মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন আতঙ্কে সহস্রাধিক পরিবার

71

মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ছোট হয়ে আসছে বান্দরবানের লামা শহর। এছাড়া উপজেলার দুই খালের ভাঙ্গনেও রুপসীপাড়া ইউনিয়ন সদর বাজার, দরদরী ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি এলাকার ঘরবাড়ি, বাজার, মসজিদ, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজসহ ব্যাপক এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত কয়েক বছরে শহর ও দুই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েকশ একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানেও শত কোটি টাকার স্থাপনা ও শতশত একর ফসলি জমি নদী ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে। চলতি বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা দু’দফার পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতের টানে এ ভাঙ্গন আরো চরম আকার ধারণ করেছে। ত্রাণ নয়, নদী ও খালের ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় নদী সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর নিকট জোর দাবী জানান লামা উপজেলাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদী ও খালের করাল গ্রাসে দু’কূল ভেঙ্গে অধিবাসীদের সর্বস্বান্ত করে দেয়। নদীর ভাঙ্গনের পাশপাশি পাহাড়ি ঢলে নিমজ্জিত করে দেয় লামা শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কোটি টাকারও বেশি। গত কয়েক বছরে অসংখ্য বসতঘর, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভাটর্, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ক্যায়াং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানেও বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। এসব চিন্তা করে ২০০২ সালে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধরণ ও লামা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন রোধ, বন্যার কবল থেকে লামা শহরকে রক্ষার জন্য একাধিকবার প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাক্কলন তৈরি করে। সংশ্লিষ্টদের সাথে লবিং না থাকায় প্রাক্কলনটি অদ্যাবদি বাস্তবায়িত হয়নি। এতে করে প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। শহরের বাজারপাড়া, ছোটনুনারবিল শশ্মান, শীলেরতুয়া মার্মাপাড়া, লাইনঝিরি ফকিরপাড়া, হাজ্বী পাড়া, কুড়ালিয়ারটেক, স’মিল পাড়া, লামা সদর ইউনিয়নের মেরাখোলা, মিশনঘাট এলাকাসহ বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া ও মাইজপাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে গ্রাস করে নিয়েছে প্রমত্তা মাতামুহুরী। এসব স্থানে আরো শত শত পরিবার নদী ভাঙ্গন আতংকে দিন যাপন করছেন। মঙ্গলবার শহরের বাজার ঘাট এলাকার বাসিন্দা হারাধন নামের এক ব্যক্তির পাকা ভবনসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা নদী গর্ভে দেবে যাওয়ার খবরে তাৎক্ষণিকভাবে পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ হোসেন বাদশা, স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এভাবে নদী ও খাল ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শুধু শহর এলাকা নয়, লামা সদর, রুপসীপাড়া ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মানচিত্র পাল্টে যেতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল আশংকা করছেন। বিশেষ করে লামা খালের অব্যাহত ভাঙ্গনে রুপসীপাড়া ইউনিয়নের দরদরী অংশের অংহ্লাপাড়া ব্রিজ, দরদরী জামে মসজিদ, একটি সড়কসহ আবু মিয়া বাজার ও ইব্রাহিম লিডার পাড়ার অসংখ্য বসতঘর ও ফসলি জমি বিলীনের পথে। এর আগেও এসব এলাকার বেশ কয়েকটি বসতঘর ও ফসলি জমি খাল গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একইভাবে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বগাইছড়ি খালের অব্যাহত ভাঙ্গনেও গত বছর বগাইছড়ি-ডুলহাজার সড়কের কিছু অংশ একটি ব্রিজসহ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানেও বগাইছড়ি এলাকার বেশ কয়েকটি বসতঘর ভাঙ্গনের মুখে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার।
মাতামুহুরী নদীর তীব্র ভাঙ্গনের সত্যতা স্বীকার করে লামা পৗরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমেই মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। আর বন্যার পানির স্রোতের টানে এ ভাঙ্গন আরও তীব্র আকার ধরণ করে। তাই এ নদী ভাঙ্গন রোধ করা না হলে, অচিরেই লামা পৌরশহর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে সাবেক বিলছড়ি, লামা বাজার ঘাট ও শীলেরতুয়া এলাকার কিছু কিছু স্থানে ভাঙ্গন রোধে বøক স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব পৌরসভা এলাকা পরির্দশন করে বন্যা মুক্ত ও নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। আশা করি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পৌর শহরবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে। এজন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপির সহযোগিতাও কামনা করেন, পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম।