মানবাধিকার বজায় রেখে কাজ করুন

37

নিরপরাধ-নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-কে আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘র‌্যাব দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। এই বাহিনী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও ভেজালবিরোধী অভিযান দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছে। তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে, এটি মাথায় রেখে কাজ করুন’।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতর আয়োজিত র‌্যাব ফোর্সেসের ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
দস্যু দমনে র‌্যাবের সফলতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাবের অভিযানের কারণেই সুন্দরবন আজ জলদস্যু মুক্ত হয়েছে। ৩৫৮ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে’।
র‌্যাব সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘সমাজবিরোধী অন্যান্য কাজে যারা লিপ্ত আছেন, তারা যদি আত্মসমর্পণ করেন, তাহলে তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। আপনারা শুধু সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ ও মাদক এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করেই ক্ষান্ত হবেন না, এসবের সঙ্গে নতুন করে যাতে কেউ যুক্ত না হয় সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য যা করণীয়, সব করবেন। সরকার আপনাদের সহযোগিতা দেবে’।
সহিংসতা প্রতিরোধে র‌্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী অগ্নি-সন্ত্রাসসহ বিএনপি যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, তা থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে র‌্যাব কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তারা অধিক তৎপর থাকার কারণে এবার এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি’।
মাদকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মাদকের ছোবলে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। মাদকের কারণে মেয়ে বাবা-মাকে হত্যা করে। ভাই-ভাইকে হত্যা করে। আর যে পরিবারে মাদক প্রবেশ করে, সে পরিবারে অশান্তির সীমা থাকে না। সমাজ ও পরিবার যেন মাদক মুক্ত হয়, সেজন্য কাজ করতে হবে। মাদকের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত ও জঙ্গিমুক্ত একটি সুন্দর দেশ গড়তে চাই’।
প্রতিটি গ্রামকে শহরে পরিণত করার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা মনে রাখবেন, আপনাদের পরিবার-পরিজন গ্রামে বাস করে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা গ্রামকে শহরের সুযোগ সুবিধা দিতে চাচ্ছি। গ্রামের প্রতিটি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া করবে, শিক্ষিত হবে, চাকরি করবে, ব্যবসা বাণিজ্য করবে, উদ্যোক্তা হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে, আপনাদের পরিবার উন্নয়ন থেকে বাদ যাবে না। একথা মনে রেখেই শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আপনাদের কাজ করতে হবে’।
২০৭১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘২১০০ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে, তার একটা ডেল্টা প্ল্যান নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর দেশ উপহার দেওয়ার জন্য আমাদের সবাই মিলে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ আমার অহংকার- এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়তে হবে’।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী র‌্যাব ১০, ১৩ ও ১৪ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে র‌্যাবের একটি চৌকস দল। স্বাগত বক্তব্য দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।