মানবতা আর নয় প্রত্যাবাসন জরুরি রোহিঙ্গাদের

22

বাংলাদেশের মানুষ সব সময় মানবতাবাদী ও অতিথি পরায়ন। তারা অন্যের দুঃখে নিজেকে দুঃখী করেন, আবার অন্যের সুখে নিজেরা সুখী হয়। যেমনটা হয়েছিল পার্শ¦বর্তী দেশ মায়ানমারের আরাকানসহ কয়েকটি রাজ্যে মুসলিমদের উপর হত্যা নির্যাতন চালাচ্ছিল তখন। তাদের মৃত্যুর মুখ থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছিল সরকার। আশ্রয় দেওয়ার পর এমন কোন স্বেচ্ছাসেবী বা মানুষ ছিল না, যারা এসব রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ায়নি। পাশে দাঁড়িয়েছিল বিদেশি নাগরিক ও এনজিও। যার কারণে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর ¯্রােতের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। যার সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১২ লাখের মতো। এতগুলো মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও তাদের কোনভাবে খাদ্য সংকট বা কোন কিছুর সংকটে থাকতে হয়নি। বরং তাদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, মাথা গোজার জন্য ঘর, খাদ্য, বস্ত্র চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু পেয়েছে। কোন কিছুর সংকট এ মানুষগুলো পায়নি। উল্টো তারা তাদের জন্য দেওয়া বস্ত্র, খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে দিতেও দেখা গেছে।


বিশ্বজুড়ে এ ঘটনা আলোচিত ও আলোড়িত হওয়ার পর মিয়ানমার একপর্যায়ে এদের প্রত্যাবাসনে মত প্রকাশ করে। সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষর হয়। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান যে, বিষয়টি যেন নতুন নাটকের অবতারণা। সে দেশে পুলিশ ও সেনা চৌকিতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের (আরসা) আক্রমণ চালানোর যে কথা মিয়ানমার পক্ষ বলেছে তা যে একটি বাহানা ছিল এই নিয়েও নানা আলোচনা চাউর হয়ে আছে। আজও আরসা এ ধরনের কোন আক্রমণ করেছে কিনা- নাকি রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার একটি ছল ছিল তা এ পর্যন্ত প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। এরপরও যেহেতু রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে সে হিসেবে তাদের দেশের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার দায়িত্ব তাদেরই। ইতোমধ্যে এ ইস্যু নিয়ে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। কিন্তু নানা ছলচাতুরীর পথেই রয়েছে মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশ থেকে যত তাড়াতাড়ি তাদের স্বদেশে পাঠানো জরুরী। না হলে এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জনগণ ও দেশের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। তারা অনেকে ইয়াবা ব্যবসা, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। হামলা করছে স্থানীয় জনগণকে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে স্থানীয় একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে রোহিঙ্গারা। পরবর্তী প্রশাসন হত্যাকারী বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। এর আগেও নানাভাবে স্থানীয় অধিবাসীদের উপর হামলা, চুরিসহ নানা অপকর্ম করেছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে তথ্য মিডিয়াতে প্রকাশ হয়েছে তাতে জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকটি দেশি বিদেশি এনজিও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে নানা অপরাধ কাজে। এসব এনজিও তাদের স্বদেশে ফিরে না যাওয়ার জন্য উস্কানি দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে উগ্রবাদী হিসাবে গড়ে তুলছে। যার কারণ প্রমাণ স্বরূপ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র তৈরির গোপন কারখানা থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে প্রশাসন। এছাড়াও রোহিঙ্গারা ক্যাম্পগুলোকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেখানে মাদক ও ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের নিরাপদ জায়গা করে তুলেছে। প্রশাসনের হিসাবে বিগত তিন বছরে রোহিঙ্গারা আসার পর কক্সবাজার জেলায় ইয়াবার চালান জব্দের ঘটনা বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মাদকের মামলা ও আসামি গ্রেফতারের সংখ্যাও। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক বছরের তুলনায় পরের বছর দ্বিগুণ পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার বা দ্বিগুণ সংখ্যক মাদক মামলার আসামি গ্রেফতার হয়েছে। কেবল গত দুই মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে শতাধিক রোহিঙ্গা গ্রেফতার হয়েছে। ২০১৬ সালে টেকনাফ থেকে দেড় কোটি পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। আর এর পরের বছর ২০১৭ সালে প্রায় দুই কোটি পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়, যা ২০১৮ সালে আড়াই কোটি পিস ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও ইয়াবা সেবন ও বিক্রির নিরাপদ অভয়রান্য হিসাবে গত দুই বছরে উখিয়া- টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে মাদক সেবন ও বিক্রির পাঁচ শতাধিক আস্তানা গড়ে উঠেছে। ইয়াবা মজুতের জন্যও এসব আস্তানা ব্যবহৃত হচ্ছে।

লেখক : প্রাবন্ধিক