মাতামুহুরী সেতুতে ট্রাক বিকল হয়ে দীর্ঘ যানজট

41

দফায় দফায় জোড়াতালির মেরামতের পরেও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে সচল রাখা যাচ্ছে না চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুটি। সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে সেতুটির মাঝখানে দেবে গেলে সেতুর উপর দিয়ে সাময়িকভাবে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় কতৃপক্ষ। পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দু’দফায় ১৬ ঘন্টা সেতুর মেরামত কাজ করে। এসময় স্টিলের পাটাতন ও গার্ডার দিয়ে অনেকটা বেইলি সেতুর আদলে সেতুটি মেরামত করার পর পুনরায় যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার বিকালে ৮০০ ব্যাগ সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক সেতুর বেইলী ব্রিজ পার হওয়ার সময় হঠাৎ বিকল হয়ে পড়লে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। এসময় সেতুর উভয় পাশে কয়েক ঘন্টা ধরে শত শত গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে। এতে এই পথের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। আবার কোােন কোােন গাড়ি বিকল্প পথ হিসেবে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা-ঈদমনি লালব্রিজ ও পেকুয়া চৌমহনী হয়ে বরইতলী একতা বাজার সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সন্ধ্যার দিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সহায়তায় বিকল হওয়া সিমেন্ট বোঝাই গাড়িটি সরিয়ে নিলে আবারও সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলেও কিছু প্রভাবশালী মহল সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করাচ্ছে। ফলে বারবার সেতুটি বিকল হয়ে পড়ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রোভমেন্ট প্রজেক্টের সাইড ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, গতকাল শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম থেকে ৪০ টন (৮০০ ব্যাগ) সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক সেতুর বেইলী ব্রিজ পার হওয়ার সময় হঠাৎ বিকল হয়ে পড়লে সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় সাময়িক যানজটের সৃষ্টি হয়। সন্ধ্যার দিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজনের সহায়তায় বিকল হওয়া সিমেন্ট বোঝাই গাড়িটি সরিয়ে নিলে আবারও সেতুর উপর দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা গেছে, প্রায় ৬০-৭০ বছর বয়সী মাতামুহুরী সেতু। বেশ কয়েক বছর পূর্র্বে সেতুর নীচ অংশে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিলে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে প্রায় ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুর মেরামত কাজ করার পর সেতুটি ধ্বসে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা হলেও সে সময় সেতুর উপর অংশে বড় ধরণের গর্তের সৃষ্টি হয়। এরপর কর্তৃপক্ষ জোড়াতালি দিয়ে মেরামত কাজ করার পর যানবাহন চলাচলের জন্য সচল করার চেষ্টা করলেও সেটি আর বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। ওই সময় সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলেও কিছু প্রভাবশালী মহল সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল করায় চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে আবারও সেতুটি দেবে যায়। ওই সময় বিকল্প পথ হিসেবে চকরিয়া থানা রাস্তার মাথা-ঈদমনি লালব্রিজ ও পেকুয়া চৌমহনী হয়ে বরইতলী একতা বাজার সড়ক দিয়ে চলাচল করে দূরপাল্লাসহ সকল অভ্যন্তরীণ সড়কের যানবাহন চলাচল করে। পরবর্তীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্টিলের পাটাতন ও গার্ডার দিয়ে অনেকটা বেইলি সেতুর আদলে দু’দফায় ১৬ ঘন্টা মেরামত কাজ করার পর সেতুটি খুলে দিলে পুনরায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাতামুহুরী সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সরকারিভাবে ছয়লেনের দ্বিতীয় মাতামুহুরী সেতুর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাইকার অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর বিষয়টি এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগের আলাদা প্রজেক্ট ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইনপ্রোভমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে চলে গেছে। সুতরাং সেতুটি অচল হলেও সচল করার ব্যাপারে সওজ কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই। সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে প্রকল্পের অধীনে এ সেতুর কাজ চলছে এখন সব দায়-দায়িত্ব তাদের উপরই।
ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, মাতামুহুরী সেতুটি ৬০-৭০ বছরের পুরানো সেতু। এ সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিলেও কিছু প্রভাবশালী মহল সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু ও সিমেন্ট ভর্তি ৩০-৪০ টনের অধিক ভারী যানবাহন নিচ্ছে। সেতুটি সচল রাখার জন্য ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।