মানব উন্নয়ন সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ

26

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ পেছনের দুই বছর তিন ধাপ করে এগোলেও এবার অগ্রগতি এক ধাপ। গতবছরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ইউএনডিপি বুধবার যে ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৯’ প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, এবার ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৩৫তম স্থানে। ২০১৮ সালে প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ছিল ১৩৬তম অবস্থানে। তার আগের বছর ১৩৯ এবং তারও আগের বছর ১৪২তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বুধবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। খবর বিডিনিউজের
অনুষ্ঠানে ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি, পিকেএসএফ সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক হোসেন জিল্লুর রহমান এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ইউএনডিপির অর্থনীতিবিদ শামসুর রহমান বলেন, প্রতিটি দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আয় ও সম্পদের উৎস, বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও আর্থিক প্রবাহ, যোগাযোগ, পরিবেশের ভারসাম্য ও জনমিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই মানব উন্নয়ন সূচক তৈরি করে ইউএনডিপি। এসব মাণদন্ডে এবার বাংলাদেশের এইচডিআই স্কোর দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৬১৪, যা গতবার শূন্য দশমিক ৬০৮ ছিল।
তিনি বলেন, গতবারের মত এবারও সূচকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে। ইউরোপের এ দেশটির এইচডিআই স্কোর শূন্য দশমিক ৯৫৩ থেকে বেড়ে শূন্য দশমিক ৯৫৪ হয়েছে।
এই সূচকে আসা ১৮৯টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের মধ্যম দেশের স্তরে।
বাংলাদেশ মানব উন্নয়নে প্রতিবেশি ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান (১৫২), নেপাল (১৪৭) ও মিয়ানমারের (১৪৫) চেয়ে এগিয়ে থাকলেও শ্রীলঙ্কা (৭১), মালদ্বীপ (১০৪), ভারত (১২৯) ও ভুটানের (১৩৪) চেয়ে পিছিয়ে আছে।
এর মধ্যে শ্রীলংকা গতবারের তুলনায় চার, নেপাল তিন, মিয়ানমার তিন এবং ভারত এক ধাপ এগিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে (এসডিজি) ভিত্তি ধরেই মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
যেসব দেশের নাগরিকদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি, শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত এবং মাথাপিছু আয় বেশি, সেসব দেশই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে।
এবারের সূচকের শীর্ষ দশ দেশ হচ্ছে- নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, হংকং, অস্ট্রেলিয়া, আইসল্যান্ড, সুইডেন, সিঙ্গাপুর এবং নেদারল্যান্ডস। এর মধ্যে কেবল সিঙ্গাপুর ও হংকংই এশিয়ার দেশ।
আর সবচেয়ে বাজে অবস্থানে থাকা ১০ দেশ হল নাইজার, সেন্ট্রাল আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, বুরুন্ডি, মালি, ইরিত্রিয়া, বুরকিনা ফাসো, সিয়েরা লিয়ন, মোজাম্বিক এবং কঙ্গো।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বলেন, আমাদের সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিচ্ছে। দরিদ্রদের মধ্যে আবার যারা সবচেয়ে বেশি দরিদ্র, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদেরকেই আগে সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার।
দশ বছরে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ থেকে প্রায় ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি আমরা।
কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমাদের উন্নয়নের প্রধান দুই বাধা হচ্ছে বৈষম্য ও জলবায়ু পরিবর্তন।
বৈষম্য দূর করতে আধুনিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “এখন প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ করে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানুষকে একীভূত করার ওপর গুরত্বারোপ করেন তিনি।
আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন আমাদের বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের অংশগ্রহণ বাড়ানোর কৌশল নিতে হবে, বলেন এই অর্থনীতিবিদ।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সরকার গ্রোথ ম্যানিয়ায় (প্রবৃদ্ধির নেশায়) আক্রান্ত হয়েছে। আমাদের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মান সম্পন্ন শিক্ষা। দেশের আর্থিক খাত ঠিক রাখতে এখন ব্যাংকিং খাতের সংস্কার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলেও তা করা হচ্ছে না। এখন সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলেও অভিযোগ আনেন তিনি।
বৈষম্য দূর করতে কাঠামোগত বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত বলে মত দেন হোসেন জিল্লুর।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, দেশে সরকারি-বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও মানসম্পন্ন শিক্ষা হচ্ছে না।
সর্বাধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য ব্লকচেইনসহ আগামী প্রজন্মের শিক্ষা দক্ষতা অর্জনে এখন থেকেই কাজ শুরু করার পরামর্শ দেন তিনি।