তি অনেক বেশি। তিনি কাজ পেলে আনন্দ ও নিষ্ঠার সাথে সম্পাদন করতে পারেন। তিনি চট্টগ্রামের ভালো মানের একজন লেখক।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল বলেন, বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী তিনি। প্রায় আড়াই বছর যাবত তার সাথে কাজ করেছি। সাদা মনের মানুষ। তার জ্ঞানের গভীরতা প্রখর। এদের মত মানুষ দেশের স্বার্থে বেঁচে থাক। তার ভবিষ্যত সুন্দর ও উজ্জ্বল হোক।
স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন এর সভাপতি কবি ও সাংবাদিক নাজিমুদ্দীন শ্যামল বলেন, অভীক ওসমান বহুমাত্রিক গুণিজন। তিনি সমাজ বদলের একজন যোদ্ধা। বাংলাদেশের সাম্যর সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। অভীক ওসমান তার লেখায় মুক্তিযুদ্ধ, সমাজে সমতা ও মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন।
কবি ও লেখক অভীক ওসমান নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হন। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন কবিকন্যা মুনিয়া তাহনীন, কবি আখতারী ইসলাম, সারাফ নাওয়ার, সীমা কুন্ড, কবি বিচিত্রা সেন, ডা. নাদিয়া সিকদার।
কবি মনিরুল মনিরের উপস্থাপনায় এসময় সূচনা সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী শ্রেয়সী রায়। আবৃত্তি করেন শুভ্রা বিশ্বাস, রাশেদ হাসান, মিলি চৌধুরী, আয়েশা হক শিমু, মো. মুজাহিদুল ইসলাম ও লুবাবা ফেরদৌস সায়কা।