মানবিক নৈতিকতায় আলোকিত শুদ্ধতম রাজনীতিক আতাউর রহমান খান কায়সার

114

জামাল উদ্দিন

‘জন্মিলেই মরিতে হইবে’— এটাই চিরন্তন সত্য, কিন্তু কোন কোন মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। বিশেষ করে আতাউর রহমান কায়সার ভাইয়ের মত একজন নির্দোষ রাজনীতিক ও আলোকিত মানস সম্পদকে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন কায়সার ভাইসহ অনেকেই আজ আমাদের মাঝে নেই। বিগত ৯ অক্টোবর ২০১১ সালে কায়সার ভাই আমাদের ছেড়ে চলে যান। আজ ৯ অক্টোবর তাঁর নবম মৃত্যুদিবস।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আতাউর রহমান খান কায়সার বিশিষ্ট স্থান নিয়ে স্বতন্ত্র মহিমায় প্রদীপ্ত আলোকশিখা হিসেবে ভাস্কর হয়ে আছেন। তিনি সম্পূর্ণ অসা¤প্রদায়িক এবং উদার মানবতাবাদী রাজনীতিক ছিলেন। মনে-প্রাণেই সাম্প্র্রদায়িকতাকে অন্তর থেকে ঘৃণা করতেন। শুভবুদ্ধির উন্মেষ থেকে আমৃত্যু কর্মকান্ড, আচার-আচরণ, কথায়-কাজে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মহিমান্বিত এক জীবনআলেখ্য লালন করে গেছেন তিনি।
চট্টগ্রামে আনোয়ারার তৈলারদ্বীপের এক বনেদী পরিবারের উত্তর পুরুষ আতাউর রহমান খান কায়সাারের জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪০ সালে। চট্টগ্রাম নগরীর চন্দনপুরায় রয়েছে এই পরিবারের বিশাল জমিদার বাড়ি। চট্টগ্রাম কলেজে পড়তে গিয়েই তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক কর্মকাÐে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বি এ অনার্স ও ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে এম, এ ডিগ্রী লাভ করেন।
১৯৬৮ সালে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রবাহে সম্পৃক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানে সাংগঠনিক সফর এবং ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আনোয়ারা, বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে বিপুল ভোটে এম,এন,এ নির্বাচিত হন আতাউর রহমান খান কায়সার। পরবর্তীতে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে পাকিস্তানিরা নানা তালবাহানা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় অসহযোগ আন্দোলন।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই আতাউর রহমান খান কায়সার চট্টগ্রাম শহরে সেনাবাহিনী, ইপিআর-এ কর্তব্যরত বাঙালি অফিসার ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ রক্ষা সহ ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র স্থাপন, এম এ হান্নানকে দিয়ে বেতার থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার, ২৭ মার্চ বোয়ালখালীর করলডেঙ্গা পাহাড় থেকে মেজর জিয়াকে নিয়ে এসে বেতারে ঘোষণা পাঠে উদ্বুদ্ধকরণ,স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র বিলি, সংগঠনের নেতা কর্মীদের সংগঠিত করা সহ মুক্তিযুদ্ধের নানা পরিকল্পনা-প্রক্রিয়ায় তাঁর রয়েছে অসাধারণ সাহসী ভূমিকা।
এস পর্যায়ে ২৯ মার্চ তিনি জহির উদ্দিন খানকে সাথে নিয়ে প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের সমর্থন আদায়ে আগরতলায় পাড়ি দেন। এই সময় তাঁদেও সাথে ছিলেন কলিকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সাংবাদিক কল্যাণ বসু ও চিত্তরঞ্জন সিংহ। ভারতের আগরতলার পৌঁছে তাঁরা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। এমনই সময় ত্রিপুরার অরূদ্যুতি বাজারে আতাউর রহমান খান কায়সারের সাথে দেখা হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইপিআর এ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের সাথে। উভয়ে আলোচনা করে কালুরঘাট থেকে সরিয়ে নেয়া ট্রান্সমিটারটি ত্রিপুরার বগাফাতে পুনঃস্থাপন করে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র চালু করার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ভারতে পাড়ি দেন। এম এ হান্নান ও জহুর আহমদ চৌধুরীও পৌঁছে যান আগরতলায়। এসময়্য তাঁরা খবর পান যে চট্টগ্রামে প্রতিরোধ যুদ্ধ ভেঙ্গে পড়েছে, ফলে জনগণের মনোবল দুর্বল হয়ে পড়েছে। নেতৃবৃন্দরা দ্রæত সিদ্ধান্ত নেন দেশে ফেরার। আতাউর রহমান খান কায়সার, তৎকালীন শীষস্থানীয় ছাত্রনেতা মোখতার আহমদ, ডা. ইউছুফ ও সুলতানুল কবির চৌধুরীকে সাথে নিয়ে পুনরায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং বোয়ালখালীতে গিয়ে বাঙালি সেনাবাহিনীদের অবস্থানে যান।
বোয়ালখালী থেকে তিনি চলে যান সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে। সেখানে একে একে উপস্থিত হন প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরী, ডা. ফয়েজ, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এম আর সিদ্দিকী, এম আবু ছালেহ, এম ইদ্রিছ বি কম, মোক্তার আহমদ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বায়তুল ইজ্জতে বসেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য তাঁরা বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং একটি আঞ্চলিক পরিষদও গঠন করেন।
পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও সদস্য সচিব হন বান্দরবান মহকুমার তৎকালীন এস ডি ও আবদুস শাকুর। বায়তুল উজ্জত থেকে আতাউর রহমান খান কায়সার চলে আসেন তাঁর পৈত্রিক বাড়ি আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ গ্রামে। কিন্তু কালুরঘাট পতনের কারণেচট্টগ্রাম শহরে যেতে না পেরে কায়সার ভাই বাড়ি ত্যাগ করে চলে যান সাতকানিয়াস্থ ডা.ফয়েজুর রহমানের বাড়িতে। সেখান থেকে চলে যান টেকনাফ। সেখানে আবু ছালেহ, নুর আহমদ, এম ইদিছ, ডা. ফয়েজ. জহিরুল ইসলাম, ওসমান সরওয়ার ও কায়সার ভাই এক জরুরী বৈঠকে মিলিত হন। উক্ত বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য ইয়াঙ্গুন (বার্মায়) গিয়ে সে-দেশের সরকারের মনোভাব জানার।
আতাউর রহমান খান কায়সার, ডা. ফয়েজুর রহমান ও আবু ছালেহ নাফ নদী পাড় হয়ে বার্মার বলি বাজারে যান এবং সেখানে এক বর্মী সামরিক অফিসারের সাথে পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলাপ করেন। ইয়াঙ্গুন কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়ে দেন যে, তারা বাঙালিদের আশ্রয় দেবে, তবে খাওয়া-দাওয়ার ব্যয়ভার বহন করবে না। পাকবাহিনী যদি আক্রমণ করে তবে তারা কিছুই সহযোগিতা করতে পারবে না। অতঃপর তারা আশাহত হয়ে কক্সবাজারে ফিরে আসেন। ভারত যাওয়ার কোনো নিরাপদ পথের সন্ধান না পাওয়ায় পুনরায় তাঁরা রাজাখালিতে ফিরে যান। তারপর থেকে কায়সার সাহেব টইটং পাহাড়ে আশ্রয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ কার্যক্রম শুরু করেন।
তিনি রাজাখালীতে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাকহানাদার ও রাজাকার বাহিনী প্রতিরোধে একের পর এক সফল অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে কুতুবদিয়া থানা অপারেশন পরিচালনার পরিকল্পনা করেন। দ্বীপবাসীকে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আতাউর রহমান খান কায়সার নানাভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ৮ ডিসেম্বর কুতুবদিয়া থানা অপারেশনের প্রায় দু’শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খান কায়সারের নেতৃত্বে ট্রলার যোগে রাজাখালী থেকে কুতুবদিয়ায় রওয়ানা হয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রলার যখন কুতুবদিয়ায় ঘাটে পৌঁছে তখন পুরো দ্বীপে থমথমে পরিবেশ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড গুলির শব্দে দ্বীপবাসী ভয়ে তটস্থ। কারণ ইতোপূর্বে তারা যুদ্ধের কোনো ভয়াবহতা দেখেনি। মুক্তিযোদ্ধরা বীরদর্পে এগিয়ে যেতে থাকে থানার দিকে। ভয়াবহতা অনুধাবন করে থানার কর্তব্যরত পুলিশ ও রাজাকার আলবদর বাহিনী কোনো প্রকারের প্রতিরোধ যুদ্ধে না জড়িয়ে আত্মসমর্পনের প্রস্তাব পাঠায় আতাউর রহমান কায়সারের কাছে। প্রস্তাব পেয়ে তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে থানার চতুর্দিক ঘিরে ফেলেন। কোন সংঘর্ষ ছাড়াই পুলিশ ও রাজাকার-আলবদররা দু-হাত উপরে তুলে একে একে আতাউর রহমান কায়সারের কাছে এসে আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের নিজ নিজ অস্ত্রগুলো জমা দেয়।এই সময় হাজার হাজার দ্বীপবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়ে সমবেত হতে থাকে থানা কেন্দ্রে। তারা জয়বাংলা-স্বাধীন বাংলা শ্লোগান দিয়ে পুরো দ্বীপকে মাতিয়ে তোলে। এই অপারেশনের পর থেকে কুতুবদিয়া শত্রæমুক্ত হয়ে যায় এবং থানা ও সরকারি কার্যালয়ে পত পত করে উড়তে থাকে স্বাধীনবাংলার পতাকা। এভাবেই মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস তিনি রাজাখালী ক্যাম্প থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসেন।
১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ৭৭ সাল পর্যন্ত একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হবার পর দু’বার গ্রেপ্তার হন এবং এগার মাস কারাবরণ করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক নির্বাচিত হন। স্বৈরাচারী এরশাদের শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পুলিশের বর্বর হামলায় অনেকের সঙ্গে তিনিও আহত হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়নে ভূমিকা রাখেন। ১৯৯১-১৯৯২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন অর্থনৈতিক পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়ন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি পুনরায় দলের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক পদে পুনঃর্বাচিত হন। পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে তিনি কার্যকর ভূমিকা পালন করেন।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক পদে পুনঃনির্বাচিত হন। এ ছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খচড়া মূল্যায়ন ও চূড়ান্তকরণের লক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় কতৃর্ক গঠিত সহায়তাকারী অর্থনীতিবিদ প্যানেলের অন্যতম সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকল্পে ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করেন। গণচীনের কেন্দ্রীয় কমিটির আমন্ত্রণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে চীনের সঙ্গে হংকং-এর পুনরেকত্রীকরণ উৎসবে যোগদান উপলক্ষে ১৯৯৭ সালের জুন-জুলাইয়ে চীন সফর করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে রাশিয়ান ফেডারেশনের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকাল পর্যন্ত সে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে নির্বাচিত হন। সেই থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। শিক্ষানুরাগী আতাউর রহমান খান কায়সার শিক্ষা বিস্তারেও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭২ সালে ‘আনোয়ারা কলেজ’ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শুরুতেই পরিচালনা পরিষদের আহবায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে তাঁরই কলেজ জীবনের বন্ধু মোহাম্মদ হোসেন খানকে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এছাড়া আনোয়ারায় মাহাতা-পাটনিকোটা হাইস্কুল, তৈলারদ্বীপ-এরশাদ আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও পরিচালনা পরিষদের চেযারম্যান এবং আনোয়ারা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদে তিনি দীর্ঘ দিন সভাপতি ছিলেন। ঝি, বা, শি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্টায়ও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। চকরিয়া থানায় ‘রাজাখালী এয়ার আলী খান উচ্চবিদ্যালয়’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেরারম্যান, চট্টগ্রাম নগরীর ‘চন্দনপুরা গুল-এজার বেগম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়’-এর চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে নিয়োজিত ছলেন। সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমী আতাউর রহমান খান কায়সার সেই ছাত্রজীবন থেকে প্রচুর কবিতা লিখেছেন। তাঁর সম্পাদনায় ‘চক্রবাক’ ও ‘মুখর অরণ্য’ শীর্ষক সংকলন প্রকাশিত হয়। তাঁর সহধর্মী নিলুফার কায়সার চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনিও ছিলেন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিতে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। দুজনই আজ আামাদের মাঝে নেই। আতাউর রহমান খান কায়সার ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী রাজনীতিক। অন্যান্য রাজনীতিকদের সঙ্গে তাঁকে মেলাতে গেলে হোঁচট খেতে হয়। তাঁকে দেখে আমার মনে হত রাজনীতিক না হয়ে বুদ্ধিজীবী হলেই মানাত ভালো। কবি হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ধবধবে ফর্সা সুন্দর দীর্ঘদেহী মানুষটি অনায়াসে একজন লেখক কিংবা শিক্ষাবিদ অথবা শিল্পী হতে পারতেন। গড়পড়তা রাজনীতিকদের চেয়ে তাঁর পড়াশোনার ব্যাপ্তিও ছিলো বেশি। সাহিত্য, দর্শন নিয়ে আলোচনায় তিনি ছিলেন স্বতঃস্ফ‚‚র্ত। তাঁর কাছ থেকে শেখা যেত অনেক কিছুই। সংস্কৃতিবান মানুষ, সঙ্গীতের উৎসাহী শ্রোতা, শিল্পকলার সমঝদার ছিলেন তিনি।

লেখক : সাংবাদিক, গবেষক, প্রকাশক