মানুষের ‘জীবনাচার’ পাল্টে দিচ্ছে করোনা

58

তুষার দেব
চীনের উহান থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভকারী মরণঘাতী কোভিড- ১৯ বা করোনা ভাইরাস মানুষের জীবনাচার পাল্টে দিচ্ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে একটি রোগে এত অধিকসংখ্যক মানুষের আক্রান্ত হওয়া এবং প্রাণহানির সংখ্যা বিশ্ববাসী আর দেখেনি। প্রতিষেধক আবিষ্কৃত না হওয়া পর্যন্ত আপাতদৃষ্টিতে ‘লকডাউনের’ মত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাকেই এ রোগ থেকে সুরক্ষা এবং সংক্রমণ বা বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনায় জর্জরিত ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গৃহীত পদক্ষেপের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে তাই ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ আর ‘লকডাউন’ অবস্থাকেই অধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘জরুরি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি আমরা করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে প্রত্যেকের ঘরে থাকার বিষয়টিকেই অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। সুরক্ষা ও সংক্রমণ ঠেকাতে হোম কোয়ারেন্টাইন আর লকডাউনের মত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা। সেই অনুযায়ী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি শুক্রবার থেকে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে নেমেছে। এটা ধীরে ধীরে আরও কঠোর হবে।’
এদিকে, বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির মধ্যেই লকডাউনের মত পদক্ষেপে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে বলে ব্রিটেনের এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের ওই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মার্চের শেষ পর্যন্ত ইউরোপের ১১টি দেশে ৫৯ হাজার মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন লকডাউনের কারণে। তাছাড়া, ভাইরাসের প্রসারও নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে। ইউরোপে ইতালি ও স্পেনের মত করোনা সংকটে জর্জরিত দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গবেষকরা দুই পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি এবং স্কুল-কলেজ, বড় অনুষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ না করলে কী হতো, সেই অবস্থার সম্ভাব্য পরিণাম খতিয়ে দেখা হয়েছে গবেষণায়। গবেষণা অনুযায়ী, স্পেনে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে লকডাউন করে। ফ্রান্সে সেই সংখ্যা আড়াই হাজার। বেলজিয়ামে পাঁচশ’ ৬০, জার্মানিতে পাঁচশ’ ৫০ আর ব্রিটেনে তিনশ’ ৭০ জন। ওই গবেষণা রিপোর্টের ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার কিংবা প্রাদুর্ভাব একেবারে কমে আসা পর্যন্ত লকডাউন চালিয়ে যাবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে বিশ্বের বাকি অংশে লকডাউনের ফলে কত মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনও কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, করোনা সঙ্কট আগামী দিনের বিশ্বব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনে দেবে। আর সে পরিবর্তন হবে বিশ্ব-রাজনীতির প্রথাগত ধ্যান-ধারণার বিরোধী। মানুষের জীবনাচার, পরিবেশগত, অর্থনৈতিক জীবন সবখানেই সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনবে করোনা সংকট। এরইমধ্যে জীবনযাপনে হঠাৎ করেই নানা ধরনের পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমনকি মানুষের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও মানসিকতায়ও ইতিবাচক কোনও পরিবর্তন আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
অপরদিকে, করোনাকালের অস্বাভাবিক অবস্থায় সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। দিনের পর দিন কর্মহীন হয়ে আয় রোজগার না থাকার কারণে এদের দিনাতিপাত করা দুরূহ হয়ে উঠছে। প্রশাসনসহ ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে ত্রাণ সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। অনেকেই এখনও ত্রাণ তৎপরতার আওতার বাইরেই রয়ে গেছে।