মাদক কারবারিরা রেহাই পাচ্ছে না

31

মাদক নিয়ে জিরো টলারেন্স সরকারের। রেহাই নেই মাদক কারবারিদের। চুনোপুঁটি নয়, রাঘব-বোয়ালদের দিকেই নজর। নতুন করে হালনাগাদ করা হচ্ছে। অপরদিকে চলছে আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি। মাদক কারবারিদের এতদিন গ্রেপ্তার এবং শাস্তি দেওয়া হলেও এবার মাদকের টাকায় গড়ে তোলা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। স্বজনরাও থাকবেন এ তালিকায়।
‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’- স্লোগানে চলছে মাদকবিরোধী অভিযান। অভিযানের শুরুতে দেশজুড়ে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটতে থাকে। পালাতে থাকে মাদককারবারিরা। টেকনাফে একরাম নিহত হওয়ার ঘটনার পর সমালোচনা হতে থাকে। এরপরই ঢিলেঢালা হয়ে পড়ে অভিযান। তারপরও এ পর্যন্ত ৫শ’রও বেশি মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয় বন্দুকযুদ্ধে। তবে এর মধ্যে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা খুবই কম।
সূত্র জানায়, নতুন করে মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। আগের তালিকা সমন্বয় করে, মামলা বিবেচনায় নিয়ে, অপরাধ দেখে এ তালিকা করা হবে। ক্যাটাগরি অনুসারেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। গত ডিসেম্বর থেকে এই তালিকা প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। শুধু মাদক কারবারি নয়, যারা সেবন করে তাদেরও আনা হচ্ছে তালিকায়। এই তালিকা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশকে।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, মাদক নিয়ে কোন ছাড় নেই। এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। মাদককারবারিরা দেশ ও সমাজের শত্রæ। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে যা যা দরকার তার সবই করা হবে। তিনি বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান চলছে দেশজুড়ে। এরি মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি মাদক করাবারি ও সেবি গ্রেপ্তার হয়েছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি হবে। এগুলো হচ্ছে, এ বি ও সি। নতুন তালিকার মধ্যে একই ব্যক্তির নাম প্রতিটি তালিকায় থাকলে তাকে ‘এ’ ক্যাটাগরি, দুটি তালিকায় থাকলে ‘বি’ ক্যাটাগরি আর অন্যদের ‘সি’ ক্যাটাগরির মাদক কারবারি হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। মাদক কারবারিদের তালিকা তিন মাস অন্তর হালনাগাদ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মাদক নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাদক নিয়ন্ত্রণে সম্প্রতি সরকারের তরফ থেকে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকবিরোধী কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে মাদক কারবারিদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে তালিকা হালনাগাদের করার কাজ চলছে।
একশন প্ল্যানের মধ্যে রয়েছে সীমান্ত পথে যাবতীয় মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশ ও পাচার বন্ধ। দেশের অভ্যন্তরে যাবতীয় মাদকের অবৈধ উৎপাদন, সরবরাহ ও সহজলভ্য বিলোপ করা। মাদক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ, তাদের মদদদাতা, সাহায্যকারী ও অর্থলগ্নিকারীদের গ্রেপ্তার, যথাযথ তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা। মাদক কারবারিদের যাবতীয় অর্থ-সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা। মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ (২০১৫ সালে সংশোধিত) প্রয়োগ নিশ্চিত করা। ওষুধ উৎপাদন, চিকিৎসা ও শিল্প-কারখানা, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত কেমিক্যাল ও মাদক জাতীয় কাঁচামাল যাতে কালোবাজারে পাচার হয়ে মাদক উৎপাদনে অপব্যবহার না হয় সেটি নিশ্চিত করা। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসাইন বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান কখনো থেমে থাকে না। এটা সবসময় চলমান থাকে। অভিযান শুরুর পর সেটি আরো জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাদক নির্মূল করে সমাজকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য লোকজনকেও সচেতন হতে হবে।
সূত্র জানায়, এবার মাদক কারকারবারিদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেসব মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ পক্রিয়ায় রয়েছে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা চাইবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এছাড়া তালিকাভূক্তদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানানো হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা বলেন, লোকবল সংকট সত্বেও মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ অভিযান কখনো বন্ধ হয় না। সমাজকে মাদকের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
জানা যায়, ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফ থেকে বছর দুয়েক আগে পাঁচটি সংস্থা কারবারিদের তালিকা তৈরি করেছিল। সেই তালিকায় যেসব মাদক কারবারির নাম ছিল তাদেরকে নিয়ে একটি আলাদা তালিকা করা হয়। সেই তালিকার অনেকেই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। অনেকে আবার রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কেউ কেউ পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। সব মিলিয়ে এসব মাদক কারবারির মধ্যে কে কোথায় আছে, নতুন কেউ এই কারবারে যোগ দিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে নতুন করে তালিকা হালনাগাদ শুরু হয়েছে।