মাঠের আন্দোলন গড়ে তুলবে ঐক্যফ্রন্ট

50

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নতুন নির্বাচনের দাবিতে আগামিতে মাঠের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা বলছেন, শুধু ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। প্রতিবাদ সমাবেশ, কালোব্যাজ ধারণ নয়; প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে।
গতকাল বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফুটপাতে কালোব্যাজ ধারণ ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন নেতারা। বেলা ৩ টার দিকে কর্মসূচিটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আড়াইটার দিকে ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন প্রেস ক্লাবে। মানববন্ধন ঘিরে পুলিশের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। তবে সেখান থেকে আটকের কোনও খবরও পাওয়া যায়নি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘শ্রমজীবী ও পেশাজীবীসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ লাখ লাখ নেতা-কর্মীকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। তাদের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। এর জন্য মাঠের আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শুধু ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে হবে না। প্রতিবাদ সমাবেশ, কালোব্যাজ ধারণ নয়; প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচারী হিটলার, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান কারও বিরুদ্ধে এককভাবে কোনও দলের পক্ষে আন্দোলন করে জয়লাভ করা সম্ভব হয়নি। অতএব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জোটকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, আমরা দাবি করছি, ভোট প্রত্যাখান করার জন্য। কিন্তু ভোট তো হয়নি, তাহলে প্রত্যাখান কিসের? নতুন ভোট নয়, এই রাষ্ট্র ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে। অন্যায়কারীদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বিচার করতে হবে’।
পুলিশ প্রশাসনকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ভোট ‘ডাকাতি’ করা হয়েছে দাবি করে আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘যে রাষ্ট্রে প্রশাসন ঘুষ খেয়ে ভোট ডাকাতি করে, সেখানে রাষ্ট্র বলে কিছু থাকে না’।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে রব বলেন, ‘সরকার যেসব অপকর্ম করেছে, ২৪ ফেব্রæয়ারি গণশুনানিতে তা প্রকাশ করে দেওয়া হবে’।
কর্মসূচিতে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তিনি বলেন, ‘২৯ অথবা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখান করেছে। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি করছি। কারণ, দেশে অতীতের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে- দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না’। মঈন খান আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হয়তো তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন করে আগামিতে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে পারবে। কিন্তু ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক অচলাবস্থা তা দূর করতে পারবে না’।
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী বলেন,‘এটা একটা নির্লজ্জ সরকার। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সরকার খুঁজে পাবেন না আপনারা। এরা উন্নয়নের জোয়ারে আমাদের হিমালয়ে নিয়ে গেছে’।
সুব্রত চৌধুরী দাবি করেন, ‘বিশ্ববাসীকে বলবো, এই সরকারকে একটা নোবেল দেন। আমি ভাবছিলাম ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এই সরকারকে নোবেল দেওয়া হবে। এরপর মনে হলো, ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গাকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো, এখন এই সরকার আর ফেরত পাঠাতে পারছে না। এজন্য তাদের নোবেল দেওয়া দরকার। না হলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের জন্য হলেও তাদের নোবেল দেওয়া উচিত’।
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘২৯ তারিখের নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের অধিকার লুণ্ঠন করা হয়েছে। বিনা জানাজায় গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া হয়েছে’।
কর্মসূচিতে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক কমিটির সমন্বয়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক এবং আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্ট জোরালো বা কঠোর আন্দোলন করতে পারবে না। যখন হরতাল বা কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে, তখন তারা কোনও দোষ দিতে পারবে না। এখনও সময় আছে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন এবং নতুন নির্বাচন দিন’।
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিনা রহমান, বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এমরান সালে প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, গণফোরামের নেতা রফিকুল ইসলাম পথিক প্রমুখ।