মাদকের কবলে পথ শিশুরা

91

ফটিকছড়িতে অতিথি পথ শিশু বেড়ে গেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকায় থেকে পথ শিশুরা ফটিকছড়িতে এসে সুযোগ বুঝে চুরি করছে। তাদের সাথে যুক্ত হয় এখনাকার বস্তি এলাকার শিশুরাও। অপরাধ জগতের গডফাদাররা নিজেদের আড়াল করতে ভিন্ন কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন এসব পথ শিশুদের। জানা যায়, নগরের অক্সিজেন এলাকায় থেকে প্রতিদিন একদল পথশিশুরা ফটিকছড়ির বিভিন্ন হাট-বাজারসহ গ্রামে অগমন ঘটে। তাদের আসা-যাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে রেল কিংবা বাসস্ট্যান্ড। অধিকাংশ পথ শিশু নগরের ষোলশহর রেল স্টেশন থেকে রেলে করে নাজিরহাট স্টেশনে আসে বলে সূত্রে জানা যায়। এরপর ১ জন কিংবা ২ জন আলাদা হয়ে এখানকার বিভিন্ন এলকার বাসা-বাড়িতে ঢুকে কাগজ এবং পুরাতন জিনিসপত্র টোকায়। এরেই ফাঁকে সুযোগ বুঝে তারা বাসার গেটের তালা ভেঙে, গ্রিল কেটে ঘরের ভেতর থেকে স্বর্ণালঙ্কার, জামাকাপড়, মোবাইল ফোন, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে। এদের অধিকাংশই দিনে রাস্তায় বোতল টোকায় এবং তারা রাতেই নানা অপরাধ যজ্ঞরে সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে দিনের পর দিন। বর্তমানে ক্ষুদ্র অপরাধী হলেও তারা ধীরে ধীরে ধাবিত হচ্ছে ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসের পথে। সরেজমিনে দেখা যায়, ছেড়া জামা, ময়লা আর নোংরা শরীর, নেশায় অসক্ত পথশিশু। তারা ফটিকছড়ির নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ, নতুন ব্রিজ, হাটহাজারী অংশে নাজিরহাট ঘাট (পুরাতন স্টেশন), মন্দাকিনীস্থ নতুন রেল স্টেশন, পৌর এলাকার ঝংকার, বিবিরহাট, নানুপুর, আজাদীবাজারসহ একাধিক এলাকায় দিনের বেলায় বিভিন্ন ভাঙা প্লাস্টিকসহ নানা সরঞ্জাম টোকায়। এ সরঞ্জাম এক বস্থা বিক্রি করে ২-৩ শত টাকা পর্যন্ত বলে জানান এক টোকায় পথ শিশু। আয়করা অল্প কিছু টাকা পরিবারকে দিয়ে অবশিষ্ট টাকায় (ড্যান্ডি) নেশা করে। তারা মাদক সেবনের ফলে পকেটমার থেকে শুরু করে রাতের বেলায় চুরি কাজে জড়িত হয়। জানা যায়, এসব শিশুদের পিছনে রয়েছে একটি অজ্ঞাতনামা সিন্ডিকেট (অপরাধ জগতের গডফাদাররা)। অপরাধ জগতে নিজেদের আড়াল করতে ভিন্ন কৌশল নিয়েছে এই সিন্ডিকেটটি। চুরির কাজে তারা মাঠে নামায় এসব পথশিশুদের। রাস্তায় কাগজ কুড়ানো পাশাপাশি কৌশলে পথশিশুদেরকে চুরি করতে বলেন ঐ সিন্ডিকেট। চুরি করতে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা পড়লে এ সিন্ডিকেটের সহায়তায় বাহির হয়ে এসে পুনরায় চুরি করতে হয় এবং চুরিকৃত বস্তু বিক্রির পর আয়ের টাকার একটি অংশ এ সিন্ডিকেটকে নিয়মিত দিতে হয় বলে সূত্রে জানা যায়। সূত্রে আরো জানা যায়, ভাঙ্গারী ব্যবসায়ীদের মধ্যে কিছু অসাধু লোক কৌশলে পথ শিশুদের জিম্মী করে নিজেদের ব্যবসার সার্থে এ অপকর্ম করছে। তাদের ইন্দনেই প্লাস্টিকের বোতল এবং কাগজ কুড়ানোর আড়ালে পথ শিশুরা করছে চুরি, মাদক সেবনসহ নানা ধরনের অপরাধ। এছাড়া এসব পথশিশুরা মাদকাসক্ত হয়ে উঠার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের ব্যবহার করছে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও মাদক ব্যবসায়ীরাও। এক সময় জড়িয়ে পড়ছে তার নানা অপরাধের সঙ্গে। এদের বয়স সাধারণত ১১ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তথ্যসূত্রে, ১৯৭৪ সালের শিশু আইন অনুযায়ী ১৬ বছরের কম বয়সীদের শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আবার আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি মানব সন্তানই শিশু এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এ শিশুর ১৪ এবং কিশোরের বয়স ১৮ বছর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। সূত্রে আরো জানা যায়, পথ শিশুর মাধ্যমে কোটি-কোটি টাকার মাদক ব্যবসাও চালানো হচ্ছে। চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ এমনকি হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধেও শিশু-কিশোরদের জড়িয়ে পড়ার বহু প্রমাণ অতীতে পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো পেয়েছে। আজ এদের ভবিষ্যৎ কতটা অন্ধকারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পথশিশুদের মাঝে মাদকের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মরণঘাতী নেশা ড্যান্ডি। তারা জানান, ড্যান্ডি খুব সহজলভ্য নেশা। জুতাজোড়া লাগানোর কাজে ব্যবহৃত আইকা গাম ড্যান্ডির প্রধান উপকরণ। পথশিশুরা মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়া ছাড়াও ধীরে-ধীরে মাদকের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক-মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দিন-দিন বাড়ছে এসব পথশিশুদের সংখ্যা। তাদের দ্বারা বাড়ছে অপরাধ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মাদক সেবনকারীর সংখ্যা। এসব শিশু-কিশোরদের যারা মাদক সেবনে উৎসাহিত করছে, অপরাধী বানাচ্ছে, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়াচ্ছে তাদের খুঁজে বের করা দরকার হয়ে পড়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান সচেতন মহল। এ ব্যাপারে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আরফান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, পথশিশুদের রক্ষায় দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া না হলে, তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুর দিকে চলে যাবে। জড়িয়ে পড়বে আরো বড় অপরাধে। এদের পুনর্বাসন করে মাদকমুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে শুধু শিশুটির ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা। এ সমস্যা দূরিকরণে অবুঝ শিশুদের নয় অসাধু ব্যক্তিদের (সিন্ডিকেট) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।