মানব সম্পদ উন্নয়নে প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা এবং বর্তমান প্রেক্ষিত

69

ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ

সারাবিশ্ব আজ কঠিন করোনা যুদ্ধে লিপ্ত। অতীতে কখনো এধরনের কঠিন পরিস্থিতি পৃথিবীতে আসেনি। বিশ্বের প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রগুলোও আজ করোনা ভাইরাসের কারণে একান্ত অসহায়। লাশের মিছিল ও লকডাউনে আক্রান্ত সারা বিশ্ব। প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশও অতিক্রম করছে এই কঠিন সংকটময় পরিবেশ। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে মহান আল্লাহ তা’লা যেন আমাদের সকলকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি ও সাহস দান করেন এবং এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠার মতো সুযোগ সৃষ্টি করে দেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ব্যাকুল প্রার্থনা জানাচ্ছি। তিনি দয়া করলে আমরা অবশ্যই এই কঠিন দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবো। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপি রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এই দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল, আমরা পুরো জাতি একত্রিত হয়েছিলাম এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, যার জন্য স্বাধীন একটি দেশ, স্বাধীন একটি ভ‚খÐ বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সুযোগ পেয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে এই দেশ স্বাধীন করে বুঝতে পেরেছিলেন এই দেশকে দ্রæত গতিতে এগিয়ে নিতে হলে ও স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে এদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রকে সমন্বিত করে সবাই মিলে একসাথে কাজ করতে হবে। তাই বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে বাংলাদেশে এমন কোন সেক্টর ছিলোনা যেখানে তিনি হস্তক্ষেপ করেননি এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক বাস্তবায়িত করেননি। পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক বাস্তবায়নকৃত ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তিনি যে জিনিসটাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তাহলো এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।
এই জাতিকে উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে, সুনাগরিক ও মানব সম্পদ তৈরি করতে হবে আর তা করতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা দেশে অসংখ্য প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ প্রতিষ্ঠাসহ জাতীয়করণ করেছিলেন। শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন বলেই জাতি সঠিক সময়ে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পথভ্রষ্ট কিছু সেনা সদস্যের হাতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে শহীদ হওয়ার পর থেকে দীর্ঘ সময়কাল পর্যন্ত পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠার কারণে শিক্ষার্থীর তুলনায় ভয়াবহ পরিমাণে কমে যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং বেড়ে যায় ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার। গুটিকয়েক সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছু সকল শিক্ষার্থীর ঠাঁই হতো না বিধায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যেতো। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে অগণিত শিক্ষার্থীর চাহিদা মেটানোর জন্য হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিরাজমান ছিলো। উক্ত সময়কালে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাÐের ২০-২৫ বছরের মধ্যে দুঃখজনকভাবে তেমন কোনো এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এর কারণ ছিলো এই যে, সে সময়ে চট্টগ্রাম শহরে নিজ উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার জন্যে কারো এত বড়ো জায়গাও ছিলো না এবং হাজী মুহাম্মদ মহসীন, ডা. খাস্তগীর, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, খান বাহাদুর কাজেম আলী মাস্টার, খান বাহাদুর আমান আলী মাস্টার, নূর মোহাম্মদ চেয়ারম্যান, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, র্মিজা আহমদ ইস্পাহানি, নেলি সেনগুপ্ত, অর্পণাচরণ, বারেক মিয়া, ওমর গণি এমইএস, জেমসেন, প্রমুখের মতো বড়ো মাপের মানুষও ছিলো না। এর ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান আমলে ১০% এর নিচে বিদ্যমান শিক্ষার হার পরবর্তীতে তেমন একটা বৃদ্ধি পায়নি। তবে চট্টগ্রামের আরেক কৃতী সন্তান এবং সাবেক মন্ত্রী ও এমপি আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম বিএসসি কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রামের শিক্ষার উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছেন। মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ চট্টগ্রামের প্রথম অনুমোদিত সফল ক্লাসনির্ভর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে এবং সবার জন্যে শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করেছিল যার বর্তমানে তিনটি শাখা রয়েছে। দ্বিতীয় শাখা মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ, চান্দগাঁও ক্যাম্পাস চট্টগ্রামের এক কিলোমিটার এলাকায় ২০০৪ সালে এবং তৃতীয় শাখা মেরিট বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ, বহদ্দারহাট ক্যাম্পাস চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট জামে মসজিদের বিপরীতে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অনুমোদিত ও স্বীকৃত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অসংখ্য শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে থাকে এবং প্রতিবছর পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সন্তোষজনক এপ্লাস ও বৃত্তিসহ শতভাগ কিংবা প্রায় শতভাগ পাশ অর্জিত হয়। একঝাঁক দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ ও মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্তৃক শিক্ষার্থীদেরকে পরম পরিচর্যার মাধ্যমে পাঠদান করা হয় বলে চট্টগ্রাম ও এর বাইরে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ গ্রহণযোগ্যতা ও সুনাম রয়েছে। মেরন সান ও মেরিট বাংলাদেশ স্কুল এন্ড কলেজ ছাড়াও সারাদেশে শারীরিক শিক্ষকের ব্যাপক চাহিদা থাকার পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের বিএড কলেজ গেইটে ২০০৬ সালে স্থাপিত হয় চিটাগাং ফিজিক্যাল এডুকেশন কলেজ যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ও অনুমোদিত চট্টগ্রামের প্রথম বিশেষায়িত বেসরকারি বিপিএড কলেজ। প্রতিবছর এই প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ অসংখ্য বিপিএড শিক্ষক বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে দেশের শারীরিক শিক্ষকের চাহিদা মেটাচ্ছে। মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অনুসরণ করে চট্টগ্রামে স্থাপিত হয়েছে শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এগুলোর মধ্যে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদনও নিয়েছে। তাই এটা বললে অত্যুক্তি হবে না, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেসরকারি জগতে মেরন সান স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষা বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। স্বায়ত্তশাসিত এ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেই এবং চট্টগ্রামের সকল শিক্ষার্থী কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে বলেই বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থী আর ঝরে যাচ্ছে না, অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে না আর কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হচ্ছে দক্ষ, মেধাবী ও সুশিক্ষিত জনসম্পদ যারা দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখছে। চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন, নিঃসন্দেহে শিক্ষার উন্নয়ন ও বিস্তারে তাঁরা সরকারের সাথেই রয়েছে এবং যে সকল শিক্ষার্থী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত আছে তারা সরকার ও এদেশেরই অতীব গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কেননা, এদেশে এধরনের শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি। শিক্ষালাভ তাদের মৌলিক অধিকার এবং তাদের কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার ৭০%-এর উপরে। যে অসংখ্য বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের পাশে থেকে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রমকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং এপ্লাস, বৃত্তি ও পাশের হার বৃদ্ধিতে অসামান্য ভ‚মিকা রাখছে, তাদের প্রতি সদয় ও সুদৃষ্টি প্রদান করার জন্যে এবং বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার, অনুদান ও সহযোগিতার মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্যে আমি বাংলাদেশ সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একসাথে ২৬,৬৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এছাড়াও, অনেক মাধ্যমিক স্কুলকেও জাতীয়করণ করা হয় এবং অনেক মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমান সরকারের অসামান্য ভ‚মিকার কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে এদেশে অতীতের সকল ইতিহাস ছাড়িয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বর্তমান সরকার যেভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং যেভাবে দিন দিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করছে, এমপিওভুক্ত করছে কিংবা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করছে, এক সময় হয়তো দেখা যাবে, বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর কোনো প্রয়োজনই থাকবেনা। আমরাও চাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অসাধারণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হোক এবং শিক্ষার মহান দায়িত্ব তাঁর একক নেতৃত্বেই কার্যকর হোক। তবে, বিভিন্ন বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতার কারণে আন্তরিক সদিচ্ছা সত্তে¡ও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করতে সরকারের যে কয়দিন সময় লাগবে, ততোদিন পর্যন্ত বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সময়োচিত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিজনিত চলমান সংকটে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে এদেশের অসংখ্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে এবং লাখ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষালাভ থেকে বঞ্চিত হবে। এতে নিঃসন্দেহে জাতীয় শিক্ষা ও অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যা সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, বিভিন্ন সময়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে চালানো হয়েছে নেগেটিভ প্রচার-প্রচারণা। দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নামে অপবাদ। এক্ষেত্রে আমি সকল বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞাপূর্ণ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, যেগুলো শিক্ষা বিস্তারে ও সুনাগরিক সৃষ্টিতে সরকারের পাশে থেকে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে, সেগুলো মোটেও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। এধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম উদ্দেশ্য সেবা। তাই কালের বিবর্তনে বিভিন্ন সমস্যায় নিপতিত হলেও এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোনো না কোনোভাবে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তাদের কর্মধারা অব্যাহত রাখে। পক্ষান্তরে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রথম উদ্দেশ্য হয় মুনাফা এবং দ্বিতীয় উদ্দেশ্য সেবা। বাংলাদেশে এই জাতীয় অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা রয়েছে। উল্লেখ্য, রাষ্ট্র পরিচালিত অনেক প্রতিষ্ঠান যেমন-ডাকঘর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। মুনাফা না হলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের কল্যাণে দেশের স্বার্থে চালিয়ে নিতে হয়। ব্যবসায়িক চিন্তা-চেতনা থেকে প্রতিষ্ঠিত হলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রায় ৯০% শিক্ষার্থী বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে এবং ১০% শিক্ষার্থী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে লেখাপড়া করে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকা এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে এই দেশের জন্য যোগ্য সুনাগরিক গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বাধীনতাকে সত্যিকারভাবে অর্থবহ করে তুলতে হলে এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে এখনো পর্যন্ত বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। অথচ, আমরা এখনো দেখতে পাই বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এবং টেক্সটাইল মিলসহ অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে সরকারিভাবে বিভিন্নভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে, সেভাবে বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে কোন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছেনা, বরং নেতিবাচক কথাবার্তার মাধ্যমে এগুলোকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাদের এই সেবামূলক কর্মকাÐকে কোনোভাবেই কখনো উৎসাহিত করা হয়নি। আমি মনে করি, এই প্রতিষ্ঠানগুলো যারা করেছেন, নেতিবাচক কথাবার্তার পরিবর্তে তাঁদেরকে উৎসাহ দেওয়া দরকার। বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে বিশাল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা সম্পূর্ণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক আয়ের উপর নির্ভরশীল। প্রাতিষ্ঠানিক আয় না হলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো চালানো কখনো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। করোনা পরিস্থিতিজনিত বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে অথচ এখানে যেসব শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত, তাঁরা দেশের জন্য সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রেখে যাচ্ছেন মানব সম্পদ তৈরির মাধ্যমে। তাই বর্তমান সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ, দেশকে উন্নতি এবং অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেন বন্ধ না হয় সেই ব্যবস্থা করা হোক এবং যেভাবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে, প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে স্বল্প ঋণে ও স্বল্প সুদে, ঠিক একইভাবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন চালু থাকে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁরা যাতে চলতে পারেন সরকারের প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হোক। বাস্তব সত্য এটাই যে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ তৈরি হচ্ছে। এখান থেকে যদি এই সম্পদ তৈরি না হয়, তাহলে দেশের কোন কারখানা চলবে না। কল-কারখানা চালানোর জন্য যোগান দেওয়া হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যাংক, কারখানা, অফিস, আদালত ইত্যাদি চালানো কখনোই সম্ভব হতো না যদি সারা দেশে এই বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে না উঠত। বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সরকারি স্কেলের চেয়েও অনেক কম বেতনে এবং অনেক বেশি পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে তাঁদেরকে এবং তাঁদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে শিক্ষার জন্য অনেক কাজ করেছে, অনেক ভ‚মিকা রেখেছে। বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যাপারগুলো যদি সরকারকে সঠিক, ইতিবাচক ও সুন্দরভাবে তুলে ধরা হতো, সরকার অবশ্যই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতো, অনুদান দিতো এবং এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান বৃৃদ্ধির জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। গভীর দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন চিন্তা-ভাবনার কারণে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম বিশ্বনেত্রীর আসনে আসীন হয়েছেন এবং মানবিকতার মা হিসেবে ভ‚ষিত হয়েছেন। তাঁর কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, অতিসত্বর লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার, যারা এই বেসরকারি (ননএমপিওভুক্ত) ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করে এদেশের সুনাগরিক সৃষ্টিতে বিশাল ভ‚মিকা পালন করছেন, তাঁদের নিরাপদ আয় ও পরিবেশের ব্যবস্থা করা হোক। শিক্ষার্থীদের বেতনের উপরে যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানগুলো একান্তভাবে নির্ভরশীল, যদি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বেতন আদায় করতে পারা না যায়, শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে বেতন দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এতে করে অনেক পরিবার কষ্টে পড়ে যাবে এবং দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়বে। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হোক। দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো মানব সম্পদ। এই সম্পদ তৈরি করতে যাতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বেশি ভ‚মিকা রাখতে পারে, তাদেরকে উৎসাহিত করা হোক।
পরিশেষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার আবারো বিনীত অনুরোধ, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এই দেশের যাবতীয় ননএমপিওভুক্ত ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া হোক এবং এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত লাখো শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবঞ্চিত না করার জন্যে ও কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি বঞ্চিত না করার জন্যে অনুদান, সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয়, সময়োচিত ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক।

লেখক : অধ্যক্ষ, শিক্ষা উন্নয়ন গবেষক